শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলেদের হামলায় উপজেলা মৎস্য কার্যালয়ের একটি প্রকল্পের কর্মী নিখোঁজ হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রকল্পের আরও দুই কর্মী ও দুই পুলিশ সদস্য।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের মরিচাকান্দি এলাকায় পদ্মা নদীতে শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মৎস্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসন ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও স্পিডবোটে মরিচাকান্দি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছিল। এ সময় জেলেরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে ও ইটপাটকেল ছোড়ে।
হামলায় একটি স্পিডবোট উল্টে যায়। আহত হন সখিপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান, কনস্টেবল মেহেদী হাসান এবং স্থানীয় মৎস্য কর্মী ওমর আলী ও জাহাঙ্গীর হোসেন। তাদের চিকিৎসার জন্য চাঁদপুরে পাঠানো হয়েছে।
মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, আব্দুল বারেক মিয়া নামের একজন মৎস্য কর্মীর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান হাওলাদার বলেন, ‘স্পিডবোট উল্টে আমাদের দুটি আগ্নেয়াস্ত্র পানিতে তলিয়ে যায়। একটি উদ্ধার হলেও আরেকটি উদ্ধার সম্ভব হয়নি। অস্ত্র উদ্ধারে কাজ চলছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো জেলেকে আটক করা হয়নি।’
প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুত, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও বাগেরহাট- মোট ২০টি জেলার নদ-নদী, মোহনা ও সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, জামালপুর, রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খুলনা, কুষ্টিয়া ও নড়াইল জেলার নদ-নদীতেও ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাকবে।
শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কার্যালয় জানায়, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মা ইলিশ ধরার দায়ে শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদী থেকে ৫২ জেলেকে আটক করা হয়।
তাদের মধ্যে ৪৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি আটজনকে ৪০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কর্মকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর। সব ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করে আমাদের যৌথ অভিযান চলবে। জেলেদের হামলার ঘটনায় আমরা নিন্দা জানাই। এ ঘটনায় সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’