বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আইনপেশা শুরুর আগেই আর্থিক চাপে পিষ্ট

  •    
  • ৯ অক্টোবর, ২০২১ ১৩:৪৭

আইনজীবী নিবন্ধনে সংস্থা বার কাউন্সিল ফল প্রকাশের পর সারা দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে যোগাযোগ করে নবীন আইনজীবীরা জানতে পেরেছেন বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে হবে সদস্যপদ নিতে। বিভিন্ন বারে অঙ্কটা ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এটি বহুজনের জন্যই চাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীও এর সমালোচনা করেছেন।

আইন পেশা শুরু করতে যাওয়া নবীন আইনজীবীরা নিজ নিজ বারে তালিকাভুক্ত হতে গিয়ে একটি ঘটনায় ধাক্কা খাচ্ছেন। বিভিন্ন জেলায় আইনজীবী সমিতি নিবন্ধনের জন্য ৬৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়ার কথা জানিয়েছে। তবে কেউ কেউ আবার কম নিচ্ছে।

আইন পেশা শুরুর আগেই এই বিপুল পরিমাণ টাকা জমা দেয়া অনেকের জন্যই কষ্টকর, কিন্তু এখানে কোনো ছাড় দিচ্ছে না কেউ।

সুপ্রিমকোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীও এভাবে টাকা আদায়ের সমালোচনা করেছেন। নবীন আইনজীবীরা চাইছেন, টাকা দিতে হলে সেটি যেন একটি নির্দিষ্ট সময় পরে যেন কিস্তিতে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। আবার সব আইনজীবী সমিতি যেন একই ফি নেয়, এই বিষয়েও দাবি উঠেছে।

আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া কঠিন হয়ে গেছে ইদানিং। বার কাউন্সিল এখন নৈর্ব্যত্তিক লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণ হলেই কেবল এখন আইন পেশা শুরু করা যায়।

এই পরীক্ষা বছরে দুটি হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৭ সালের পর এবারই প্রথম পরীক্ষা নিয়ে ৫ হাজার ৯৭২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। আরও ৯ জন প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিলে আইন পেশা শুরুর অনুমতি পাবেন।

আইনজীবী নিবন্ধনে সংস্থা বার কাউন্সিল ফল প্রকাশের পর সারা দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে যোগাযোগ করে নবীন আইনজীবীরা জানতে পেরেছেন বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে হবে সদস্যপদ নিতে। আইন সদস্যপদ নেয়া ছাড়া আদালতে কাজ শুরু করার সুযোগও নেই।

একেক সমিতি চাইছে একেক অঙ্কের টাকা

কিশোরগঞ্জ আইনজীবী সমিতিতে যোগাযোগ করে একজন জানতে পেরেছেন তাকে দিতে হবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তিনি নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। এমনকি মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার সময় কালো যে কোট পরতে হয়, তার টাকাও ছিল না। পরে পরিচিত একজন তাকে টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। এখন এত টাকা কীভাবে পাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নবীন আইনজীবী বলেন, ‘পেশাগত জীবনের শুরুতে প্রণোদনা দেয়া উচিত। তা না করে উল্টো বিশাল অংকের টাকা নিয়ে পেশাগত জীবন শুরু করতে হয়। পেশাগত জীবনে এই ধাক্কা সামলানো বেশ কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘পেশাগত শুরুতেই হাজার হাজার টাকা আয় হবে এমনটি নয়। একজন সিনিয়রের কাছে থেকে মামলা যাবতীয় বিষয়ে শিখতে হবে। বছর দুয়েক জুনিয়র হিসেবে কাজ করে যা আয় হবে তা নিয়ে বাসা ভাড়া আর খাবার খচর যোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এত টাকা দিয়ে বারে যুক্ত হওয়া আমাদের জন্য বেশ কঠিন।’

এই ফি আবার একেক বারে একক ধরনের।

শেরপুর আইনজীবী সমিতি নিচ্ছে ৬৫ হাজার টাকা, পঞ্চগড় বার নিচ্ছে ৬০ হাজার টাকা; ফরিদপুর, নীলফামারী, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা বার নিচ্ছে ৫০ হাজার করে।

শরীয়তপুর বার ২৫ হাজার টাকা, লক্ষ্মীপুর বার ৩০ হাজার, ঝিনাইদহ বার ৩০ হাজার ৩০০টাকা, বগুড়া বার ৩৪ হাজার, সিলেট বার ৩৫ হাজার, রাজশাহী বারে ৩৭ হাজার, সিরাজগঞ্জ বার ৩৮ হাজার, ভোলা বারে ৪০ হাজার টাকা নিচ্ছে।

