প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি জুট মিল করার পরিকল্পনা নিয়ে ২০১৮ সালের ৩ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে ‘শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিল’ নামে প্রকল্প অনুমোদন পায়।
প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত।
ওই বছর ৩ আগস্ট বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় প্রকল্পের প্রশাসনিক অনুমোদন জারি করে।
শুরুতে প্রকল্পটি ঢাকা জেলার ডেমরা থানার কায়েতপাড়া এলাকায় ৭ একর জায়গাজুড়ে লে-আউট করা হয়। পরে স্থান পরিবর্তন করে জামালপুরের মাদারগঞ্জে ৩৪ একর জায়গায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের নির্মাণকাজের ফলক উন্মোচন করেন।
বাজেট বরাদ্দ পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইইনসি শাখার পূর্ত পরিদপ্তরকে এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৫৩ লাখ দেয়া হয়েছে।
৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বছরভিত্তিক ব্যয়ের বিবরণে উল্লেখ করা হয়, ভূমি উন্নয়নে ব্যয় ৫ কোটি ৫২ লাখ, অফিস ভবন ৬ লাখ ২০ হাজার, অন্য ভবন ২ কোটি ৭৮ লাখ, অফিস সরঞ্জাম ৩ লাখ, সম্মানী ৬ লাখ, প্রচার ও বিজ্ঞাপন ১০ লাখ, টেস্টিং ফি ৮ লাখ, কনসালটেন্সি ৭১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এসব খরচ দেখানো হলেও এখন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব বলছেন প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি মির্জা আজম।
তিনি কমিটির বৈঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নামে প্রকল্প, সে প্রকল্প যদি সময়মতো না শেষ হয়, তাহলে তো বদনাম হবে। এটি করতে না পারলে জনমনে নেতিবাচক ধারণা হবে। মানুষ বলবে প্রকল্পের টাকা সব হাওয়া হয়ে গেছে।’
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা উঠলে সচিব বলেন, ‘প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। যা কাজ হয়েছে ওটাকে কাজ বলা যায় না। অল্প কিছু কাজ হয়েছে।’
জবাবে মির্জা আজম বলেন, ‘পাইলিং শুরু হয়েছে মানে কী বোঝায়? কাজ তো শুরু হয়েছে। এই কাজ করতে না পারলে আমরা এলাকায় রাজনীতি করতে পারব না। মানুষ ভুল ধারণা পোষণ করবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করতে হবে।’
এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাজ শুরু হয়েছিল, মাঝখানে করোনার কারণে বন্ধ ছিল; আবার পুরোদমে শুরু করার কথা বলেছি। এটি যেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করে, সেই তাগিদ দেয়া হয়েছে।’
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজমের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, রনজিত কুমার রায়, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, শাহীন আক্তার, আব্দুল মমিন মণ্ডল, তামান্না নুসরাত বুবলী ও মোহাম্মদ হাবিব হাসান অংশ নেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের বন্ধ থাকা সকল মিল শ্রমিক-কর্মচারীর পাওনা, বিভিন্ন ক্রয়কেন্দ্রে পাটের পাওনা টাকার পরিমাণ, মিলগুলোর ভাড়া দেয়ার সর্বশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা হয়।
শেখ হাসিনা স্পেশালাইজড জুট মিল ও শেখ হাসিনা নকশি পল্লি অনুমোদিত প্রকল্প দুটির কাজ দ্রুততম সময়ে শুরু করে বর্তমান সংসদের মেয়াদেই শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের বন্ধ থাকা সব মিল শ্রমিক-কর্মচারীর তথ্যগত ভুল উপেক্ষা করে মানবিক বিবেচনায় যথাসম্ভব দ্রুত তাদের পাওনা পরিশোধের সুপারিশ করা হয়।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ দেয়ায় বৈঠকের শুরুতে একটি অভিনন্দন প্রস্তাব নেয়া হয়।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজেএমসির চেয়ারম্যান, পাট ও বস্ত্র অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।