বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চট্টগ্রামকে নান্দনিক করবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

  •    
  • ৮ অক্টোবর, ২০২১ ১২:৪৫

সিডিএর দাবি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি একই সঙ্গে সিইপিজেড, কেইপিজেড ও চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুত করবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে, যা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার মাইলফলক হিসেবে পরিচিতি পাবে।

চট্টগ্রামের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে এ মেগা প্রকল্পের প্রায় ৫০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই বছরের মধ্যেই ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৬ দশমিক ৫ মিটার চওড়া এই অবকাঠামোর কাজ শেষ হবে। তখন বন্দরনগরীর যানজট কমবে, নগরীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগও সহজ হবে।

সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিমানবন্দর সড়ক ও শেখ মুজিব সড়ক অংশে রাতদিন ২৪ ঘণ্টাই কাজ করছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, কর্মচারী ও শ্রমিকরা। সিডিএ অ্যাভিনিউ অংশের কাজও শিগগিরই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।

বন্দরনগরীর যানজট লাঘবে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে একনেক সভায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প অনুমোদন পায়। ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। যৌথভাবে নির্মাণকাজ পায় বাংলাদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ও চীনা প্রতিষ্ঠান র‌্যাঙ্কিন।

২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পিলার পাইলিং কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন জটিলতার করণে মেয়াদ ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, কাজের শুরুর দিকে জমি অধিগ্রহণ ও বৈদ্যুতিক তার নিয়ে জটিলতার কারণে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সহজ হবে না।

নির্মাণকাজে ভোগান্তি

সরেজমিনে দেখা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য বিমানবন্দর সড়ক ও শেখ মুজিব সড়কের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে পানি জমে পথচারীদের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। তবে সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় এই যানজট ও ভোগান্তিকে মেনে নিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

তারা বলছেন, প্রতিদিন চলাচলের সময় ভোগান্তির সময়টুকু বিরক্তিকর। তবে উন্নয়নকাজের জন্য সাময়িক এই ভোগান্তি মেনে নিলে পরবর্তী সময়ে সুফলটা কয়েক গুণ বাড়বে।

এর ব্যাখ্যায় নগরীর বাসিন্দা ইফতেখার সবুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সল্টগোলা এলাকায় থাকি। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের জন্য সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ এলাকায় জ্যাম লেগেই থাকে। এটা অনেক বড় কাজ হচ্ছে। তাই বেশি দিন ধরে নির্মাণকাজ চলছে।

‘আমার মনে হয়, এটা হয়ে গেলে শহরে জ্যাম বলতে তেমন কিছুই থাকবে না। মানে এখন এক জায়গায় অনেক সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হলেও ওপরের রাস্তাটি চালু হয়ে গেলে সিগন্যালের বাইরে হয়তো আর যানজট হবে না। তাই এখন একটু ভোগান্তি হলেও পরে সেটা পুষিয়ে নেয়া যাবে।’

ইমরান হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির কাজ চলার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে। কারণ বর্তমানে লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।

‘তবে শুনছি এটার কাজ শেষ হয়ে গেলে লালখান বাজার থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিনিট। তাহলে তো এই ভোগান্তি একটু সহ্য করা লাগবে। কারণ এটা তো চলাচলের রাস্তার ওপরই হচ্ছে, তাই ভোগান্তিটা চোখে পড়ছে। হয়ে গেলে চট্টগ্রামবাসীরই বড় সুবিধা।’

কাজের অগ্রগতি

সিডিএ বলছে, এ প্রকল্পের অধীনে ৯টি জংশনে ২৪টি র‌্যাম্প (গাড়ি ওঠানামার পথ) হবে। এর মধ্যে টাইগারপাসে ৪টি, আগ্রাবাদে ৪টি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে ২টি, নিমতলা মোড়ে ২টি, কাস্টম মোড়ে ২টি, সিইপিজেডে ৪টি, কেপিজেডে ২টি, কাঠগড়ে ২টি ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত এলাকায় ২টি র‌্যাম্প থাকবে। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের প্রশস্ততা হবে ৫৪ ফুট। এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে আড়াই হাজার এলইডি লাইট।

সিডিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, দক্ষিণ প্রান্ত থেকে এ কাজ এগিয়ে আসছে উত্তরের দিকে, যা থামবে লালখান বাজার এলাকায়। ১৬ কিলোমিটারের এই প্রকল্পের সি-বিচ থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার অংশের কাজ চলছে এখন। এই অংশে এখন পর্যন্ত ২৩০টি পিয়ার, ১৭১টি পিয়ারক্যাপ, ১৯২৮টি পাইল, ২০১টি পাইলক্যাপ, ৫৮৩টি গার্ডার ও ৫৭টি ডেকস্ল্যাবের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সীমানায় প্রকল্পটির কিছু অংশ পড়েছে। তাই বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে কাস্টম থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার অংশে পাইলিংয়ের কাজ চলছে। বারিক বিল্ডিং থেকে কাস্টম পর্যন্ত ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার অংশে ড্রেন ও রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ চলছে, যা শেষ হলে শুরু হবে পাইলিং। এই অংশেই এখন পর্যন্ত ৩৭টি পিয়ার, ৩৭৪টি পাইল ও ৪০টি পাইলক্যাপের কাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া দেওয়ানহাট থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত অংশের অ্যালাইনমেন্ট চূড়ান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে কাজও শুরু হবে।

পতেঙ্গা থেকে কাঠগড় পর্যন্ত এলাকায় গার্ডার ও স্ল্যাব বসে গেছে। বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত এলাকার এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের যে আপত্তি ছিল, তারও সুরাহা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিডিএ।

প্রকল্প প্রসঙ্গে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে অত্যন্ত নান্দনিক নকশার এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে। এর জন্য কোনো পাহাড় কাটতে হবে না। সৌন্দর্য নষ্টের প্রশ্নই ওঠে না। বরং এলাকাটি যেন আরও উদ্ভাসিত হয়, সেভাবেই হবে এই উড়ালসড়ক।’

প্রকল্প পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, প্রকল্প এলাকাকে চার ভাগে ভাগ করে নির্মাণকাজ চলছে। এগুলো হচ্ছে পতেঙ্গা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং মোড়, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা, সল্টগোলা থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় এবং বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে দেওয়ানহাট। এর মধ্যে পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত দুই অংশের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বারিক বিল্ডিং থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত পাইলিং চলছে।

যেসব সুবিধা মিলবে

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে চট্টগ্রাম শহর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত হবে; কমবে যানজট ও যাতায়াতের সময়।

সিডিএর দাবি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি একই সঙ্গে সিইপিজেড, কেইপিজেড ও চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও দ্রুত করবে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে, যা বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার মাইলফলক হিসেবে পরিচিতি পাবে।

প্রকল্পের বিদ্যমান সমস্যা ও সমাধান

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিউজবাংলাকে জানিয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় বৈদ্যুতিক পিলার থাকায় পাইলিং শুরুর জন্য রাস্তা সম্প্রসারণ করা কঠিন। তাই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে রাস্তার সঙ্গে থাকা বৈদ্যুতিক পিলার অপসারণের মাধ্যমে কাজ এগিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রকল্প এলাকার কিছু অংশে রেললাইন থাকায় সেখানেও কাজ করা নিয়ে কিছু জটিলতা আছে। তা সমাধানে বাংলাদেশ রেলওয়েকে স্মারকলিপি দিয়েছে সিডিএ।

যা বলছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা

আলোচিত এই প্রকল্প নিয়ে নিউজবাংলা কথা বলেছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের আহ্বায়ক ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথমে যখন শুরু হয়, সেভাবে যদি থাকত, তাহলে তেমন একটা কাজে আসত না। তবে বর্তমানে সিডিএ ডিজাইনের কিছুটা সংশোধন করে অনেক জায়গায় মূল সড়কের সঙ্গে র‌্যাম্প দিয়ে সংযোগ করছে। এখন এটা জনগণের কাজে লাগবে।

‘কারণ সব এলাকার মানুষের সঙ্গে যখন এটার কনেকশন তৈরি হবে, তখন এটার সুফল সার্বিকভাবে চট্টগ্রামবাসী পাবে। এগুলোর কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম শহরের জ্যাম কমবে। তবে শহরকে পুরোপুরি জ্যামমুক্ত করতে হলে, আধুনিক শহর করতে হলে, এখনই মেট্রোরেল লাইন নির্মাণের কথা ভাবা দরকার।’

এ বিভাগের আরো খবর