কোনো কোনো বার আবার তুলনামূলক কম টাকা নিচ্ছে। যেমন মেহেরপুর বার নিচ্ছে ১০ হাজার, চট্টগ্রাম বার ১৪ হাজার, ময়মনসিংহ বারে ১৫ হাজার, বরগুনা বার ১৭ হাজার ৭৫০ টাকা, চাঁদপুর বার ১৮ হাজার ২০০টাকা, নোয়াখালী বার নিচ্ছে ২১ হাজার ৩০০ টাকা।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর সমালোচনা

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলা বারগুলোতো একেকটা অ্যাসোসিয়েশন। এটার একটা সিমিলারিটি থাকা উচিত। এটা না থাকারও একটা প্রেক্ষাপট আছে। অনেকে আবার চায় আর কেউ যাতে উকিল না হয়।’

তিনি বলেন, ‘বার অ্যাসোসিয়েশন একটা অটোনামাস প্রতিষ্ঠান। মেম্বার করা ছাড়া সব ক্ষমতাই তাদের আছে। টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্তটা বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা মিলেই এটা করে। এখন মজার ব্যাপার হলো যে, একবার আইনজীবী হয়ে যায় সে চিন্তা করে আর কোনো আইনজীবীই দরকার নাই। যে পাস করে গেছে সে মনে করে আর কেউ যাতে পাস না করে।’

জ্যেষ্ঠ এই আইজীবী বলেন, ‘আইন পেশাকে বৃটিশরা যে অভিজাত পেশা বলেছে এটা এমনি এমনি বলেনি। তারা হিসাব কিতাব করেই বলেছে। আমি বলি, পেটে যার ক্ষুধার যন্ত্রণা আছে তার এই পেশায় আসা ঠিক না। তার কারণ হলো প্রথম থেকে ৫ বছরে ধরে নেন কোনো আয়ই হবে না। চরম অর্থ সংকটের মধ্য দিয়ে তাকে অতিবাহিত করতে হবে। এটা ধরেই এ পেশায় আসা উচিত।’

বার কাউন্সিল কী বলছে

আইনজীবী নিবন্ধনে সনদ দেয়া প্রতিষ্ঠান বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রত্যেক বারে (আইনজীবী সমিতি) একটা কমিটি আছে। সমিতিতে তাদের নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে, বিধিমালা আছে। সেখানে যদি এ ধরনের প্রস্তাবনা বা বাধ্যবাধকতা থাকে সেখানে তো আমরা ডিফেন্স করতে পারব না, যদি না তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসে।

‘সেক্ষেত্রে বার কাউন্সিলের কমিটি যদি মনে করে এখানে আমাদের হস্তক্ষেপ করা উচিত তাহলে করা হবে, না হলে করা হবে না। যদি কোনো অভিযোগ আসে সে ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পারি, তবে সেটা এককভাবে কেউ পারবে না। সেটা কাউন্সিলের মিটিং এ সিদ্ধান্ত হবে।’

কর্মজীবনের শুরুতে যেখানে আইনজীবীর আয় একেবারেই নগণ্য পরিমাণে থাকে, সে সময় এত টাকা দেয়া সবার পক্ষে সম্ভব কি না এমন প্রশ্নে সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, ‘একজন আইনজীবী তার কতজন জুনিয়র রাখবেন বা আদৌ রাখবেন কি না এটা তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আর যে জুনিয়র হিসেবে কাজ করতে চায়, সেটাও তার সিদ্ধান্ত সে কার জুনিয়র হিসেবে কাজ করবে। এখানে চুক্তি হয় না যে জুনিয়র কত দিতে হবে। এটা নির্ভর করে একজন সিনিয়রের উপর তিনি কত আয় করেন আর কত টাকা তিনি তার জুনিয়রদের দেবেন।

‘ক্লায়েন্ট থেকে যা পায় তার থেকে কিছু অংশ জুনিয়রদের দেয়া হয়। এটা নির্ভর করে সিনিয়রের আয় এবং তার মানসিকতার উপর। এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নাই।’

গত ২৫ সেপ্টেম্বর আইনজীবী নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। তালিকাভুক্তরা সংশ্লিষ্ট আইনজীবী সমিতিতে ছয় মাসের মধ্যে সদস্য পদ নিয়ে আইন পেশা শুরু করতে পারবেন।

এ বিভাগের আরো খবর