লক্ষ্মীপুরে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেয়া সেই শিক্ষককে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে শনিবার বেলা ২টার দিকে শিক্ষক মঞ্জুরুল কবিরকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে তার জামিন আবেদন করেন আইনজীবী।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল জলিল।
রায়পুর থানায় শিশু নির্যাতন আইনে শুক্রবার রাতে শিক্ষক মঞ্জুরুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন এক ছাত্রের মা। এর আগে তাকে আটক করে পুলিশ।
মঞ্জুরুলকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা বালাগাত উল্যাহ। শনিবার সকালে মাদ্রাসায় শিক্ষকদের নিয়ে এক জরুরি সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
মঞ্জুরুল কাজির দিঘিরপাড় আলিম মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক ও বামনী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির।
রায়পুর উপজেলা মাদ্রাসা সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষককে এবারের মতো ছেড়ে দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।
নিজাম উদ্দিন বলেন, নৈতিক শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের শাসন করতে ওই শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেয়া হয়েছে। তবে এভাবে চুল কাটা ঠিক হয়নি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত বিষয় উদঘাটন করা হোক।
শুক্রবার ছয় শিক্ষার্থীর চুল কাটার অভিযোগ পাওয়া গেলেও শনিবার সাত শিক্ষার্থীর চুল কাটার সত্যতা নিশ্চিত করেছে প্রশাসন।
লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ জানান, সাত শিক্ষার্থীর চুল কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে আটকের পর এক শিক্ষার্থীর মায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এর আগে নাশকতার একাধিক মামলায় জেল খেটেছেন অভিযুক্ত শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির। এসব কারণে আগেও তাকে মাদ্রাসা থেকে বরখাস্ত করা হয় বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
গত বুধবার দশম শ্রেণির ক্লাস চলার সময় ওই শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেন শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির। শুক্রবার চুল কাটার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল আলম ও ফজলে রাব্বীসহ কয়েকজন নিউজবাংলাকে জানায়, বুধবার তাদের ইংরেজি ক্লাস চলার সময় কাঁচি নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়েন শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির। পরে তিনি তাদের কয়েকজনের চুল কেটে দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ছাত্র বলে, ‘ইংরেজি ক্লাসের প্রথম ঘণ্টা পড়ার পর হঠাৎ করে মঞ্জুরুল স্যার আমাদের ক-শাখার ক্লাসে ঢুকে ছাত্রদের চুল কেটে দেন। তবে খ-শাখার কোনো ছাত্রের চুল উনি কাটেননি।’
শিক্ষক মঞ্জুরুল কবিরও শিক্ষার্থীদের চুল কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন। তবে তার দাবি, তিনি দাখিল শ্রেণির সব ছাত্রকে আগের দিন চুল কেটে মাদ্রাসায় আসতে বলেছিলেন। তবে ছাত্ররা তার কথা না মানায় কয়েকজনের চুল কেটে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ওদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং নীতিনৈতিকতা শিক্ষা দেয়ার জন্যই চুল কেটে দিয়েছি। তবে আমি কাউকে কোনো হুমকি দিইনি।’
বামনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাফাজ্জল হোসেন মুন্সী বলেন, ‘শিক্ষক মঞ্জুরুল কবির ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমির হওয়ায় প্রায় সময় ছাত্রছাত্রীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। তার ভয়ে ছাত্ররা তো দূরের কথা, অন্য শিক্ষকরাও কোণঠাসা বলে আমি জানি।’