ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে সরকারি সড়ক দখল করে চাতাল নির্মাণ করেছেন যুবলীগের স্থানীয় এক নেতা। এতে যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে চাতালের পেছন অংশে বসবাস করা ২০টি পরিবার।
স্থানীয় শাহাজান হোসেন জানান, ওই স্থানে প্রায় ২০টি পরিবারের বাস। তার পরিবারের সদস্য ১৫ জন। বাড়িতে শিক্ষার্থীসহ তার অসুস্থ বাবা-মা রয়েছেন। তাদের এলাকায় যাওয়ার জন্য ৮ ফুটের একটি সরকারি রাস্তা ছিল। তবে সড়কটি দখল করে স্থানীয় যুবলীগ নেতা সাইদুল ইসলাম চাতাল তৈরি করায় তারা আর ব্যবহার করতে পারছেন না।
তিনি আরও জানান, চাতাল নির্মাণের পর প্রায় তিন বছর আগে চারপাশে প্রাচীর দেন সাইদুল। এতে সরকারি সড়কটি ব্যবহার করতে না পেরে তারা অন্যের মালিকানাধীন দুই ফুটের একটি গলি ব্যবহার করছিলেন। সম্প্রতি ওই জমির মালিক জায়গাটি নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন বলে জানিয়েছেন। এমন অবস্থায় তারা অনেকটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন।
সরকারি রাস্তার ওপর স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করেছেন যুবলীগ নেতা সাইদুলও। তবে তার দাবি, সরকারি রাস্তার বিষয়টি গোপন করে তার কাছে জমিটি বিক্রি করেন আগের মালিক। তিনি না জেনেই স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। এখন বলামাত্রই স্থাপনা সরানো সম্ভব না।
বালিয়া ইউনিয়নে গিয়ে দেখা গেছে, পিচের একটি সড়ক থেকে গ্রামের রাস্তাটি শুরু হয়েছে। তবে রাস্তাটি ২০০ গজ সামনে গিয়েই শেষ হয়েছে ধান শুকানোর চাতালে। সেই চাতালের পরই দেয়া হয়েছে দেয়াল।
স্থানীয় সোহেল নামে একজন জানান, সাইদুলকে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে তারা ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেন। তবে চেয়ারম্যান সমাধান করতে পারেননি।
তারা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান আসেনি।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমি আক্তার বলে, ‘আমার স্কুলে যেতে সমস্যা হয়। রাস্তা না থাকায় অনেক সময় চাতালের দেয়াল টপকায়ে স্কুলে যাই।’
বালিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদে এমন একটি অভিযোগ আসার পর আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখেছি। সাইদুল ইসলামের স্থাপনাটি সিএস রেকর্ডধারী রাস্তার ওপর নির্মিত।
‘বিষয়টি আমরা ভূমি অফিস থেকে নিশ্চিত হয়েছি। তবে পরিষদ থেকে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও রাস্তাটি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছি। গ্রামবাসীর স্বার্থে প্রশাসনিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।’
যুবলীগ নেতা সাইদুল বলেন, ‘এটা আমার কেনা জমি। বিক্রেতা জমিতে থাকা সরকারি রাস্তার বিষয়টি গোপন করে আমার কাছে বিক্রি করে আমাকে ঠকিয়েছে।
‘অজান্তেই আমি স্থাপনা গড়ে তুলেছি। এখন বলামাত্রই স্থাপনা সরানো সম্ভব না। আলোচনা সাপেক্ষে লম্বা সময় বা অন্যদিকে রাস্তা দেয়া যেতে পারে। বিষয়টি আলোচনা করে দেখব।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. শামসুজ্জামান বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগে নতুন করে দায়িত্ব নিয়েছি। অভিযোগটি আগের অফিসারের কাছে এসেছিল। তাই আমি পরিষ্কারভাবে তেমন কিছু জানি না। তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’