বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কর দেয় না সায়মন বিচ রিসোর্ট

  •    
  • ৬ অক্টোবর, ২০২১ ১৮:০২

আয়কর পরিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাঁচতারা হোটেলটি কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল তো করেইনি, এমনকি কোনো প্রকার কর পরিশোধ করেনি। উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় ছয় বছরে কোনো রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ না করায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

পর্যটন নগরী কক্সবাজারের কলাতলী বিচের মেরিন ড্রাইভে অবস্থিত বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্ট লিমিটেড উদ্বোধনের পর থেকে গত ছয় বছরে কোনো আয়কর রিটার্ন জমা দেয়নি। আয়কর দেয়ার যোগ্যতা থাকার পরও অন্যতম জনপ্রিয় হোটেলটি আয়কর দেয়া থেকে বিরত থাকছে।

গত মে মাসে পরিচালিত কর পরিদর্শন পরিদপ্তর ঢাকার পরিদর্শন প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। পরিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুমান আরা বেগমের সই করা প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

এর আগে চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-১-এর উপ-কর কমিশনার (সার্কেল-৮) এনামুল হাছান আল নোমান আয়করসংক্রান্ত প্রতিবেদনে লেখেন, ‘কক্সবাজারের ৫ তারকা হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্ট (টিআইএন-৭৫৬২৩০৮৪৫৬৩৮) বিগত ২০১৬-১৭ কর বর্ষ থেকে বর্তমান করবর্ষ ২০২০-২১ পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন দাখিল ও আয়কর পরিশোধ করছে না।’

আয়কর পরিদপ্তরের প্রতিবেদন প্রকাশের পর হোটেলটি তড়িঘড়ি করে ৪০ লাখ টাকার অগ্রিম কর পরিশোধ করে এবং আয়কর রিটার্ন জমা দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। বর্তমানে তারা রিটার্ন ফাইল তৈরি করছে বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছে আয়কর পরিদপ্তর।

আয়কর পরিদপ্তর সূত্র জানায়, রিটার্ন ফাইল জমা দেয়ার পর এই দামি হোটেলটি কত টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে, তা বোঝা যাবে।

এ বিষয়ে হোটেল সায়মন বিচ রিসোর্টের চেয়ারম্যান মাহাবুবুর রহমান রুহেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে হোটেলটা যখন আমরা সেটআপ করি, তখন এর ওনারশিপ বা মালিকানা পরিবর্তন হয়ে যায়। যারা হোটেলের অন্য পার্টনার ছিল, তারা চলে যায়। এরপর এক-দুই বছর আমরা ওয়েট করি কী হয় দেখার জন্য।

‘এরপর যখন কোনো পরিবর্তন আর হলো না, তখন আমরা এটা ঠিক করার জন্য দেখতে পাই এ জন্য যে কাগজপত্র দরকার, তা আমাদের ছিল না। আমরা দেখতে পাই কনস্ট্রাকশনের কাগজপত্র, বিভিন্ন মালের কাগজপত্র, কিছুই আমরা খুঁজে পাচ্ছি না এবং দেখতে পাই অনেক কিছুই মিসিং হয়েছে। ওগুলো জোগাড় করতে করতেই আমাদের আরও দুই বছর চলে গেল। এরপর সারা দেশে তো একটা আনরেস্ট বা জ্বালাও-পোড়াও শুরু হলো। সে সময়ও আমরা লোকসানে ছিলাম। এরপর শুরু হলো করোনা প্যানডেমিক। এসব মিলে আমাদের একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কাজ শুরু করেছি। সব কাগজ সংগ্রহ করেছি। আমরা আসলে এখন ব্যাক ডেটে এক এক করবর্ষ ধরে সব কাগজপত্র তৈরি করছি। আমাদের সঙ্গে রাজস্ব বিভাগের যোগাযোগ আছে। এই সপ্তাহ থেকেই আমরা এক এক করবর্ষ ধরে পর্যায়ক্রমে কর পরিশোধ করব। আমরা তাদের বলেছি। তারা আমাদের যে সময় বেঁধে দিয়েছে, আমরা সেই সময়ের মধ্যেই সব জমা দেব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেটা করেছি, আমি সেটা আপনাকে প্রাউডলি বলতে পারি, আমরা ভ্যাটটা অন্যান্য হোটেল যেখানে ২ লাখ টাকা করে ভ্যাট জমা দিয়েছে, আমরা শুরু থেকেই প্রতি বছর ২০ লাখ টাকা করে ভ্যাট দিয়ে আসছি। আমাদের ডকুমেন্ট এখন ঠিক আছে। ট্যাক্সের বিষয়টা হলো হোটেলের ক্ষেত্রে অনেক ডকুমেন্টসের ব্যাপার, যা জোগাড় করা একটু কঠিন। কিন্তু আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে সব দিয়ে দিচ্ছি। আমাদের সবকিছু অলরেডি রেডি হয়ে গেছে। অডিটও শেষ। আমরা এখন এক সপ্তাহের মধ্যে সব শেষ করে দেব।’

