৯ বছর আগে হলমার্ক কেলেঙ্কারি দেশের সবাইকে হতবাক করে দিয়েছিল। এর মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতের দুর্বল কাঠামো নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে।
প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক থেকে লুটে নিয়েছিল প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা, যা সোনালী ব্যাংকের মোট ১০ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণের প্রায় অর্ধেক।
২০১০-১২ সালের মধ্যে ঋণের নামে এই পরিমাণ টাকা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়ে এখন কারাগারে আছেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ। এ ছাড়া যাবজ্জীবন সাজা পেয়ে কারাগারে আছেন হলমার্ক গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্যারাগন নিট কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম রাজা, পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন ও সোনালী ব্যাংকের তখনকার হোটেল রূপসী বাংলা শাখার (বর্তমানে ইন্টারকন্টিনেন্টাল) কর্মকর্তা সাইফুল হাসান।
আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ, পরস্পরের যোগসাজশ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও মুদ্রাপাচারের অভিযোগ আনা হয়।
২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রমনা থানায় ৩ হাজার ৮৯৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১টি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আসামিরা হলেন, হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম এবং তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ।
হলমার্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যাপারেল এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম, স্টার স্পিনিং মিলসের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. জিয়াউর রহমান, আনোয়ারা স্পিনিং মিলসের মালিক মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্যারাগনের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, নকশি নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার।
এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন হোটেল রূপসী বাংলা শাখার সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান, সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার বর্তমান জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরির নামও রয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের দুই জিএম ননী গোপাল নাথ ও মীর মহিদুর রহমান (দুজনই ওএসডি), প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, ডিএমডি মাইনুল হক ও আতিকুর রহমান (দুজনই ওএসডি), দুই উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন (সাময়িক বরখাস্ত) ও মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ (সাময়িক বরখাস্ত), দুই এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান (সাময়িক বরখাস্ত) ও এজাজ আহম্মেদের নামও রয়েছে এতে।
তবে ৯ বছর চলে গেলেও আজ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি আলোচিত এই মামলাগুলোর বিচারকাজ। শেষ হয়নি সাক্ষ্যগ্রহণ। একটি মামলায় তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাগুলো কোনো ছোটখাটো কেলেঙ্কারি নয়। মামলার সংখ্যাও অনেক। এতগুলো মামলার সঙ্গে অনেক মানুষ জড়িত। অনেক সাক্ষী-সাবুদেরও প্রয়োজন হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে অর্ধেকের বেশি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ প্রায় শেষ করে এনেছি। বাকি মামলাগুলোর সাক্ষ্যগ্রহণও মাঝামাঝি পর্যায়ে। এমন অনেক মামলা আছে, যেখানে ১৫ থেকে ২০ জন সাক্ষী রয়েছে। বলা যায় অনেকগুলো মামলা শেষ পর্যায়ে, অনেকগুলো মাঝ পর্যায়ে।
‘আমরা আশাবাদী অল্প সময়ের মধ্যে মামলার বিচারকাজ শেষ হবে। এরপর হয়ত উচ্চ আদালতে আপিল হবে। তারপর আপিল বিবেচনার পর রায় কার্যকর হবে।’
ঝুলে আছে অর্থ ফেরত
লুণ্ঠনকৃত অর্থ আদায়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হলমার্কের সব সম্পত্তি বিক্রি করেও এ অর্থ আদায় সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে কী করা যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এটা রায় না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। আমাদের দেখতে হবে কোর্ট কী অভজারভেশন দেয়। তার আগে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য ঠু মাচ হয়ে যাবে।’
