বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুসলিম শিল্পী আকাশ গড়ছেন দুর্গা প্রতিমা

  •    
  • ৯ অক্টোবর, ২০২১ ২০:২১

কোনো প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয় কি না, এমন প্রশ্নে আকাশ বলেন, ‘আসলে এটি আমার পেশা। আমি মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রতিমা বানাচ্ছি। কী বানাচ্ছি সেটা বড় কথা নয়, আমি কাজ করে পরিশ্রমের টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি, সেটাই বড় কথা।’

পূজার মৌসুম এলেই ব্যস্ততা বাড়ে মো. আকাশের। বাঁশ-কাঠ আর কাদামাটি দিয়ে প্রতিমা গড়ায় নিবিষ্ট মনোযোগ তার।

প্রায় ২৪ বছর বয়সী আকাশ শৈশব থেকেই জড়িয়েছেন এ পেশায়। হিন্দু কারিগরদের সঙ্গে মিলেমিশে প্রতিমা তৈরিসহ রং-তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলেন।

ময়মনসিংহ শহরে আকাশের বড় ভাই ও বাবা দিনমজুরের কাজ করেন। তবে আকাশের স্বাচ্ছন্দ্য পূজার প্রতিমা গড়ায়।

শহরের জুবলীঘাট এলাকার রঘুনাথ জিউর আখড়া মন্দিরে শনিবার গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক প্রতিমা বানানোর কাজ শেষ। এখন চলছে ছোট প্রতিমা সাজিয়ে তোলার আয়োজন। রং-তুলি হাতে ব্যস্ত কারিগররা, যাদের একজন আকাশ।

প্রতিমা গড়ার পেশায় আসার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাড়ির পাশের মন্দিরে ছোটবেলা থেকেই প্রতিমা তৈরির কাজ নিজ চোখে দেখেছি। জয়ন্ত ঘোষ নামে একজন নিয়মিত প্রতিমা বানাতেন। গরিব পরিবারের সন্তান হওয়ায় বাবা-মা পড়ালেখা করাতে পারেননি। একটু বড় হতেই জয়ন্ত ঘোষের সঙ্গে প্রতিমা তৈরির চেষ্টা করি। এরপর ধীরে ধীরে প্রতিমা তৈরি ও রং-তুলি দিয়ে সাজানোর কাজ শিখে ফেলি।

‘এভাবে সপ্তাহ, মাস ও বছর চলে যায়। এর মধ্যে কখন যে এটি পেশা হয়েছে নিজেও জানি না। এখন সারা বছর প্রতিমা তৈরি করি। দুর্গাপূজার তিন মাস আগে থেকে সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে। এ কাজের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ভ্যানগাড়ি চালিয়ে বা দিনমজুরের কাজ করেও সংসার চালাতে হয়।’

কোনো প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়তে হয় কি না, এমন প্রশ্নে আকাশ বলেন, ‘আসলে এটি আমার পেশা। আমি মনের মাধুরী মিশিয়ে প্রতিমা বানাচ্ছি। কী বানাচ্ছি সেটা বড় কথা নয়, আমি কাজ করে পরিশ্রমের টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছি, সেটাই বড় কথা।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে আমাকে এ কাজ ছেড়ে দিতে বলেছেন। বন্ধু ও স্বজনরাও প্রতিমা তৈরির কাজ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু আমি অশিক্ষিত হওয়ায় অনেক কষ্টের কাজ ছাড়া সহজ কাজে কেউ নেয় না। এ জন্য প্রতিমা তৈরি করেই জীবিকা চালাচ্ছি।’

তিনি জানান, শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিমার সব কাজ শেষে ওস্তাদ ৩০ হাজার টাকা দেন। এ ছাড়া বছরের অন্যান্য মাসে কিছু টাকা দেয়া হয়।

আকাশ প্রতিমা সাজানোর সময় পাশে বসে ছিলেন শহরের গাঙ্গিনারপাড় এলাকার ব্যবসায়ী পরিমল পাল।

তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিমা বানানোর কাজটি খুব কঠিন। আকাশ এ কাজ শেখার ফলে কারুশিল্পীর মর্যাদা পেয়েছে। মুসলমান আকাশ ও আমাদের হিন্দু কারিগররা এখানে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে।’

শহরের যাদব লাহেড়ী লেন পূজা কমিটির সভাপতি তপন পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুসলমান ও হিন্দু শিল্পীর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবাই আমাদের শ্রদ্ধার।’

তিনি বলেন, ‘১৯৬৮ সালে ময়মনসিংহে প্রতিমা কারিগর হিসেবে হিন্দুদের কাছে বিখ্যাত ছিলেন রশিদ মিয়া। তিনি সব কারিগরের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন। মুসলমান হয়ে প্রতিমা বানানোর কারণে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী তাকে গুলি করে হত্যা করে। তবে গুণী শিল্পী হিসেবে তিনি এখনও আমাদের সবার কাছে স্মরণীয়।’

এ বিভাগের আরো খবর