চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে দেশব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেছে রেল বিভাগ।
‘পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধ করুন, নিরাপদ ট্রেন ভ্রমণ নিশ্চিত করুন’- এ স্লোগানে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী এই কার্যক্রম।
দেশের অন্য জেলার মতো এই সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে লালমনিরহাট ও নীলফামারীতে।
লালমনিরহাট
লালমনিরহাটে ট্রেনে শুরু হওয়া প্রচার শেষ হয় বগুড়ায়।
পথের মধ্যে বিভিন্ন রেলক্রসিংয়ে ট্রেন থামিয়ে রেলযাত্রীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন রেল বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মীরা। এ সময় রেলস্টেশন ও রেল ক্রসিংগুলোতে পোস্টার লাগানো ও সাধারণ মানুষকে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপকারীদের বিরুদ্ধে আইনি বিধান সম্পর্কেও জানান তারা।
এ ছাড়াও পাথর নিক্ষেপকারীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য সবার সহায়তা কামনা করেন রেলের কর্মকর্তারা।
প্রচার অভিযানে ছিলেন লালমনিরহাট রেল বিভাগের বিভাগীয় ম্যানেজার শাহ সফী নুর মোহাম্মদ, ট্রাফিক সুপারিটেন্ডেন্ট খালেদুন্নেছা, রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহারুল ইসলামসহ আরও অনেকে।
ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী জেসমিন নাহার তিশা বলেন, ‘আমার বাসা জেলার নামূরীতে। কিন্তু স্বামীর চাকরির কারণে আমি প্রতিনিয়ত ঢাকা যাতায়াত করি। ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বাসে চড়তে পারি না বলে ট্রেনেই যাতায়াত করতে হয় আমাকে।
‘তবে এখন ট্রেনে চড়াটাও আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। কখন যে কে কোথা থেকে পাথর নিক্ষেপ করে বলা মুশকিল। এতে ধীরে ধীরে রেল সেবার প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে মানুষ। সরকার বা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক ব্যবস্থা নেয় সেক্ষেত্রে ট্রেন সেবায় মানুষ আস্থা ফিরে পাবে।’
যাত্রী অনিমেষ রায় বলেন, ‘আমি একজন ফার্মাসিস্ট। প্রতিনিয়ত আমি রাজশাহী-লালমনিরহাটে যাতায়াত করি। কিন্তু ইদানীং ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটছে। এ ঘটনাগুলো যাতে না ঘটে সে জন্য আইনিভাবে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা দরকার। ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে লালমনিরহাট রেল বিভাগ সপ্তাহব্যাপী যে উদ্যোগ নিয়েছে, এজন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’
ব্যবস্থাপক শাহ সফী নুর মোহাম্মদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের সাজা সর্বনিম্ন ১ বছরের কারাদণ্ড, সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়লে যাত্রীসহ ট্রেনেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়। বর্তমানে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।’
নীলফামারী
নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলস্টেশনে বুধবার দুপুরে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ।
নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলস্টেশনে রেল বিভাগ কর্মসূচির আয়োজন করে। ছবি: নিউজবাংলাউপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন বলেন, ‘রেল বিভাগের উদ্যোগে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ, ট্রেনের ছাদে অবৈধ চলাচল, চেইন পুলিং বন্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলবে সপ্তাহজুড়ে।
রেলওয়ে পুলিশ সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান বিশ্বাস বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ দণ্ডনীয় অপরাধ। এর সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন।’
জনগণকে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে যারা এই অপরাধ করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পরে স্টেশনে উপস্থিত সবার মাঝে সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজী, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী কুদরত ই খোদা, প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন, বিভাগীয় রেলপথ ব্যবস্থাপক শাহিদুল ইসলাম, সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক জয়দুল ইসলাম, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর চিফ কমানডেন্ট আসাদুল ইসলাম।