আলোচিত এই কেলেঙ্কারির তদন্ত ও মামলায় দুদক সঠিক পথে আছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি আমরা সঠিক পথেই আছি। কিন্তু এটা তো আমরা মনে করলে হবে না। এটা আদালতের মনে করতে হবে। আবার আসামিপক্ষের কাছে হয়ত এটা একটা ফালতু মামলা।’
অন্য দিকে দুদকের পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন) আবুল হাসনাত মো. আবদুল ওয়াদুদ নিউজবাংলাকে বলেন, হলমার্কের ১১ মামলার বিচার শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মামলাগুলোর বিচারকাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ দিকে এই কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা বিদেশে পালিয়ে থাকা সোনালী ব্যাংকের সে সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হুমায়ুন কবিরকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।
হলমার্কের সম্পদ
হলমার্ক গোষ্ঠির প্রায় সবগুলো কারখানাই সাভার এলাকায়। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ৪০টি কারখানা এখন বন্ধ। কারখানার ভঙ্গুর অবকাঠামো ছাড়া এখন আর তেমন কিছুই নেই। এ সব কারখানাসহ হলমার্কের স্থাবর সম্পদ ক্রোক না করায় তা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম জুয়েল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন মামলা হয়েছে (২০১২) তখন দুদক ক্রোক প্রক্রিয়া শুরু করেনি। সে কারণে স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও জব্দ করা হয়নি। তবে অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ব্যাংক হিসাবসহ এ সংক্রান্ত কাগজপত্র ও দলিলাদি জব্দ করা হয়েছে।’
দুদকের পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন) আবুল হাসনাত মো. আবদুল ওয়াদুদ দুদকের জব্দ তালিকায় স্থাবর সম্পদ না থাকার বিষয়ে বলেন, ‘২০১২ সালে আমি দুদকে ছিলাম না। হয়ত ক্রোক প্রক্রিয়া ছিল অন্য ভাবে। তখন রিসিভার (ক্রোক কর্তৃপক্ষ) ছিল পুলিশ। তখনকার আইনে পুলিশকে ক্ষমতা দেয়া ছিল।’
মামলার বিচারের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে সাক্ষ্য আনতে কোনো গাফিলতি হয়নি। পেপারস অনেক। এগুলো এক্সিকিউট (নিষ্পত্তি) করতে অনেক সময় লেগেছে।’
সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন এমডি হুমায়ুন কবিরকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে পলাতক আসামি হিসেবে বিচার শুরু করেছে। ফলে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা তাকে গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে উদ্যোগ নিয়েছে।’
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও সিনিয়র আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম এ বিষয়ে জানান, মামলাগুলোয় ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সব মামলার সাক্ষী প্রায় একই ব্যক্তি। এ ছাড়া সাক্ষীর তালিকায় দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। কোনো কোনো মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দিও নেয়া হয়েছে। কিন্তু গত দেড় বছরের করোনার ধাক্কায় বিচারকাজ বিলম্বিত হয়।
তিনি বলেন, ‘হলমার্কের মামলার বিচারকাজে নিয়োজিত দুজন বিচারক ইতোমধ্যে অবসরে চলে গেছেন। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে বিচার কিছুটা প্রলম্বিত হলেও আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো মামলার রায় হয়ে যাবে।’
যেভাবে জালিয়াতি হয়েছে
হলমার্কের ১১ মামলার বিচার শুনানিতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য। বেরিয়ে এসেছে জালিয়াতির নীলনকশার আদ্যোপান্ত। চক্রটি ব্যাংকের ৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করতে হোটেল শেরাটনের (বর্তমানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) পাশে সাকুরার পেছনে একটি ব্যক্তিগত বাড়ি ভাড়া নেয়। সেখানেই চলত জালজালিয়াতির কাগজপত্র তৈরিসহ সব ধরনের কারসাজির কাজ।
দুদক সূত্র জানায়, ওই বাড়িতে হলমার্কের লোকজন জালিয়াতিতে ব্যবহৃত ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দিতেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই সেই কাগজপত্রে সই-স্বাক্ষর করে টাকা বের করে দেয়ার সুযোগ করে দেন।
সোনালী ব্যাংকের ওই শাখার ম্যানেজারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, প্রধান কার্যালয়ের এমডিসহ অন্যরা তাতে শুধু সই-স্বাক্ষর করতেন।
হলমার্ক গ্রুপ শুধু ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতই করেনি, একই সঙ্গে প্রভাব খাটিয়ে তাদের কর্মচারী দিয়ে গঠিত নামসর্বস্ব পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
