ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলার আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে বাঁধনকে মাসে দুইবার বিচারিক আদালতে হাজিরের শর্তে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিন দেয়।
তবে হাইকোর্টের জামিন আদেশের বিরদ্ধে আপিল করবে রাষ্ট্রপক্ষ।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ আলম টিপু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।
জামিন শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আলম টিপু আদালতকে বলেন, ‘এ মামলায় প্রায় সব আসামির জামিন হয়েছে। তিনি (মোহাইমিনু) ১৫ মাস ধরে কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় তার জামিন প্রার্থনা করছি।’
পরে আদালত তার আবেদনের শুনানি নিয়ে শর্ত দিয়ে জামিন দেয়।
এ সময় আদালত বলে, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস কোনো মানুষের কাজ না। এসব বিষয়ে জামিন চাইতে আমার কোর্টে আসবেন না।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এ আসামির জামিনের বিরোধিতা করেছি। জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল করা হবে।’
মামলা থেকে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ২০২০ সালে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের প্রধানসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের প্রধান জসিম উদ্দিন ভুঁইয়া ওরফে মুন্নু। অন্যরা হলেন পারভেজ খান, জাকির হোসেন ওরফে দিপু, মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে বাঁধন ও এসএম সানোয়ার হোসেন। এর মধ্যে মোহাইমিনুল ও সানোয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত।
২০২০ সালের ১৯ ও ২০ জুলাই রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। জসিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক এবং পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করে সিআইডি।
সিআইডি দাবি করে, এর সবই ছিল প্রশ্নপ্রত্র ফাঁসের টাকা।
সিআইডি তখন জানায়, ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা তদন্ত করে সংস্থাটি। ওই মামলায় ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।
মামলায় গ্রেপ্তার ৪৭ জনের মধ্যে ৪৬ জনই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস চক্রের খোঁজ পায় সিআইডি। ১৯ জুলাই চক্রের সদস্য এসএম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
জিজ্ঞাসাবাদে সানোয়ার ২০১৩, ২০১৫ ও ২০১৭ সালের মেডিক্যাল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। সে তথ্যে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জসিম উদ্দিন, পারভেজ খান, জাকির হোসেন ও মোহাইমিনুলকে গ্রেপ্তার করে।
তারাসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ওই দিনই মিরপুর থানায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা করে সিআইডি।
মামলায় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।