বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাসানচরে যুক্ত হচ্ছে জাতিসংঘ, শনিবার সমঝোতা

  •    
  • ৮ অক্টোবর, ২০২১ ২০:২৭

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ইউএন হলো ম্যান্ডেট। পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় এ ধরনের শরণার্থী যদি হয়, তারাই লুক আফটার করবে। ইউএন গেলে অবশ্যই আমাদের জন্য সুবিধা। রোহিঙ্গাদের খাদ্যের চিন্তা করতে হবে না। পুরো ম্যানেজমেন্ট ইউএন করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’

মিয়ানমারে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর নিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো শুরুতে একটু আপত্তি তুললেও ভাসানচর ঘুরে দেখে তাদের অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। একই সঙ্গে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোসহ অন্যান্য এনজিও সেখানে কাজ শুরু করতে রাজি হয়েছে।

তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠানগুলোর এতে সংযুক্ত হওয়া নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দুপুর ১২টায় এই সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সেলিম হোসেন।

এর আগে এ বছরের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অন্তত ১০টি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্রসচিব, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস।

ওই বৈঠকে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে অবস্থানরত আরও ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাসানচরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো ভাসানচরে কার্যক্রম শুরু করার তাৎপর্য সম্পর্কে জানতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব নিউজবাংলাকে মোহাম্মদ মোহসীন বলেছিলেন, ‘ইউএন হলো ম্যান্ডেট। পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় এ ধরনের শরণার্থী যদি হয়, তারাই লুক আফটার করবে। ইউএন গেলে অবশ্যই আমাদের জন্য সুবিধা। রোহিঙ্গাদের খাদ্যের চিন্তা করতে হবে না। পুরো ম্যানেজমেন্ট ইউএন করবে। আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’

বৈঠকের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিবকে সভাপতি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়কে (ট্রিপল আরসি) নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কক্সবাজারে শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নেয়া প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে দেখা দেয় নানা সামাজিক সমস্যা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে ১ লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি অবকাঠামো

কয়েক ধাপে ভাসানচরে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজার ৮৫৯ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন দফায় আশ্রয় নেয়া মোট রোহিঙ্গা শরণার্থী ১১ লাখের ওপরে।

সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী আরও ৮০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে স্থানান্তর করতে হবে।

সরকারের অনুমতি ছাড়া ভাসানচরে সাধারণ মানুষের আনাগোনা ও নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ভাসানচরের তত্ত্বাবধান আছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ট্রিপল আরসি।

ভাসানচরে কাজ করছে ৪৯টি এনজিও

জাতিসংঘ এখনও যুক্ত না হলেও ভাসানচরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও শিক্ষাসহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে এনজিও খাত।

এনজি ব্যুরো জানিয়েছে, বর্তমানে ৫৩টি দেশি-বিদেশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কাজ করতে নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি এনজিও এখনও কী প্রকল্পে কাজ করতে চায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা তুলে ধরেনি। অর্থাৎ এ মুহূর্তে কাজ করছে ৪৯টি এনজিও।

সম্পৃক্ততা এবং সহায়তা

এনজিও ব্যুরো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে কাজ করে ১৯টি এনজিও। ৩০ প্রকল্পে তারা ব্যয় করে ১২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে দেশি ১৪ এনজিও ২৫ প্রকল্পে ব্যয় করে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আর বিদেশি পাঁচটি এনজিও পাঁচটি প্রকল্পে ব্যয় করেছে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভাসানচরে বাড়তে থাকে এনজিওগুলোর কার্যক্রম। গত মার্চ শেষে সহায়তা করা এনজিওর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০টি। প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে হয় ৭৩টি। পাশাপাশি বাড়ে সহায়তার পরিমাণও। মার্চে দেশি ৩০টি এনজিও ৬২ প্রকল্পে ব্যয় করে ১৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আর বিদেশি ১০ এনজিও ১১ প্রকল্পে ব্যয় করে ১৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

মার্চের পর গত তিন মাসে নতুন যুক্ত হয় আরও ১৩টি এনজিও। বর্তমানে ৪৯টি এনজিও ৯০ প্রকল্পে সহায়তা কাজ পরিচালনা করছে। এসব সংস্থা ব্যয় করেছে ৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিদেশি অর্থায়নের ২৯টি এনজিও ৩৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। ৫৬টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে এ অর্থ। আর ২০টি এনজিও নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় করেছে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৩৪টি প্রকল্পে এই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।

যেসব খাতে সহায়তা

ভাসানচরে অবকাঠামো থাকায় এ খাতে এনজিওগুলোর কোনো ব্যয় করতে হচ্ছে না। তবে সহায়তার সবচেয়ে বেশি ব্যয় গেছে খাদ্য সংগ্রহে।

জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৯ হাজার ১৭০ কেজি চাল, ৫ হাজার ৯০৯ কেজি ডাল, ২ হাজার ৯৫৯ লিটার তেল, ৪ হাজার ৫ কেজি লবণ বিতরণ করা হয়।

এ ছাড়া ৪ হাজার ১০৫ কেজি চিনি, ৫ হাজার ৪০২ কেজি পেঁয়াজ, ৮৫১ কেজি রসুন, আলু ৯ হাজার ১১৫ কেজি, আটা ৩ হাজার ৪০৫ কেজি, ডিম দেয়া হয়েছে ১৫ হাজার পিস।

এ ক্ষেত্রে তৈরি খাবার বা শুকনা খাবারে ব্যয় হয় ১৭ লাখ টাকা। ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রীতে ৬ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। ভাসানচরে ১৬ হাজার ১৫২টি শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এলপিজি গ্যাস সরবরাহ হয়েছে ১ হাজার ৩৮৭ সিলিন্ডার। এ ছাড়া শিক্ষা, মাছ চাষসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণেও ব্যয় হচ্ছে অর্থ।

এ বিভাগের আরো খবর