ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনা মূল্যে আধুনিক প্রযুক্তির ভ্যাট মেশিন বা ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বিতরণের যে সিদ্ধান্ত ছিল, তা থেকে সরে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসায়ীদের টাকা দিয়ে ভ্যাট মেশিন কিনতে হবে। তবে এর জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবশ্যই ভ্যাট নিবন্ধন থাকতে হবে।
আইন অনুযায়ী, শুধু এনবিআরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ইএফডি মেশিন পাওয়ার যোগ্য।
দেশে বর্তমানে আড়াই লাখেরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন নিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল সরকার ইএফডির খরচ বহন করবে। এখন দেখা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে অনেক খরচ হচ্ছে। আবার যে মেশিনটা দেয়া হচ্ছে, তার মালিকানা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হচ্ছে।
‘এ জন্য দরপত্র অনুযায়ী শুধু মেশিনের দাম ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া হবে। তবে এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ এনবিআরই বহন করবে। ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান চাইলে এককালীন বা তিন মাসের কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে পারবে’, যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ফাইল ছবি
মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইএফডি মেশিন বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল দুই বছর আগে। এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে তিন হাজার ৩৯৩টি দোকানে এ মেশিন বসানো হয়েছে এবং এসব মেশিন দেয়া হয় বিনা মূল্যে।
এখন আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে এনবিআর।
ইএফডি হচ্ছে এক ধরনের হিসাব যন্ত্র। এটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন ব্যবহার করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের টাকার হিসাব এনবিআরের মূল সার্ভারে চলে যায়। এ ব্যবস্থায় তথ্য গোপন বন্ধ হয় এবং প্রতিদিনের লেনদেনের প্রকৃত তথ্য জানা যায়। ফলে ফাঁকির সুযোগ কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় বাড়ব বলে জানান এনবিআরের কর্মকর্তারা।
ইএফডিতে কেনা–কাটায় উৎসাহিত করতে এরিমধ্যে লটারি চালু করেছে এনবিআর। প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয় এবং বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার দেয়া হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলেছে, এককালীন বা কিস্তিতে ইএফডি মেশিন ভেন্ডরদের কাছ থেকে কিনতে হবে।
প্রতিটি মেশিনের দাম পড়বে এককালীন ২০ হাজার ৫৩৩ টাকা। তিন কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করা যাবে।
প্রথম কিস্তিতে ১০ হাজার ৫৩৩ টাকা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় কিস্তিতে ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ব্যবসায়ীরা নিজের টাকা মেশিন কিনে নেবে, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সবাই যাতে সঠিক সময়ে এটি পায় সে বিষয়টি এনবিআরকে নিশ্চিত করতে হবে।
জুনের মধ্যে ১০ হাজার মেশিন বসানোর লক্ষ্য
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে ১০ হাজার ইএফডি মেশিন বসানো হবে। এর মধ্যে জানুয়ারি বা ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ হাজার মেশিন বসবে। অবশিষ্ট অর্ধেক বসবে জুনের মধ্যে।
রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার দোকানে ইএফডি মেশিন বসানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কিন্তু ওই বছর মেশিন আমদানি করা যায়নি বলে একটাও বসাতে পারেননি ভ্যাট কর্মকর্তারা।
পরবর্তীতে গেল ২০২০-২১ অর্থবছরেও ১০ হাজার মেশিন বসানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণনসহ নানা কারণে গত জুন মাস পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার ৩৯৩টি দোকানে ভ্যাটের মেশিন বসেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩০ শতাংশ।
এনবিআর বলেছে, করোনার নিয়ন্ত্রণের ফলে এখন পুরোদামে মেশিন বসানোর কাজ শরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব মেশিন বসানো যাবে।