বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের উচ্চাশা

  •    
  • ৮ অক্টোবর, ২০২১ ২২:৪৬

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। করোনা সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতির পুরোপুরি পুনরুদ্ধার নির্ভর করছে টিকা দেয়ার গতির ওপর। যদি ২০২২ সালের জুন মাস নাগাদ ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া যায়, তাহলে প্রবৃদ্ধি ফের আগের জায়গায় ফিরে আসবে।

বিশ্বব্যাংক-এডিবির পর এবার বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছে বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তারা বলছে, করোনা সংকটে বাংলাদেশের অর্থনীতির পুরোপুরি পুনরুদ্ধার নির্ভর করছে টিকা দেয়ার গতির ওপর। যদি ২০২২ সালের জুন মাস নাগাদ ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়া যায়, তাহলে প্রবৃদ্ধি ফের আগের জায়গায় ফিরে আসবে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক আরও বলছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে, অর্থাৎ ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যাবে। আর ওই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি বা জিডিপির আকার বেড়ে ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৪২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার এখন ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলার।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে নাগাদ দেশে মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলারে উন্নীত হবে। ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার অনলাইনে বাংলাদেশ নিয়ে গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিংয়ের (২০২১) আয়োজন করে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এতে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা অংশ নেন। সেখানে করোনা সংকটে বৈশ্বিক ও বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে বিভিন্ন সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আন্তর্জাতিক গবেষক দল পরিচালিত গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং একটি বার্ষিক কর্মসূচি। ব্যাংকটির এ ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্টে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ও বৈশ্বিকভাবে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। গতকাল বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত গ্লোবাল রিসার্চ ব্রিফিং সিরিজ ২০২১-এ গণমাধ্যমের সামনে গবেষণার তথ্য তুলে ধরে ব্যাংকটির গ্লোবাল রিসার্চ টিম। ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রায় ৩০০ গ্রাহক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

অধিবেশনে আলোচ্য বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন গ্লোবাল হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট এরিক রবার্টসন, হেড অব এএসএ এফএক্স রিসার্চ দিব্য দেবেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ। ব্রিফিংয়ে গবেষকরা জানান, মহামারি থাকা সত্ত্বেও গত বছর বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদী ছিলেন। এখনও বিশ্বব্যাপী মহামারি চলমান। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ চালু হলে কর্ণফুলী নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে সাংহাইয়ের মতো ওয়ান সিটি টু টাউন। ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের মধ্যে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পুনরুদ্ধার ও অভ্যন্তরীণ ব্যয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের জিডিপির অগ্রগতি হবে। এ ছাড়া মধ্যমেয়াদি প্রাক্কলনও আশাপ্রদ জানিয়ে গবেষকরা বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড, ডিজিটালাইজেশন এবং নগরায়ণকে কাঠামোগত চালক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ৭ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া ওই সময়ের মধ্যে জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার হওয়ার পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলারে উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের গবেষকরা।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের গ্লোবাল হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট এরিক রবার্টসন বলেন, মহামারির কারণে বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের গতি এবং বিতরণ অসম থাকা সত্ত্বেও ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে একটি শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন করেছে। আশা করা যায়, একটি জোরদার টিকা কর্মসূচি এবং কৌশলগত অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে গ্র্যাজুয়েশনের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে।

দেশের অন্যতম বড় প্রকল্প ঢাকা মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ফাইল ছবি

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিবিদ সৌরভ আনন্দ বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রত্যাশিত জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আশা করা যায় ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হবে। দেশের রপ্তানি চাহিদা পুনরুদ্ধার, শক্তিশালী রেমিট্যান্সপ্রবাহ এবং সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে এ প্রবৃদ্ধির বাস্তবায়ন সম্ভব।

সৌরভ আনন্দ আরও বলেন, ‘আশা করা যায় ২০২৫-২৬ অর্থবছর নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হতে পারে ৫০০ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলারে উন্নীত করাসহ মধ্যম আয়ের পথে রূপান্তরের পূর্বশর্ত হলো নীতি-সহায়তা।’

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের দূরদর্শী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপগুলোর কারণে বাংলাদেশ মহামারিকালের বিভিন্ন চড়াই-উতরাই বেশ ভালোভাবেই অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে আমরা আশাবাদী। এ ছাড়া টিকা কর্মসূচি যেহেতু অব্যাহত রয়েছে, তাই অর্থনীতিও ক্রমান্বয়ে ত্বরান্বিত হচ্ছে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃতভাবে কম ডেবট-জিডিপি রেশিও দেশের জন্য একটি ফিসকাল রানওয়ে তৈরি করেছে। টেকনোলজি অ্যাডাপশন, টেকনোলজি ইনক্লুসিভনেস ও আইটিইএস সেক্টরের মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে। সহায়ক নীতি বেসরকারি বিনিয়োগ এবং এফডিআইকে ত্বরান্বিত করবে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ, সরকার ও আমাদের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আবারও আমাদের অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করেছে। এর ফলে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আমরা সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছি। একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ পরিবেশের মাধ্যমেই আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির যাত্রায় অগ্রসর হতে পারব।’

বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

বাস্তবায়ন হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারি পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়। তবে মহামারির ধাক্কায় ওই অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

বুধবার প্রকাশিত ‘সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস’ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে।

আরেক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৬ দশমিক ৮ শতাংশ অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর