মাটির কাঠামোগুলো রাখা সারিবদ্ধভাবে। তাতে রঙের প্রলেপ বসাচ্ছেন শঙ্কর পাল। কল্পনায় দেবী যেমন, তেমন আদলেই চোখ ফোটাচ্ছেন, পায়ে আলতা দিচ্ছেন, নখ রাঙাচ্ছেন লালে।
এভাবে খড়, বাঁশ, মাটির তৈরি কাঠামো হয়ে উঠছেন শঙ্কর পালের কল্পনার দেবী দুর্গা।
সিলেট নগরের দাড়িয়াপাড়া এলাকার বল্লব মৃৎ শিল্পালয়ে সোমবার গিয়ে শঙ্কর পালের এই শিল্পকর্মের দেখা মেলে। প্রায় ২৫ বছর ধরে তিনি এখানে প্রতিমা তৈরি করছেন। সিলেট অঞ্চলের বেশির ভাগ প্রতিমাই নির্মাণ করা হয় এখানে।
শঙ্কর পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন তো দম ফেলবার ফুরসত নেই। শেষ সময়ে এসে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। রঙের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন প্রতিমার গায়ে পোশাক জড়ানোর কাজ চলছে।’
করোনার কারণে আর্থিক সংকটে থাকায় এবার সবাই কম বাজেটের প্রতিমা চাচ্ছেন বলে জানান তিনি। তবে এবার অর্ডার অনেক বেড়েছে।
এই এলাকাতেই আরেকটি মৃৎ শিল্পালয়ে প্রতিমা নির্মাণের কাজ করছেন দুলাল পাল। প্রতিমায় শাড়ি পরানোর কাজ করতে দেখা গেছে তাকে। এবার তার প্রতিষ্ঠান ৭৫টি মণ্ডপের প্রতিমা নির্মাণের অর্ডার পেয়েছে।
দুলাল বলেন, ‘গত বছর তো পূজায় কোনো উৎসবের আমেজ ছিল না। প্রতিমার অর্ডারও অনেক কম ছিল। গতবার আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তবে এবার ভালোই অর্ডার পেয়েছি। এখন শেষ সময়ে এসেও অনেকে অর্ডার নিয়ে আসছেন। সময় না থাকায় কয়েকজনকে ফিরিয়েও দিয়েছি।’
প্রতিমা নির্মাণের জন্য জনপ্রিয় সিলেটের এই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা-শিল্পীদের ব্যস্ততা। দেবী দুর্গার পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতীর প্রতিমাও।
দাড়িয়াপাড়া এলাকার প্রতিমাশিল্পী সাগর পাল জানান, এবার বড় বাজেটে তেমন কোনো প্রতিমা বানানো হচ্ছে না। ১৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যেই বেশির ভাগ প্রতিমার অর্ডার পেয়েছেন তিনি। প্রতিমার তৈরির জন্য মাসখানেক আগে চারজন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।
সাগর পাল বলেন, ‘কেবল টাকা রোজগারের জন্য নয়, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা থেকেও আমি এই কাজ করি। প্রতিমা নির্মাণের সময়ও চেষ্টা করি যাতে আমার তৈরি প্রতিমা দেখে মানুষের মনে শ্রদ্ধা ও ভক্তি জাগে। মাটির প্রতিমা কিভাবে জ্যান্ত করে তোলা যায়, এই চেষ্টা করি সব সময়।’
আগামী ১০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ১৫ অক্টোবর দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব।
সিলেটে এবার পূজা হবে ৬০৫ মণ্ডপে, যা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি। এর মধ্যে নগরে পূজা হবে শতাধিক মণ্ডপে। গত বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৫০০ মণ্ডপে পূজা হয়েছিল।
সিলেট নগরের বেশির ভাগ মণ্ডপে এখন চলছে প্যান্ডেল লাগানোর কাজ। চলছে ধোয়া-মোছাও।
করোনাভাইরাসের কারণে এবারও পূজায় কিছু বিধিনিষেধ থাকবে বলে জানিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যরা। ভিড় এড়াতে মণ্ডপে কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না বলে জানান তারা।
দেশে করোনার সংক্রমণ কমলেও এর প্রভাব রয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরেনি। মানুষের আয় কমেছে। এসব কিছুর প্রভাব পড়েছে দুর্গাপূজার উৎসবেও।
পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ‘করোনার কারণে আমরা ভিড় এড়াতে মণ্ডপে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আরতি প্রতিযোগিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ছাড়া প্রতিটি মণ্ডপে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা থাকবে। মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। মণ্ডপে বসে প্রসাদও খাওয়া যাবে না।
‘আনুষ্ঠানিকতায় কিছু কাটছাঁট করা হলেও আমরা আশা করছি ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে সিলেটজুড়ে দুর্গাপূজা হবে।’
দুর্গাপূজার আয়োজনকে নির্বিঘ্ন করতে সবধরনের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) এম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের।
তিনি বলেন, মণ্ডপগুলোতে তিন স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। পুলিশের পাশপাশি আনসার সদস্যরাও সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবেন। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকবে।