দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দল প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ ২০৪১ সালকে সামনে রেখে প্রশাসনের ২৫টি সেক্টরে অন্তত দুই লাখ কর্মী ঢোকানোর লক্ষ্য নিয়েছে তারা। আর তা বাস্তবায়নে তৎপর সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নিজ কর্মীদের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে জামায়াত।
একই সঙ্গে দেশ ও প্রবাসে থাকা জামায়াত-শিবির কর্মীদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে শক্তিশালী সাইবার টিম। এ টিম রাজনৈতিক গুজব ছড়ানোসহ সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এসব তৎপরতা চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত দলটি।
সম্প্রতি জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তারের পর দুই দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় গত ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিরা হলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ, দলের নির্বাহী সদস্য ও ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত, নির্বাহী সদস্য আব্দুর রউফ, মনিরুল ইসলাম, কোরবান আলী, ইজ্জত আলী ও মোবারক হোসেন।
ডিবির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধী অবস্থান ছিল। সেই অবস্থান এখনও রয়েছে। রাষ্ট্রকে অকার্যকর করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করছে দলটি।
তারা জানান, অতীতের মতো জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা যাতে আর রাস্তায় নেমে জানমালের ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের একটি তালিকা করেছে গোয়েন্দারা। এসব নেতা-কর্মীর গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ডিএমপি ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জামায়াত তাদের নেতা-কর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন সংগঠন করাচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বানাচ্ছে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল ও ইউনিটে নিজেদের কর্মী ঢুকাচ্ছে।
‘দেশে-বিদেশে কর্মীদের দিয়ে সাইবার টিম গঠন করে সরকারবিরোধী অপপ্রচার করছে। এগুলোর সবই তাদের মহাপরিকল্পনার অংশ।’
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদেশ থেকে প্রচুর অর্থ আসছে বলে জানান ডিবির এ কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতা-কর্মী দেশের বাইরে গেছে। তাদের কাছ থেকে এখন সুবিধা পাচ্ছে জামায়াত। বিভিন্ন এনজিওর নামে জামায়াতের ফান্ডে টাকা আসছে। এসব আর্থিক লেনদেনও খতিয়ে দেখা হবে।’
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে নিজেদের লোক ঢোকাতে অভিনব পন্থা নিয়েছে জামায়াত। এ জন্য বিশেষভাবে টার্গেট করা হয়েছে ছাত্রলীগকে। নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় আড়াল করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বনে যাচ্ছেন শিবিরের নেতা-কর্মীরা।
জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে কয়েকটি ল্যাপটপ ও অন্যান্য নথি উদ্ধার করে ডিবি। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জামায়াত তাদের নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানোয় মনোযোগ দিয়েছে। তরুণদের টার্গেট করে সেখানে চাকরি দেয়া হচ্ছে। পরে বানানো হচ্ছে কর্মী।