ইমেইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে চিঠির। প্রাপকের কাছে চিঠি যাওয়ার আগের গন্তব্য ডাকঘর টিকে আছে। সেখানে চিঠি পোস্ট বিরল হলেও চালু আছে অর্থ লেনদেন, পণ্য আদান-প্রদান, সঞ্চয় বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মতো সেবা।
সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডাকঘরগুলোকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে সরকার, তবে যে কার্যালয়ে বসে চলে ডাকের কার্যক্রম, তার অনেকগুলোতে লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া।
এমন বাস্তবতায় বিভিন্ন দেশের মতো ‘ইনোভেট টু রিকভার’ (পুনরুদ্ধারের জন্য উদ্ভাবন) প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশে পালন হচ্ছে ‘বিশ্ব ডাক দিবস’।
বিশেষ এ দিনে নিউজবাংলার প্রতিবেদক যান পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে অবস্থিত ডাকঘরটিতে। দিবসটি উপলক্ষে নতুন কোনো রূপে দেখা যায়নি দেশের অন্যতম প্রাচীন এ ডাকঘরকে।
ঢাকা সদর প্রধান ডাকঘরের আঙিনার চারপাশে ময়লা-আবর্জনা। অনেক পুরোনো ভবনটির রং চটে গেছে বেশ আগে। ভবনের ভেতরের শৌচাগারের দুর্গন্ধ প্রকট, যা কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেসে আসে সেবাগ্রহীতার নাসারন্ধ্রে।
ডাকঘরে কথা হয় সেবা নিতে আসা অমিত পালের সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানে কোনো কাজে আসলেই প্রস্রাবখানা থেকে ভেসে আসা তীব্র গন্ধ পাই, যা খুবই বিব্রতকর। ইচ্ছা করলেই ডাকঘরটিকে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখা যায়।’
তোহানুল হক নামের আরেকজন বলেন, ‘বর্তমানে ইমেইল ও ইন্টারনেটের যুগে জনগণ দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য সেবা আশা করে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ হয়তো আশানুরূপ সেবা দিতে পারছে না। অথচ কুরিয়ার সার্ভিসের চেয়ে অনেক কম মূল্যে ডাক বিভাগ সেবা দিয়ে আসছে, কিন্তু এ ডাক বিভাগের অবস্থাই জীর্ণশীর্ণ।’
ডাকঘরের জীর্ণাবস্থা নিয়ে কথা হয় সেখানকার কর্মকর্তা নাজনীন শফির সঙ্গে। ভবন সংস্কারের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ভবন বহু পুরাতন। এখানে নানা রকম সমস্যা আছে, তবে শিগগিরই ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন হবে। তখন হয়তো আর সমস্যা থাকবে না।’
কীভাবে এলো ডাক দিবস
১৮৭৪ সালের ৯ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের বের্ন শহরে ২২ দেশের প্রতিনিধিরা এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেন। সে সম্মেলনে গঠন হয় ‘ইউনির্ভাসাল পোস্টাল ইউনিয়ন’ (ইউপিইউ)।
পরবর্তী সময়ে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে উত্থাপিত একটি প্রস্তাব পাস হয়। সে প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৯৬৯ সালের ৯ অক্টোবর থেকে ‘বিশ্ব ডাক দিবস’ পালন শুরু হয়।
বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ইউপিইউ ও আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ পায়। এরপর থেকে দেশে প্রতি বছর বিশ্ব ডাক দিবস পালন হয়ে আসছে।