বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘জিনিসের দাম বাড়ে, হামার দাম তো বাড়ে না’

  •    
  • ১০ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:১৫

রংপুরের শ্রমিক রেজাউল করিম বলেন, ‘সকাল ৮টায় আসি ১২টায় যাই। কাজ হইলে নিয়ে যায়, না হইলে নাই। এলা (এখন) ডাল সিজেন। কাজ নাই। খালি জিনিসের দাম বাড়ে, হামার দাম তো বাড়ে না। কাজও নাই খাই কী?’

শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা। রংপুর মহানগরীর শাপলা চত্বরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অর্ধশত মানুষ। কারও হাতে ডালি-কোদাল, কারও হাতে করাত।

শাপলা চত্বরে তারা আসছিলেন কেউ সাইকেলে, কেউ অটোরিকশায় আবার কেউ হেঁটে। এভাবে সকাল ১০টা বাজতে বাজতেই হয়ে গেল প্রায় ২০০ জন।

এসব মানুষ শ্রমজীবী। দিনমজুরি করে সংসার চলে তাদের। প্রতিদিন সকালে শাপলা চত্বরে যান তারা কাজের সন্ধানে। সেখান থেকে দরদাম করে তাদের কাজে নিয়ে যান ক্রেতারা।

তবে শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সেখানে কেউ কাজ পাননি। ওই সময়ে কাজের জন্য শ্রমিক নিতে সেখানে কেউই যাননি। উৎকণ্ঠা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পর সবাই বাড়ি ফেরেন হতাশা নিয়ে।

শ্রমিক বেচা-কেনার হাট বলে পরিচিত শাপলা চত্বরে এমন ঘটনা এখন নিয়মিতই দেখা যায়। শ্রমিকরা কাজের জন্য গেলেও ক্রেতা মেলে না। আবার কেউ গেলেও মজুরি বলেন অনেক কম।

রংপুরের গুড়াতি পাড়ার আশিকুর রহমান বলেন, ‘হামরা এটেকোনা দৈনিক আসি। আগের মতোন কাজ নাই। গত পাঁচ দিন কোনো কাজ পাই নাই। আইজ একজন আসি ডাকি নিয়ে গেইচে বালু তুলতে, কিন্তু কয় ২০০ টাকা দিন হাজরে। করি নাই, ফেরত আসলোং। বাজারোত সোগ জিনসের দাম বেশি। ২০০ টাকা দিয়ে কী হইবে।’

পান বাড়ি এলাকার রেজাউল করিম আক্ষেপ করে বলেন, ‘সকাল ৮টায় আসি ১২টায় যাই। কাজ হইলে নিয়ে যায়, না হইলে নাই। এলা ডাল সিজেন। কাজ নাই। খালি জিনিসের দাম বাড়ে, হামার দাম তো বাড়ে না। কাজও নাই খাই কী?’

বাহার কাছনা তকেয়ার পাড় এলাকার আব্দুল নুর জানান, ‘এখনও ধান কাটা শুরু হয় নাই; আলুও নাই। গ্রামোত কোনো কাজ নাই। বসি থাকপের নাগে। এটিকোনা কাজের জন্য আসি দৈনিক, এক সপ্তাহ থাকি কোনো কাজ নাই। কাইও কাজোত ডাকে না। ছুরুমিক (শ্রমিক) মেলা, কাজ নাই।’

কাউনিয়ার হারাগাছের এনামুল হক জানান, ‘হামরা আসি কাজের জন্যে। যাদের লোক প্রয়োজন তারা আসি ডাকে নিয়ে যায়। কাইও ৩৮০ টাকা দেয়, কাইও কমও দেয়। দৈনিক কাজ হয় না।’

রংপুর কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলে সাড়ে পাঁচ লাখের উপর শুধু মৌসুমী শ্রমিক রয়েছেন। এসব শ্রমিক শহরে রিকশা, ভ্যান অথবা অন্য কোনো কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।

তবে ধান কাটার সময় তারা সব কাজ বাদ দেন। মজুরি বেশি হওয়ায় এ সময় জেলার সব শ্রমিকই ধান কাটেন। অনেকে অন্য জেলায় গিয়েও ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করেন। অন্য সময় তারা নানা কাজ করেন।

অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুর বিভাগের আটটি জেলাকেই শিল্পে অনুন্নত জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ২০১৬ সালে। শিল্পায়নে পশ্চাৎপদ এবং অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এলাকায় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে ২০১৭ সালে একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছিল ২০২১ সাল পর্যন্ত। তবে সেই কাজে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধু কৃষির উপর নির্ভরতার কারণেই রংপুরে কর্মসংস্থান হচ্ছে না। এ কারণে শ্রমিক এবং দরিদ্রতার হার বাড়ছে।

রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোরশেদ হোসেন জানান, রংপুর বিভাগের অর্থনীতি মূলত কৃষিভিত্তিক। যুগ যুগ ধরে শিল্প খাত রয়ে গেছে অনুন্নত।

রংপুর বিভাগ শিল্পায়নে অন্য অঞ্চলের চেয়ে পিছিয়ে আছে, এ জন্য এখানে শিল্পায়নের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব এলাকায় বেশি শিল্পায়ন হয়েছে সেখান থেকে কম শিল্পায়ন এলাকায় শিল্প পুনর্বণ্টন ও স্থানান্তর করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘গার্মেন্টস শিল্প হচ্ছে শ্রমঘন শিল্প। রংপুর বিভাগের সস্তা শ্রম এ ক্ষেত্রে সহায়ক। এ অঞ্চলে গার্মেন্টস শিল্প স্থাপন করা হলে এখানকার দরিদ্র জনসাধারণের আয় ও জীবনযাত্রার মান বাড়বে।’

রংপুর চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু জানান, রংপুর অঞ্চলে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত বেকারের হারটা অনেক বেশি। বেকারত্ব দূর করতে হলে কৃষির বাইরে ভারী, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প কারখানা তৈরি করতে হবে।

তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের জন্য ৫ বছর বা ১০ বছর মেয়াদী একটি পলিসি নিতে হবে। যেটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে। উত্তরবঙ্গকে এগিয়ে নিতে গেলে অবশ্যই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দরকার। তাহলে এই অঞ্চলের মানুষের বেকারত্ব এবং সামাজিক বৈষম্য দূর হবে। আর এ জন্য শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর