নওগাঁর নিয়ামতপুরে এক বৃদ্ধ তার ছেলের বিরুদ্ধে ভরণপোষণ না দেয়ার অভিযোগ করেছেন থানায়। তিনি বলেছেন, একই বাড়িতে থেকেও ছেলে তাকে খাবার দেন না। তবে বৃদ্ধের ছেলে দাবি, পারিবারিক কিছু বিরোধের জেরে তার বাবা এমন অভিযোগ করেছেন।
নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ন কবীর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
অভিযোগ করা বৃদ্ধের নাম ময়েজ উদ্দীন। তার বাড়ি উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নের দিঘীপাড়া (পশ্চিম পাহাড়) গ্রামে।
ওই বাড়িতে পাশাপাশি দুই ঘরের মধ্যে একটিতে তিনি একাই থাকেন। আরেকটিতে পুত্রবধূ ও আট বছরের নাতিকে নিয়ে থাকেন ময়েজের একমাত্র ছেলে মুনছের আলী। ময়েজের স্ত্রী মারা গেছেন অনেক আগেই।
ময়েজ উদ্দীন বলেন, ‘মেলাদিন থ্যাকা (থেকে) হামি (আমি) একাই ভাত রান্দা (রান্না) খাই বাপো। মেলা বয়স হছে হামার (আমার), তাই কাজও করবার পারি না। হামার ছোল (ছেলে) থাকার পরও হামাক (আমাকে) ঠিকমত দেখে না। খোঁজ নেয় না। ছেলের বউডাও আগে খোঁজখবর লিতো (নিত)। এখন আর লেয় না (নেয় না)।
‘যেদিন রানবার (রাঁধতে) পারি না, সেদিন না খাইয়া থাকা লাগে। আশেপাশের লোকজনকে লজ্জায় কবারও (বলতে) পারি না সব সময় খাবারের কথা।
তিনি আরও বলেন, ‘২/৩ বছর ধরা এমন কষ্ট হামার। আর সহ্য করবার পারিচ্ছি না। লিজের (নিজের) সন্তান যদি ভাত না দেয়, ঠিকমতো খোঁজ না নেয়, তয় এর চেয়ে আর দুঃখ-কষ্টের কি হবার পারে।
‘বাধ্য হইয়া থানাত অভিযোগ করিছি। জানি না অভিযোগ করা সন্তানের ছোখের (চোখের) বিষ হনু কিনা উল্টা। খুব কষ্ট লাগে বাপো, কী আর কমু কও।’
তাদের প্রতিবেশী রুবেল হোসেন বলেন, ‘মুনছের তার বাবার প্রতি খুবই উদাসীন। কোনো খোঁজখবর রাখে না। মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো বিষয়ে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করেন।
‘বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার প্রতিবেশীরা মুনছেরকে বোঝানোর পরও কোনো প্রতিকার হয়নি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ভরণপোষণের দাবিতে ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধ।’
ময়েজের ছেলে মুনছের এলাকায় কৃষিকাজ করেন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার বাবার বয়স হয়েছে। বাবা যে অভিযোগ করেছেন তা ঠিক না।
‘আমি কৃষি কাজ করি। ৫/৬ বিঘা জমি আছে, মাসিক সাংসারিক খরচ ৮-১০ হাজার টাকার মতো। কোনো রকমে পরিবারের খরচ চালাই। বাবার সব চাহিদা বা পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না।’
মুনছের আরও বলেন, ‘সব পরিবারেই একটু ঝামেলা হয়ে থাকে। আমার পরিবারেও একটু ঝামেলা আছে। সেটা একান্তই পারিবারিক। বাবা তার ঘরে রান্না করে খেতো। তবে আমি যতটুকু পারি বাবাকে খাবার খরচ দিয়ে থাকি।’
নিয়ামতপুর থানার ওসি হুমায়ন কবীর বলেন, ‘ময়েজ উদ্দীনের অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব। আর ময়েজের যেন খাবারের সমস্যা না হয়, আপাতত সেই ব্যবস্থা করবো।’