বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে আশার কথা শুনিয়েছে বহুপাক্ষিক আর্থিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
ভবিষ্যতে দেশটির অর্থনীতি আরও চাঙা হবে, এমন পূর্বাভাসও দিয়েছে এই উন্নয়ন সংস্থাটি। তবে, এই চাঙা হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে টিকা দেওয়ার গতির ওপর। বিশ্বব্যাংক বলছে, টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও বেশ পিছিয়ে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
‘সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক ফোকাস’ নামক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংকের ‘মোড় পরিবর্তন: ডিজিটাইজেশন ও সেবানির্ভর উন্নয়ন’ শীর্ষক এই নতুন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
মালদ্বীপ ও ভারতের পরেই বেশি প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশে
করোনার ধাক্কা কাটিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি আবার উচ্চ প্রবৃদ্ধির দিকে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। চলতি ২০২১–২২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। মালদ্বীপ ও ভারতের পরেই সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, এই অর্থবছরে মালদ্বীপের প্রবৃদ্ধি হবে সবচেয়ে বেশি – ১১ শতাংশ। ভারতে হবে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এর পরেই বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরও বেড়ে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে সুখবর দেয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের এই প্রতিবেদনে।
এর আগে গত জুন মাসে প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক প্রসপেক্ট’ রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছিল, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ১ শতাংশ।
ম্যানিলাভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
বাংলাদেশ সরকার এই অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো (বিবিএস) ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির যে সাময়িক হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারি পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়। তবে মহামারির ধাক্কায় ওই অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেমে গিয়েছিল ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে – ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক আরও বলছে, করোনার কারণে দেশের অর্থনীতিতে যেসব আঘাত এসেছে, তা যদি বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, তাহলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি বাড়বে।
তবে সংস্থাটি মনে করে, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা কমতে পারে। আবার বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদাও কমতে পারে।
সমষ্টিগতভাবে এই অঞ্চলে গড়ে ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক মনে করে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, করোনায় দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে, কিন্তু পথ হারায়নি। এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে প্রবৃদ্ধির নতুন গতিপথ ঠিক করতে হবে। ইতোমধ্যে বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা খাতের প্রসার হচ্ছে। তবে উৎপাদন খাত এখনও চাপে আছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বুধবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময়) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক। এতে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ হ্যান্স টিমার। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিতে এখনও ঝুঁকি আছে। অর্থনীতির মোড় ঘোরানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে তিনি এ-ও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অব্যাহত আছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সেবা খাত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি দেশেই শক্তিশালী নীতি-সহায়তা লাগবে। কারণ, এই খাতটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকলে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আসবে।
টিকা দেওয়ায় বাংলাদেশ পিছিয়ে
বিশ্বব্যাংক মনে করে, গত দুই মাসে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে টিকা কার্যক্রমে বেশ ভালো অগ্রগতি হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো বেশ পিছিয়ে আছে। দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের মধ্যে বাংলাদেশ সাত নম্বর আছে। বাংলাদেশ শুধু আফগানিস্তানের আগে আছে।
গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত হিসাবে, বাংলাদেশের প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১৪ জন কমপক্ষে এক ডোজ টিকা পেয়েছেন। অন্যদিকে ভুটান ও মালদ্বীপের ৬০ শতাংশ মানুষকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে। ভারতের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে ১৫ শতাংশ মানুষ।
‘অর্থনীতি আরও চাঙা হওয়া নির্ভর করছে টিকা দেওয়ার গতির ওপর’ বলা হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।