নোয়াখালী জেলা সদরের সোনাপুর এলাকার নাসির উদ্দিনের কয়েক দিন আগে মাথাব্যথা ও জ্বর শুরু হয়। শুকনো কাশিও ছিল। রাতে ১০০-১০২ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর ওঠায় করোনা ভেবে আতঙ্কিত হন। ভয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন।
জ্বর না কমায় তিন দিন পর করান করোনার পরীক্ষা। ফল নেগেটিভ এবং জ্বর কিছুটা কমলে পরিবারের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন। তবে ওই রাতেই তার শিশুসন্তানের জ্বর আসে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ছেলেকে জ্বরের ওষুধ খাওয়াতে শুরু করেন। চার দিন পর ছেলের জ্বর কমে গেলে অসুস্থ হন নাসিরের স্ত্রী।
এমন চিত্র অবশ্য নাসিরের পরিবারে নয়; নোয়াখালীতে হঠাৎই বেড়েছে এমন জ্বর। পরিবারের একাধিক সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে এই জ্বরে। ২০ দিন ধরে হঠাৎ জ্বর-ঠান্ডার রোগী বেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দেখা দিয়েছে রোগীর চাপ।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এমন জ্বরে অনেকেই আতঙ্কিত হচ্ছেন। চিকিৎসকরা অবশ্য বলছেন, এটা মৌসুমি জ্বর। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বেশি করে তরল খাবার খেতে হবে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে জ্বর-সর্দি-কাশি নিয়ে ৯৭ জন নারী ভর্তি রয়েছেন। ৮ ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি পুরুষ রোগীর সংখ্যা ৭৯ জন। অথচ প্রতি ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতা ২৪ জন রোগীর। শয্যা অনুযায়ী রোগী ভর্তি রয়েছে দ্বিগুণ।
পুরুষ ওয়ার্ডের নার্সিং অফিসার জাকির হোসেন বলেন, ‘রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। মেঝেতে রোগীদের সরিয়ে হাঁটতে হয়। গত ২০ দিন ধরে আগের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হচ্ছে।
‘মহিলাদের ওয়ার্ডে রোগী ভর্তির হার পুরুষের চেয়ে বেশি। মহিলাদের প্রতি ওয়ার্ডে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন করে রোগী ভর্তি হয়। কম জনবল দিয়ে দ্বিগুণ রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ইয়াকুব আলী মুন্সী বলেন, ‘দিনে বেশি গরম ও রাতে কিছুটা ঠান্ডা পড়ে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের কারণে জ্বর, সর্দি ও কাশির প্রাদুর্ভাব ঘটে। এটাকে আমরা সিজনাল ফ্লু বলি। এতে ভয়ের কিছু নেই।
‘এমন জ্বর হলে আমরা প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে বলি। জ্বর-ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ আর ঠান্ডার জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন বা অ্যালাট্রল জাতীয় ওষুধ খেতে বলা হয়। স্বাভাবিক খাবার, ফল, শাক-সবজি বেশি খেলেই ভালো হয়ে যায়।’
এমন জ্বর ও সর্দি ৫-৭ দিন পর ভালো হয়ে যায় বলেও জানান তিনি।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘যদিও এখনকার এই জ্বর-সর্দি-কাশি সিজনাল ফ্লু। তারপরও করোনার কারণে মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। এটাকে করোনা ভেবে ভয় পাওয়া যাবে না।’
তিনি জানান, করোনার মধ্যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে রোগী কমে গেলেও এখন এই ফ্লু দেখা দেয়ায় রোগীর চাপ বেড়েছে।
জ্বর-সর্দি-কাশি দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।