বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মাছ-সবজির বাজারে ‘আগুন’

  •    
  • ৫ অক্টোবর, ২০২১ ১১:৪৬

এক ক্রেতা বলেন, ‘প্রত্যেকটি সবজির দামই বেড়েছে। আগে ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগভর্তি বাজার করতে পারলেও এখন ১০০ টাকা দিয়ে ১ কেজি গাজরও কেনা যায় না। আমাদের মতো মধ্যম আয়ের লোকজন সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে।’

বাজারগুলোতে সবজি ও মাছের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। তা নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন।

ময়মনসিংহের শহরের গাঙ্গিনারপাড় কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে, শিম ১০০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, পটল ৪৫ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা, কাঁচা টম্যাটো ১০০ টাকা, পাকা টম্যাটো ১২০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, করলা ৪০ টাকা, মুখীকচু ২৫ টাকা, কুমড়া ৪৫ টাকা, ধনেপাতা ২০০ টাকা, বড় আলু ২০ টাকা ও দেশি আলু ২৫ টাকা কেজি।

এ ছাড়া কাঁচা পেপে ১০ টাকা পিস, কাঁচা কলা ৩০ টাকা হালি, লেবু ১৫ টাকা হালি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৬০ টাকা পিস করে রাখা হচ্ছে। সবজিগুলোর দাম গত এক সপ্তাহে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে।

বাজারের ব্যাগ হাতে সেখানে পায়চারি করতে দেখা যায় মো. কাউসার নামের মাঝবয়সী এক ক্রেতাকে।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটি সবজির দামই বেড়েছে। আগে ১০০ টাকা দিয়ে ব্যাগভর্তি বাজার করতে পারলেও এখন ১০০ টাকা দিয়ে ১ কেজি গাজরও কেনা যায় না। আমাদের মতো মধ্যম আয়ের লোকজন সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে।’

পেশা জানতে চাইলে কাউছার বলেন, ‘আমি নগরীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করি। প্রতি মাসে বেতন পাই ১৬ হাজার টাকা। তিন ছেলেমেয়েসহ ৫ জনের সংসার। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা ও খাবার কিনতে প্রতিমাসে খরচ হয় ৮ হাজার টাকা। এ ছাড়া বাড়ি ভাড়া বাবদ আরও ৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বাকি ৩ হাজার টাকাও যাতায়াত ভাড়া ও টুকিটাকি কাজে খরচ হয়।

‘আগে প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা মাস শেষে হাতে থাকত। এখন নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব টাকা খরচ হয়ে উল্টো মাঝেমধ্যে দেনা করতে হচ্ছে। আমরা মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজন কষ্টের কথা বলতেও পারি না, সইতেও পারি না।’

আরিফুল হক নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করে। একজন কিছুটা কম দামে দিতে চাইলে পাশে থাকা অন্যজন রাগ করেন। পাবলিকের পকেট কেটে টাকা নেয়া হচ্ছে। বাজারে প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন।’

এই বাজারের তরকারি বিক্রেতা কাউছার মিয়া বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদের ওপার থেকে ভ্যানে করে সব ধরনের তরিতরকারি পাইকারি কিনে এই বাজারে বিক্রি করি। পাইকারি দাম বাড়ায় বাধ্য হয়ে বেশি দামে আমরাও বিক্রি করছি।’

সুরুজ মিয়া নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘সব বিক্রেতা যে দামে বিক্রি করে আমিও সেই দামে বিক্রি করছি। আমাদের কষ্ট বেশি, লাভও বেশি। এখানে সিন্ডিকেট করে সবজি বিক্রি হয় না। তবে দাম বেশি বলে এখন বিক্রি কিছুটা কম।’

শহরের সবচেয়ে পুরোনো মেছুয়া বাজারে মঙ্গলবারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে। বাজার করতে আসা অনেককেই দেখা গেছে খালি হাতে ফিরতে। যারা কিনছেন, তারা জানালেন, বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে।

