শরতের স্বচ্ছ নীল আকাশে সাদা মেঘের সঙ্গে অসংখ্য পাখির ওড়াউড়ি। নিচের গাছগুলোও ভর্তি নানা প্রজাতির পাখিতে।
পঞ্চগড়ের বোদা পৌরসভার নাজিরপাড়া গ্রামে মেলে এমন দৃশ্য। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গ্রামটির ছোট-বড় বিভিন্ন গাছ আর বাঁশঝাড়গুলো যেন হয়ে ওঠে পরিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রম।
স্থানীয় লোকজন জানান, পরিযায়ী এসব পাখি আসে জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত। কয়েক মাস থেকে নভেম্বরের দিকে চলে যায়। এই সময়ে গ্রামে কোনো শিকারিকে ঢুকতে দেয়া হয় না। কেউ বিরক্তও করে না পাখিদের।
দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এভাবে এখানে আসছে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। পাখি দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রামটিতে যান প্রকৃতিপ্রেমীরা।
তারা আরও জানান, এসব পাখি সারা দিন খাবারের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। বিকেল হলেই ফিরে আসে নীড়ে। গাছের ডালে বসে শুরু হয় তাদের কোলাহল। আবার ভোরে তাদের ডাকেই ঘুম ভাঙে গ্রামবাসীর।
সবচেয়ে বেশি পাখি থাকে নাজিরপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া সেলিমের বাড়ির আশপাশে।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় গাছ, বাগান ও বাঁশঝাড়ে বসে আছে অসংখ্য পাখি। এদের মধ্যে রয়েছে শামুকখোল, পানকৌড়ি, রাতচোরা, ঘুঘু, মাঝলা বক, বড় বক, নিশিবকসহ দেশি প্রজাতির হাজারও পাখি।
কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া সেলিমের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রায় ১২-১৪ বছর আগে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখিগুলো তাদের বাড়ির আশপাশে বাসা বাঁধে। প্রতিবছরই এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কেউ এদের বিরক্ত করে না এবং গ্রামে কোনো পাখি শিকারিকেও ঢুকতে দেয়া হয় না।
তিনি বলেন, ‘সারাক্ষণ পাখির কিচিরমিচির শব্দ আমাদের মুগ্ধ করছে। এই পাখিগুলো বর্তমানে আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজের সন্তানদের মতো আমরা এই পাখিদের খেয়াল রাখছি।’
পাখি দেখতে গ্রামটিতে গিয়েছিলেন পঞ্চগড়ের আব্দুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘এই পাখিগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে অপরিচিত। নাজিরপাড়া গ্রামে প্রতিবছর এই সময়ে পাখির কলরবে মুখর থাকে জেনে তা দেখতে এসেছি। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে পারছি।’
বন্যপ্রাণী সংরক্ষক ও আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ বলেন, ‘এই পাখিগুলো প্রতিবছর জুলাই-আগস্ট মাসের দিকে আসে এবং নভেম্বরের দিকে চলে যায়। মূলত এই সময়টা পাখিদের প্রজনন ও বংশবিস্তারের সময়।’
তিনি জানান, যেই এলাকায় খাদ্যশস্য বেশি রয়েছে, পাখিরা সেই এলাকা প্রজননের জন্য বেছে নেয়। নাজিরপাড়া গ্রামটি তাদের কাছে নিরাপদ মনে হওয়ায় প্রতিবছরই তারা এখানে প্রজননের সময়টি পার করে।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী বলেন, এটি একটি বড় ধরনের পাখির কলোনি। কেউ যেন অবৈধভাবে পাখি শিকার করতে না পারে, সে জন্য নজর রাখা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাখিদের একটি অভয়াশ্রম গড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।