কারও কোনো গাছের চারা বা বীজের দরকার হলে পোস্ট দেন ফেসবুক গ্রুপে। নির্ধারিত দামের বিনিময়ে বীজ ও চারা চলে যায় প্রাপকের কাছে। এছাড়া কারও কাছে দুষ্প্রাপ্য কোনো গাছের চারা বা বীজ থাকলেও জানাচ্ছেন গ্রুপে এসে।
প্রায় ২২ হাজার সদস্য নিয়ে বীজ বিনিময়ের জন্য ‘অনলাইন বীজ ব্যাংক’ নামের ফেসবুক গ্রুপ চালু করেছেন ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তারিক মাহমুদুল ইসলাম। সেখানে এখন জমজমাট বেচা-কেনা।
সেখানে কেউ জানান দেন তার কাছে ভিয়েতনামের নারিকেলের চারা আছে। কেউ লেখেন উন্নত জাতের মাল্টার চারা আছে। কেউ আবার খোঁজ করছেন পেয়ারার ভালো চারা কোথায় পাওয়া যাবে? কীভাবে কিনবেন, কোথা থেকে নেবেন সবকিছু বলা থাকে পোস্টে।
অনলাইন বীজ ব্যাংকের যাত্রা কুমিল্লা থেকে। এছাড়া রয়েছে কৃষি টিউব নামের ইউটিউব চ্যানেল। কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গার এবং দেশের বাইরের ফল ফসল নিয়েও ভিডিও প্রচার করা হয় সেখানে। একইভাবে এক এলাকার ফসল দেশের অন্য এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
অফিস ছাড়া বাকি সময়টুকু নতুন ফল-ফসলের প্রচারেই ব্যস্ত থাকেন কৃষি কর্মকর্তা তারিক মাহমুদুল। এজন্য তিনি অনলাইন বীজ ব্যাংক পেইজটি চালু করেছেন।
প্রথমবারের মতো হলুদ তরমুজ চাষে সফল হয়েছেন জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার আনোয়ার হোসেন। তিনি কীভাবে হলুদ তরমুজ বীজ পেলেন, কীভাবে উৎপাদন করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে সেটি জানিয়েছেন গ্রুপে।
কৃষক শুয়া মিয়া বলেন, ‘তারিক সাহেবের সহযোগিতায় এখন আমার বাগানে ৪২ জাতের লেবু রয়েছে। প্রতিদিনই বাগানে ক্রেতারা আসেন।'
নিজের উদ্যোগের বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা তারিক মাহমুদুল বলেন, ‘সব দোকানে সব ফসলের বীজ পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও হয়তো বীজ পরিপক্ক না। আর প্রায়ই বীজ সহজপ্রাপ্য হয় না। আবার অনেক সময় কৃষকের উৎপাদিত বীজ অব্যবহৃত পড়ে থাকে। এগুলো সমন্বয় করি অনলাইন বীজ ব্যাংকের মাধ্যমে। কৃষির সব খবরই থাকে অনলাইন বীজ ব্যাংকে।’
তিনি বলেন, ‘কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে ১০ জন কৃষকের মধ্যে তাইওয়ান হেপিনেজ জাতের লাউয়ের বীজ বিতরণের মাধ্যমে শুরু করি অনলাইন বীজ ব্যাংক নামের একটি ডিজিটাল প্লাটফর্ম। উদ্দেশ্য বীজ উৎপাদক, বিক্রেতা, কৃষক, কৃষি কর্মকর্তাদের এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসা। গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে অনেকে অর্থ ছাড়াও বীজ বিনিময় করেন। বিনিময় করেন বীজের উৎস সম্পর্কিত তথ্য।’
সদর দক্ষিণ উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার বলেন, ‘বীজ হলো কৃষির মা। ভালো বীজ পেলে কৃষক সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারে। তারিক স্যার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমার এলাকার কৃষকদের বিভিন্ন অপ্রচলিত বীজ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এতে অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘তারিক মাহমুদুল ইসলাম একজন সৃজনশীল কর্মকর্তা। বীজের নেটওয়ার্কিং তৈরি তার একটি ভালো উদ্যোগ। কৃষকের জন্য এ উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে সুফল বয়ে আনবে।’