দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এর প্রভাব পড়েছে সারা দেশে।
খাতুনগঞ্জে মঙ্গলবার ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা কেজি দরে। কয়েক দিন আগে একই মানের পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৪০ টাকা।
ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়ায় মিয়ানমার থেকে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দামও প্রায় ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকায়। দেশি পেঁয়াজের দাম প্রায় সমপরিমাণ বেড়ে ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের মেসার্স ইরা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শেষে ভারতের বন্যার প্রভাব ও অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেলে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। ভারত সরকার পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বাড়াতে বাড়াতে একপর্যায়ে রপ্তানিও বন্ধ করে দেয়।
‘বর্তমানে ভারতের দক্ষিণে প্রবল বন্যায় ফসলহানির কারণে পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য ও পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। কয়েক দিন আগেও বর্ডার এলাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৩৪ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছিল। বর্তমানে সেটি ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক গড় উৎপাদন ২৫ লাখ টন। তবে পচন ও মজুতসংকটে এর সিংহভাগই সময়মতো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়। এ কারণে প্রতিবছর রবি মৌসুমের আগে দেশের বাজারে পেঁয়াজের সংকট তৈরি হয়। পাশাপাশি অতিমাত্রায় ভারতনির্ভরতাও কাজ করে।
দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতিবছর প্রায় ১০ থেকে ১১ লাখ টন পেঁয়াজ ভারত ও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ভারতে দাম বাড়ায় এখন থেকে বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করা প্রয়োজন।
তা না হলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বিগত বছরের মতো বাড়বে বলে শঙ্কা জানিয়েছেন তারা।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছিদ্দিক ট্রেডার্সের মালিক ওমর ফারুক জানান, প্রতি কেজি ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজের ভারতীয় ক্রয়মূল্য পড়ছে ৩৫ রুপি। বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত পরিবহন খরচ ৭ রুপি ও সীমান্তের স্থলবন্দরে কেজিপ্রতি ট্যাক্স ২ রুপিসহ মোট খরচ হয় ৪৪ রুপি।
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় রুপির বিনিময়মূল্য ১ দশমিক ২৫ টাকার হিসাবে সীমান্ত পর্যন্ত ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি খরচ হয় ৫৫ টাকা। দেশের বিভিন্ন আড়তে তা পৌঁছাতে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা খরচ যুক্ত হয়। কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজের কস্টিং ৫৮ টাকা পড়ে। ফলে আগের আমদানি হওয়া পেঁয়াজের মজুত শেষ হয়ে এলে আগামীতে দাম আরও বাড়তে পারে।’
খাতুনগঞ্জের আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ পেঁয়াজের মজুত ছিল, তাতে ধরে নিয়েছিলাম দাম আর বাড়বে না। এখন সীমান্তের আড়তদাররা পেঁয়াজ সরবরাহ দিচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফলে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সংকট দেখা দিয়েছে, দামও বাড়ছে।
‘আমদানিকারকরা আগে থেকে কোল্ডস্টোরেজে পেঁয়াজ মজুত করে রেখেছেন। কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন, যাতে পণ্যটির দাম বেড়ে যায়।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন শুরু হবে আসন্ন রবি মৌসুম অর্থাৎ ১৫ অক্টোবর থেকে। পেঁয়াজের আবাদ হলে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তা তোলা হবে। এর আগে দেশের মজুত ও আমদানির ওপর নির্ভর করতে হবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা দোষ দিচ্ছেন আমদানিকারকদের, আর আমদানিকারকরা ভারতের ব্যবসায়ীদের। আসলে পুরোটাই একটি চক্র। একজন আরেকজনের ঘাড়ে লোক দেখানো দোষ চাপিয়ে দুই পক্ষ মিলেই পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে। এখনই উচিত হবে প্রশাসনের তদারকি শুরু করা। তা হলে আসল রহস্যটা বের হবে।’