হলমার্কের কর্মচারীদের দিয়ে গঠিত কাগুজে প্রতিষ্ঠান টিএম ব্রাদার্সসহ পাঁচটি কোম্পানিতে ঋণের টাকা ঢুকিয়ে মালামাল না এনেই ওভার ইনভয়েসিং করে হলমার্কের ব্যাংক হিসাবে টাকা ঢোকানো হতো। এ ক্ষেত্রে জালিয়াতির মাধ্যমে হলমার্কের সঙ্গে ওই পাঁচটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের লেনদেন দেখানো হতো।
হলমার্কের এমডি তানভীর ও তার শ্যালক তুষার প্রতিনিয়ত সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শেরাটন শাখায় যাতায়াত করে একটি চক্র গড়ে তুলে বিপুল ওই অর্থ হাতিয়ে নেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে হলমার্কের এই ঋণকে ‘হাই রিস্ক’ বা ‘উচ্চঝুঁকির’ ঋণ উল্লেখ করে তা থামানোর জন্য সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়।
মামলার সাক্ষ্যে আরও বেরিয়ে এসেছে, ব্যাংকের এমডি, ডিএমডি, শাখা ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘হাই রিস্ক’ বা ‘উচ্চঝুঁকির’ ঋণের ব্যাখ্যায় ‘নো রিস্ক’ কথাটি উল্লেখ করে ব্যাখ্যা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককেও প্রতারিত করেন। হলমার্কের কাছে জালিয়াতির শিকার হয় জনতা ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি তফসিলি ব্যাংকও।
হলমার্ক সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক (ক্লায়েন্ট) হলেও জনতা ব্যাংকের গ্রাহক ছিল হলমার্কের কর্মচারীদের দিয়ে গঠিত ওই পাঁচটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো এলসির বিপরীতে জনতা ব্যাংক থেকে এলসির নিয়ম দেখিয়ে ৮০ পার্সেন্ট টাকা নিয়ে নেয়। এই টাকা সোনালী ব্যাংক থেকে জনতা ব্যাংকের পাওয়ার কথা থাকলেও গ্রাহক ভুয়া হওয়ায় হলমার্ক বা তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সোনালী ব্যাংক টাকা পায়নি। সে কারণে জনতা ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যাংকে থাকা দায় এটি শোধ করতে পারেনি।
নয় বছরে আদায় হয়নি এক টাকাও
২০১০-২০১২ সালের মার্চের মধ্যে সোনালী ব্যাংকসহ দেশি-বিদেশি ৪১টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে হলমার্ক ৩ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা তুলে নেয়। এর মধ্যে জালিয়াতির খবর প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর (মালিকের গ্রেপ্তারের আগে) মাত্র ৫৬৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা আদায় হয়।
এরপর গত ৯ বছরে একটি টাকাও আদায় হয়নি। প্রতি মাসে ১০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধের শর্তে ২০১৩ সালের আগস্টে জামিন পান মামলার অন্যতম আসামি হলমার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম। কিন্তু তিনি ছয় বছর জামিনে বাইরে থাকলেও এক টাকাও পরিশোধ করেননি। ফলে জামিন বাতিল করে ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই তাকে ফের কারাগারে পাঠায় আদালত।
বন্ধক রাখা সম্পত্তি আদালতের মাধ্যমে বিক্রির অনুমতি পেলেও ক্রেতার অভাবে তা বিক্রি হয়নি বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র। বর্তমান বাজার দরে বিক্রি হলেও সোনালী ব্যাংক তা থেকে সর্বচ্চ দেড় হাজার কোটি টাকা পেতে পারে। ফলে ২ হাজার কোটি টাকার কোনো হিসাব মিলছে না ব্যাংকটির।
এসব ঋণ আদায়ে অর্থঋণ আদালত ও সাধারণ আদালতে মামলা হয়েছে। এ বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান শেষে পৃথক ৪০টি মামলা করে। এর মধ্যে ফান্ডেড ৩৮টি, আর নন-ফান্ডেড দুটি মামলা দায়ের করা হয়।
২০১২ সালে ফান্ডেড (সোনালী ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ) ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২৭ জনকে আসামি করে ১১টি মামলা এবং ২০১৩ সালে ফান্ডেড মামলায় প্রায় ৩৭২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগে ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আরও ২৭টি মামলা দায়ের করে দুদক।
পরবর্তী সময়ে ফান্ডেড মামলায় মোট ১ হাজার ৯৫৪ কোটি ৮৩ লাখ ৭১ হাজার ৭৮৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৪ সালের বিভিন্ন সময়ে ৩৮টি মামলার চার্জশিট দেয় সংস্থাটি। এতে হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, তানভীরের ভায়রা ও গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ এবং হলমার্ক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সোনালী ব্যাংকের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
অভিযোগ দাখিলের পর দীর্ঘ ৭ বছরে ৩৮ মামলার মধ্যে বিচারিক রায় এসেছে মাত্র একটি মামলায়। ২০১৬ সালে ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের রায়ে সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ তিন জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।