সমুদ্র তীরবর্তী অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এই রিসোর্ট ২০১৫ সালে উদ্বোধন হয়।

আয়কর পরিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী হোটেলটি কোনো আয়কর রিটার্ন দাখিল তো করেইনি, এমনকি কোনো প্রকার কর পরিশোধ করেনি। উদ্বোধনের পর থেকে প্রায় ছয় বছরে কোনো রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ না করায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি বিলাসবহুল এই রিসোর্টের বিরুদ্ধে কর অফিস থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এনবিআরের সূত্রমতে, দেশের বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেল ও রিসোর্টগুলো সঠিকভাবে কর দেয় না বলে অভিযোগ পায় এনবিআর। এ ছাড়া বহু হোটেল, রেস্টুরেন্টের কর বকেয়া রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এনবিআরের চেয়ারম্যান দেশের সব হোটেল-রেস্টুরেন্ট-রিসোর্টের রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধের তথ্য চেয়ে কমিশনারদের চিঠি দেন।

চিঠিতে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত তথ্য দিতে বলা হয়। সব কমিশনার এনবিআরের নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য দিয়েছে। হোটেল, রিসোর্টের আয়কর পরিশোধের তথ্য বিশ্লেষণ করে হতাশ হন এনবিআর কর্মকর্তারা। কারণ বেশির ভাগ হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট যে কর দেয়, তার তিন গুণ কর ফাঁকি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

সায়মন বিচ রিসোর্ট উদ্বোধনের পর থেকে রিটার্ন দাখিল ও কর পরিশোধ না করায় হতাশা প্রকাশ করেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও কর কর্মকর্তারা। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এনবিআরের একটি সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়।

আয়কর পরিদপ্তরের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সায়মন বিচ রিসোর্টের নথি যাচাই করে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজার পৌরসভা থেকে যে লাইসেন্স নিয়েছে, তা রিয়েল এস্টেট ব্যবসার লাইসেন্স। অর্থাৎ করদাতা কোম্পানির হোটেল ব্যবসা ছাড়াও রিয়েল এস্টেট ব্যবসা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে; যা কোম্পানিটি গোপন করে আসছে। এ ক্ষেত্রে সায়মন বিচ রিসোর্টের মামলা নিষ্পত্তির সময় রিয়েল এস্টেট ব্যবসাসংক্রান্ত সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির আগের নথির রেকর্ড অনুযায়ী, করদাতা কোম্পানির ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংকে হিসাব রয়েছে।

নথিতে বলা হয়, সায়মন বিচ সঠিক আয় প্রদর্শন করেনি। সে জন্য এই দুটি ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংকে আয়কর অধ্যাদেশের ১১৩ (এফ) ধারা অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করে আয় নিরূপণের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করদাতা কোম্পানির ২০১৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ করবর্ষ পর্যন্ত কর মামলাসমূহ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ৯৩ ধারা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

৬০ দিনের মধ্যে আয়কর রিটার্ন গ্রহণ ও মামলা সম্পন্ন করে ওই সংস্থাকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন অগ্রগতি ওই সংস্থাকে জানাতে বলা হয়েছে।

২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে এই রিসোর্টের উদ্বোধন হয়। কলাতলী বিচের মেরিন ড্রাইভে ২২৮টি অভিজাত রুমসংবলিত ফাইভ স্টার মানের সমুদ্রতীরবর্তী এই রিসোর্টে রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা।

এ বিভাগের আরো খবর