বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিনা অপরাধে সৌদি জেলে ২০ বছর কাটাতে হবে বাশারকে?

  •    
  • ৫ অক্টোবর, ২০২১ ১৭:০৩

রাবেয়া বলেন, ‘অপরিচিত ওই ব্যক্তির প্যাকেট নিতে অস্বীকৃতি জানান আমার স্বামী। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেকে বিমানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাকে ভয়ভীতি দেখান। প্যাকেট না নিলে তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেবেন না বলেও ভয় দেখান। এতেও নিতে রাজি না হলে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেই জোর করে আমার স্বামীর ব্যাগে প্যাকেটটি ঢুকিয়ে দেয়। ভয়ভীতি দেখানোয় এবং ফ্লাইটের সময় হয়ে যাওয়ায় কারও কাছে কোনো অভিযোগ না দিয়ে আমার স্বামী ফ্লাইটে উঠে পড়েন। কিন্তু সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর নিরাপত্তাকর্মীরা তার ব্যাগ তল্লাশি করলে ইয়াবার প্যাকেট পায় এবং আমার স্বামীকে জেলে পাঠায়।’

আচার আছে বলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক সৌদিপ্রবাসীর ব্যাগে জোর করে একটি প্যাকেট দেন বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত একে ট্রেডার্সের এসআর সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদ। না নিলে বিমানে উঠতে দেয়া হবে না, এমন ভয় দেখানোয় প্যাকেট নিতে বাধ্য হন সৌদিপ্রবাসী আবুল বাশার। প্যাকেট নিয়ে জেদ্দা বিমানবন্দরে ধরা পড়েন তিনি। আচারের প্যাকেটে মেলে ইয়াবা। পরে ইয়াবা পাচারের অভিযোগে সৌদি আরবে ২০ বছরের সাজা হয়েছে বাশারের।

প্রবাসী বাশারের স্ত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জোর করে বাশারকে প্যাকেট দেয়ার কথাও স্বীকার করেছেন তিনি।

এখন সৌদি আরবে সাজা হওয়া বাশারের কী হবে? বিনা অপরাধেই কী তাকে জেল খাটতে হবে?

নির্দোষ বাশারের মুক্তির জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না তার স্ত্রী রাবেয়া। তার দাবি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যেন বাশারকে মুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়। পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে স্বামীর মুক্তির জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতনদের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

রাবেয়া জানান, ছুটি শেষে এ বছরের ১১ মার্চ সৌদি আরব ফিরতে বিমানবন্দরে যান আবুল বাশার। এদিন রাত ১২টার পর বোর্ডিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়ালে নুর মোহাম্মদ তার স্বামীকে একটি প্যাকেট সৌদি আরব নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। প্যাকেটে কিছু আচার ও খাবার আছে। সৌদিতে তার ভাই মো. সাইদ প্যাকেটটি বিমানবন্দর থেকে নেবেন বলে জানান নুর মোহাম্মদ।

রাবেয়া বলেন, ‘অপরিচিত ওই ব্যক্তির প্যাকেট নিতে অস্বীকৃতি জানান আমার স্বামী। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেকে বিমানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাকে ভয়ভীতি দেখান। প্যাকেট না নিলে তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেবেন না বলেও ভয় দেখান। এতেও নিতে রাজি না হলে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেই জোর করে আমার স্বামীর ব্যাগে প্যাকেটটি ঢুকিয়ে দেয়। ভয়ভীতি দেখানোয় এবং ফ্লাইটের সময় হয়ে যাওয়ায় কারও কাছে কোনো অভিযোগ না দিয়ে আমার স্বামী ফ্লাইটে উঠে পড়েন। কিন্তু সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর নিরাপত্তাকর্মীরা তার ব্যাগ তল্লাশি করলে ইয়াবার প্যাকেট পায় এবং আমার স্বামীকে জেলে পাঠায়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ত্যাগের পর থেকেই আমার স্বামীর খোঁজ পাচ্ছিলাম না। ২০ দিন পর ঘটনার বিস্তারিত এবং জেলে থাকার কথা জানিয়ে সৌদি থেকে টেলিফোন করেন তিনি। পরে ১৩ এপ্রিল বিমানবন্দরে গিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাই।

‘আর্মড পুলিশ আমার অভিযোগের ভিত্তিতে বিমাবন্দরের সিসি ক্যামেরার রেকর্ড চেক করে ঘটনার সত্যতা পায়। ১৪ এপ্রিল বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত একে ট্রেডার্সের এসআর সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদকে আটক করে তারা। এ ঘটনায় আমি বিমানবন্দর থানায় মামলা করি। এরই মধ্যে নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

বাশারের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, ‘আমার স্বামী অপরাধ না করেও প্রায় ৭ মাস ধরে জেলে আছেন। সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আইনি সহায়তা না পাওয়ায় এক পক্ষীয়ভাবে আদালত তাকে ২০ বছরের সাজা দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা না পেলে আমার স্বামীকে বিনা অপরাধে ২০ বছর জেল খাটতে হবে। আমি আমার পাঁচ বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে নিয়ে দেশে মানবেতর জীবন যাপন করছি।’

স্বামী আবুল বাশারের সঙ্গে রাবেয়া।

মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে স্বামীর মুক্তিতে সরকারের সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছেন রাবেয়া।

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নিরপরাধ। তাকে জোর করে প্যাকেট দিয়ে দিছে। নুর মোহাম্মদ স্বীকারও করেছে। সরকার ও সৌদি আরবে বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি সাহায্য না করলে ২০ বছর কোনো অপরাধ না করেই জেলে কাটাতে হবে। আমি সরকারের সাহায্য চাই।’

এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১৩ এপ্রিল সৌদিপ্রবাসী বাশারের স্ত্রী রাবেয়ার অভিযোগ পেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নুর মোহাম্মদকে শনাক্ত করি। পরদিন তাকে আটক করি। তিনি আমাদের কাছে অপরাধের কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। পরে বিমানবন্দর থানায় করা রাবেয়ার মামলায় নুর মোহাম্মদ কারাগারে রয়েছেন।’

জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের বিশেষ শাখায় বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েছি। বিশেষ শাখা ইন্টারপোলের বাংলাদেশ ডেস্কে পাঠিয়েছে। তারাও সৌদি আরবের ইন্টারপোলকে চিঠি লিখেছে বলে জানি।’

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) মহিউল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এপিবিএন থেকে জানার পর ২৫ এপ্রিল এনসিবি রিয়াদকে চিঠি দিয়েছি। কোনো রেসপন্স পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় দফায় ২৪ আগস্ট আবার লিখেছি। এখনও কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। রিয়াদ এনসিবির সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’

পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা জানান, বাশারের মুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসকে উদ্যোগী হতে হবে। তাহলেই তিনি মুক্তি পেতে পারেন। এর জন্য সরকারের উদ্যোগ ছাড়া সম্ভব না।

ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল ইসলাম হাসান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক। এয়ারপোর্টের একজনের জন্য নিরীহ প্রবাসী ফেঁসে গেছেন। এখন রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব প্রবাসীকে মুক্ত করা। সৌদি সরকারকে বলতে হবে, এই ব্যক্তি নির্দোষ, তার মুক্তি চাই। আর এই অপরাধের জন্য যে দোষী, তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর