বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতন, কিন্তু সূচকের উত্থান, এই বৃত্তেই পুঁজিবাজার। আবারও বড় মূলধনি বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। লেনদেনের শীর্ষে লাফার্জ হোলসিম, ওরিয়ন ফার্মা ও বেক্সিমকো লিমিটেডই।
এর ভিড়ে সপ্তাহের চতুর্থ দিবসে একটি বিষয় লক্ষণীয়, সেটি হলো জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানির শেয়ারের উল্লম্ফন।
দিনের সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া পাওয়ার গ্রিড জ্বালানি খাতের সরকারি খাতের মৌলভিত্তির কোম্পানি। এক দিনে দর বৃদ্ধির মূল্যসীমা ছুঁয়েছে এটি।
এক দিনে যত বাড়া সম্ভব ততটাই বেড়েছে জ্বালানি খাতেরই আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকো। উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দর বেড়েছে তিতাস গ্যাসের দরও।
জ্বালানি তেল বিপণনে সরকারি তিন কোম্পানি পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রলিয়াম ও যমুনা অয়েলের দামও বেড়েছে একই দিনে।
জ্বালানি খাতে একমাত্র সরকারি কোম্পানি হিসেবে দর হারিয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, যেটির দর গত তিন মাসে হঠাৎ করেই দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার পর ক্রমাগত কমছে।
কেবল সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে, এমন নয়। পাওয়ার গ্রিডের শেয়ারের লেনদেন হয়েছে ব্যাপক। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এমন কোম্পানির মধ্যে এটির অবস্থান চতুর্থ।
জ্বালানি খাতে সরকারি সব কটি কোম্পানি মৌলভিত্তিক, যেগুলো প্রতিবছর আকর্ষণীয় মুনাফা করে বেশ ভালো লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় ও সম্পদমূল্য আকর্ষণীয় হলেও গত কয়েক বছর ধরে এগুলো ঘুমিয়ে ছিল। তবে সম্প্রতি এগুলোর শেয়ার দর চাঙা হয়ে উঠতে দেখা গেছে।
গত কয়েক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে এই প্রবণতা। গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে দর সংশোধন শুরু হলে শুরুতে এসব কোম্পানির শেয়ারও দর হারাতে শুরু করে। কিন্তু পরে ঘুরে দাঁড়ায়।
এ সময়ে পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার দর সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৮ টাকা ৫০ পয়সা।
ডেসকোর শেয়ার দর সর্বনিম্ন ৩৮ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা।
তিতাস গ্যাসের শেয়ার দর সর্বনিম্ন ৪১ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫ টাকা ৯০ পয়সা।
পদ্মা অয়েলের শেয়ার দর সর্বনিম্ন ২২৭ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪০ টাকা।
যমুনা অয়েলের শেয়ার দর ১৮১ টাকা ৩০ পয়সায় নেমে আসার পর তা উঠেছে ১৮৬ টাকা ৯০ পয়সায়।
তবে উল্টোযাত্রায় থাকা ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টের দর কমেছে এক দিনে যত কমা সম্ভব ততটাই। ১১০ টাকা ৯০ পয়সা বা ৪.৮৮ শতাংশ দম কমেছে কোম্পানিটির। এক দিনে এর চেয়ে বেশি কমা সম্ভব ছিল না।
কোম্পানিটির শেয়ার দর গত ১৮ আগস্ট থেকে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিল। সেদিন দাম ছিল ১ হাজার ৪১৭ টাকা ৮০ পয়সা। হঠাৎ করে বাড়তে বাড়তে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ২ হাজার ৮০৮ টাকা ৩০ পয়সা হয়ে যায়। এরপর থেকে দাম কমতে শুরু করেছে।
জ্বালানি খাতের সরকারি কোম্পানির পাশাপাশি বেশ ভালো পরিমাণ বেড়েছে বিবিধ খাতের বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার দরও। এই কোম্পানিটিও মুনাফায় আছে আর ব্যবসা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।
টেলিকমিউনিকেশন খাতে বাংলাদেশ সাবমেরিন কোম্পানির শেয়ার দরও বেড়েছে। তবে বৃদ্ধির হার খুব একটা উল্লেখযোগ্য নয়।
তবে প্রকৌশল ও খাদ্য খাতে সরকারি লোকসানি কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। কমেছে ব্যাংক খাতের একমাত্র সরকারি কোম্পানি রূপালী ব্যাংকের দরও। এগুলোর মধ্যে কেবল রূপালী ব্যাংক সামান্য মুনাফায় আছে। কিন্তু বাকিগুলো লোকসানি।
কোন কোম্পানির দর কত বাড়ল
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির শেয়ারদর মঙ্গলবার ছিল ৬২ টাকা ৩০ পয়সা। দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে ৬৮ টাকা ৫০ পয়সায়। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ৯.৯৫ শতাংশ।
কোম্পানিটির শেয়ার দর গত ২ বছরে সর্বোচ্চ। তবে এখনও সম্পদমূল্যের চেয়ে নিচেই আছে শেয়ার দর।
২০২০ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ১১০ টাকা ৩৯ পয়সা। চলতি বছর প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৯৩ পয়সা।
আগামী ১৪ অক্টোবর ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকোর দর বাড়ল ৯.৫৭ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ৩৯ টাকা ৭০ পয়সা, দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা। সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী এর চেয়ে বেশি দর বাড়া সম্ভব ছিল না।
শেয়ারটির দর তার এক বছরের সর্বোচ্চ দরের কাছাকাছি। এই সর্বোচ্চ দর ৪৪ টাকা ৫০ পয়সা।
গত ৩১ মার্চ তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ৪৩ পয়সা। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য ৪৬ টাকা ৭৬ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দর বেড়েছে তিতাস গ্যাসের ৮ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ৪২ টাকা ৫০ পয়সা। ৩ টাকা ৪০ পয়সা বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকা ৯০ পয়সা।
তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ১২ পয়সা। কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ৭১ টাকা ৩৯ পয়সা।
জ্বালানি তেল বিপণনে তিন কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫.০৮ শতাংশ দর বেড়েছে পদ্মা অয়েলের। আগের দিন দাম ছিল ২২৮ টাকা ৪০ পয়সা। দাম বেড়ে হয়েছে ২৪০ টাকা।
এই কোম্পানিটির দর এক বছরের সর্বোচ্চ দরের চেয়ে এখনও কম। এই সর্বোচ্চ দর ছিল ২৫৭ টাকা।
কোম্পানিটির শেয়ার দর তার সম্পদ মূল্যের চেয়ে কিছুটা বেশি। শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য ১৫৭ টাকা ৬৪ পয়সা।
মার্চ শেষে তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ১৬ টাকা ২৩ পয়সা।
আরেক কোম্পানি মেঘনা পেট্রলিয়ামের শেয়ারদর ১৯৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০৫ টাকা ৬০ পয়সা। দাম বেড়েছে ২.৮৫ শতাংশ।
মার্চে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ১৭ টাকা ৪০ পয়সা। শেয়ার প্রতি কোম্পানির সম্পদ মূল্য ১৪৮ টাকা ২১ পয়সা।
আরেক কোম্পানি যমুনা অয়েলের দর ১৮১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮৬ টাকা ৯০ পয়সা। দর বেড়েছে ২.৬৮ শতাংশ।
মার্চে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় ১২ টাকা ৬৫ পয়সা। শেয়ার প্রতি কোম্পানির সম্পদ মূল্য ১৬১ টাকা ৪০ পয়সা।