কাতলের দাম ওজনভেদে ৩০ টাকা বেড়ে এখন হয়েছে ২১০ থেকে ২৭০ টাকা। ৩ কেজির সিলভার কার্পের এখন ২০০ ও দেড় কেজির মাছটি ১৫০ টাকা। আর রুই মাছ আকারভেদে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৬০ থেকে ৩২০ টাকা।

এ ছাড়া ৩ কেজি ওজনের গ্রাস কার্প ৪০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা, ২ কেজি ওজনের গ্রাস কার্প ২২০ টাকা, ৩ কেজির পাঙ্গাশ ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৩০ টাকা, ২ কেজির পাঙ্গাশ ১২০ টাকা এবং ২ কেজি ওজনের বোয়াল মাছে ১০০ টাকা বেড়ে এখন ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আর ছোট কাচকি মাছ ৩০০ টাকা, চাপিলা ২০০ টাকা, দেশি ট্যাংরা ৪০০ টাকা, বড় গুলশা ৫০০ টাকা, ছোট গুলশা ৩০০ টাকা, বড় চিংড়ি ৮০০ টাকা ও শিং ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ওই বাজারে।

সেখানে মাছ কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দাম শুনে মাথা ঘুরাচ্ছে। প্রতি কেজি মাছে ২০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাছের দাম শুনলেই অবাক হতে হয়।

‘৫০০ টাকায় এক কেজি মাছ আর কিছু তরিতরকারি কিনতে এসেছিলাম। ২ কেজি ওজনের একটি রুই ৩২০ টাকার কমে দিচ্ছে না। দুই কেজি কিনতে পারব না। এ জন্য এক কেজি শিং মাছ ৪০০ টাকায় কিনেছি। বাকি ১০০ টাকা দিয়ে আলু-পটল কিনে বাড়ি চলে যাব।’

মোরশেদ মিয়া নামের আরেক ক্রেতা জানান, তিনি মাহিন্দ্রচালক৷ আগে নিয়মিত এই বাজারে মাছ কিনতে আসলেও এখন নগরীর শম্ভুগঞ্জ বাজার থেকে মাছ কেনেন। কারণ ওই বাজারে দাম কিছুটা কম থাকে।

তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘একমাত্র নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে কষ্টে রোজগার করা টাকা জমাতে পারছি না৷ প্রতিদিন হতাশার মধ্যেই পার হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দাম কমলে সংসারের খরচ শেষেও বাড়তি টাকা আয় করা যেত।’

মেছুয়া বাজারের মাছ বিক্রেতা মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক খালবিল শুকিয়ে যাওয়ায় মাছগুলো অনেক আগেই বিক্রি হয়েছে। এখন চাষের মাছ বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমরা পাইকারি মাছ কিনতে গেলে আড়তদাররা বলেন মাছের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার সঙ্গে আমাদের কোনো হাত নেই।’

পাইকারি মাছ বিক্রেতা খলিলুর রহমান বলেন, ‘মাছের খাবারের দাম বাড়ায় মাছচাষিরা আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করেন। আমরা সরাসরি ফিশারি থেকে মাছ কিনলেও এখন বেশি সুবিধা পাচ্ছি না।

‘সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। আগে যারা ৩ কেজির মাছ কিনতে আসতেন, এখন তারা ১ কেজি কিনেই চলে যাচ্ছেন। নিম্নবিত্তের কিছু ক্রেতা মাঝেমধ্যে এসেও দামাদামির পর মাছ না কিনে ফিরে যাচ্ছেন।’

সবজি ও মাছের পাশাপাশি দাম বেড়েছে রান্নার উপকরণেরও।

১ লিটার সয়াবিন তেল ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি ডাল ১১০ টাকা, আদা ১০০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৬০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ৫০ টাকা, দেশি রসুন ৫০ টাকা ও ভারতীয় রসুন ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া খাসির মাংস ৮০০ টাকা, গরুর মাংস ৫৫০ টাকা প্রতি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিম অবশ্য আগের মতো ৩৫ টাকা হালি, সোনালি ৫০ টাকা ও হাঁসের ডিম ৫০ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহসভাপতি শংকর সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজার নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ দেয়া হবে না। তবে তরিতরকারি ও মাছের দাম অচিরেই কমে আসবে।’

এ বিভাগের আরো খবর