করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এবং সময়স্বল্পতার কারণে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার মতো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বলেছেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমেই পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠন ছাড়া কোনো এই মুহূর্তে কোনো বিকল্প নেই।
মোহাম্মদপুরে ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টসে (ইউল্যাব) ‘স্মরণে শেখ মুজিব-সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ স্মারক গ্রন্থের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সার্চ কমিটির মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশনের নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের সদস্য নিয়োগ হবে, বিকল্প উপায় ভাবার সুযোগ নেই। কোভিড পরিস্থিতি ও সময়স্বল্পতার কারণে আইন করারও সুযোগ নেই।’
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কোনো আইন তৈরি হয়নি দেশে। তবে সংবিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির হাতে।
২০১২ সাল থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে চার কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে দেশে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ২০১২ সালে এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছিলেন।
সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘(১) প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী-সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’
তবে সংবিধানের আলোকে ওই আইন না হওয়ায় প্রতিবারই নির্বাচন কমিশন গঠনে জটিলতা দেখা দেয়। সেই জটিলতা এড়াতে শেষ দুইবার সার্চ কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা হলেও বিতর্ক থামেনি।
বিএনপি নেতারা প্রতিদিনই বলছেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সার্চ কমিটি তারা মানেন না। তারা নির্বাচন কমিশন গঠনের চেয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চান।
বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। এই যে সার্চ কমিটির কথা যেটা বলা হয়েছে, সেটা গঠন করা হয়েছিল সব রাজনৈতিক দলের অভিমত নিয়েই এবং সব রাজনৈতিক দল রাজি হওয়ার পরই গেজেট করা হয়।
‘যদিও সার্চ কমিটির গেজেটটা আইন নয়, কিন্তু এটা যেহেতু সবার কনসেন্সের মাধ্যমে হয়েছিল। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেটা গেজেট করেছিলেন। সেটা কিন্তু আইনের কাছাকাছি। আমি কিন্তু এখনও বলছি এটা আইন নয়, কিন্তু আইনের কাছাকাছি।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরও এই সার্চ কমিটি দ্বারা কয়েকটি নির্বাচন কমিশনের সদস্য মনোনীত করা হয়েছিল এবং নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। আজকে নতুন করে অন্য কোনো কথা বলার আমার মনে হয় অবকাশ নেই।
‘আমি এমন কথা বলছি না যে নির্বাচন কমিশন গঠনে যে আইনের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে তা করা হবে না, কিন্তু কোভিড পরিস্থিতি এবং সব কিছু মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে হতে হবে। তাই এখন এ আইন করাটা সম্ভব না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন সার্চ কমিটির মাধ্যমে করা হবে।’
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে সংলাপের কোনো সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা শুনি নাই’।