আওয়ামী লীগের কমিটিতে বর্তমানে যতসংখ্যক নারী আছেন, সেটি বাড়িয়ে দেড় গুণ করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে দলের নেতাদের মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দলীয় নেতৃবৃন্দকে এ ব্যাপারে আরো মনোযোগ দিতে হবে। আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) অনুযায়ী নেতৃত্বে নারীদের ৩৩ ভাগ প্রতিনিধিত্ব থাকার কথা, কিন্তু এখন ২২ ভাগ আছে। এটি অন্যান্য নিবন্ধিত দলের চেয়ে বেশি। তবে এ ব্যাপারে লক্ষ্য পূরণ করতে সবাইকে আরও তৎপর হতে হবে।
শুক্রবার রাজধানীতে সরকারি বাসভবনে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা।
২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার এক বছর পর রাজনৈতিক দলের যে নিবন্ধন-প্রক্রিয়া চালু করে, তাতে দলের সব কমিটিতে এক-তৃতীয়াংশ নারী রাখার শর্ত যোগ করে। ২০২০ সালের মধ্যে এই শর্ত পূরণ করার অঙ্গীকার করেছিল দলগুলো। তবে কোনো দলই তা করতে পারেনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি তৃণমূল পর্যন্ত নারীদের প্রতিনিধিত্ব আরও বাড়ানোর বিষয়ে সবাইকে মনোযোগ দিতে বলেছেন।’
ওবায়দুল কাদের এই বিষয়টির পাশাপাশি কথা বলেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে। কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় স্থানীয় কমিটি থেকে আসা সুপারিশের ভিত্তিতে। আর তৃণমূল থেকে নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে নানা স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের খবর এসেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘অনিয়ম করে যারা প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বা পাঠাবে, তাদের বিরুদ্ধে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে, প্রমাণ পাওয়ামাত্রই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিছু কিছু অভিযোগের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে।’
ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন প্রসেঙ্গে তিনি বলেন, ‘এবারের মনোনয়নের ব্যাপরে দলীয় প্রধান অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। ভবিষ্যতেও যারা বিদ্রোহ করবে, তাদের ব্যাপারে দলের অবস্থান কঠোর। তাদের ভবিষ্যতে কোনো পদপদবি ও মনোনয়ন দেয়া হবে না।
বাংলাদেশকে নতজানু রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা চলছে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যেরও জবাব দেন কাদের। বলেন, ‘দেশের মানুষ জানে কারা বাংলাদেশকে নতজানু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। কথায় কথায় যারা দেশের বিরুদ্ধে বিদেশিদের কাছে নালিশ করে, যারা বিদেশি দূতাবাসের বন্ধ দরজায় ফুল আর মিষ্টি নিয়ে অপেক্ষা করে, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ করার প্রকাশ্য অনুরোধ করে, তারাই বাংলাদেশকে নতজানু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়।’
বিএনপিই তাদের কর্মকাণ্ডের দ্বারা বিদেশিদের কাছে দেশের ইমেজ নষ্ট করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের ইমেজ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
‘জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে শেখ হাসিনা সব সময় আপসহীন। যদি তিনি জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব সমর্থন করতেন, তাহলে ২০০১ সালেও ক্ষমতায় আসতে পারতেন।’
বিএনপির আন্দোলন শুনলে জনগণ হাসে
বিএনপি মহাসচিবের আবারও গণ-আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, জনগণ এখন তাদের এ গণ-আন্দোলনের আহ্বানের শুনলে হাসে। গত ১৩ বছর বিএনপি বহুবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। কিন্তু জনগণ তো দূরের কথা, তাদের নেতা-কর্মীরাই সাড়া দেয়নি। গত ১৩ বছরে তারা একটি উল্লেখযোগ্য মিছিলও করতে পারেনি।
‘মির্জা ফখরুল সাহেবকে বলতে চাই, দেশে এই মূহূর্তে গণ-আন্দোলনের বস্তুগত কোনো পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই, অতীতের মতো এবারও জনগণ আপনাদের ডাকে সাড়া দেবে না। কাজেই আগামী ২ বছর পর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন।’
সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে চায়, বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি একদিকে ভোটে আসবে না, আবার নির্বাচিত হয়েও মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবের মতো সংসদে যাবেন না।
‘সংসদে তো বিএনপির প্রতিনিধিও রয়েছে। সেখানে তারা সোচ্চার। তাহলে একদলীয় শাসন কায়েম হয় কীভাবে? বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রের মুখোশের আড়ালে যা করেছিল জাতি তা ভুলে যায়নি। বিএনপির বহুদলীয় গণতন্ত্র বাস্তবে ছিল বহুদলীয় তামাশা।’