দেড় বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর খুলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো। দীর্ঘদিন পর হলে উঠতে পারায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় খুলে দেয়া হয় হল। দরজা খুলতেই ভেতরে প্রবেশে হুমড়ি খেয়ে পড়েন আগে থেকেই গেটের সামনে অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা। ফুল, মিষ্টি, চকলেট দিয়ে তাদের বরণ করেন হলের হাউস টিউটর ও কর্মকর্তারা।
হলে প্রবেশের আগে শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা নেয়ার সনদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে।
পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হলে আপাতত প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়েছে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের। এসব শিক্ষার্থীদের অন্তত করোনারোধী একডোজ টিকা নেয়ার সনদ দেখাতে হচ্ছে।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ বলেন, ‘সকাল সকাল হলে উঠতে পেরে খুবই আনন্দ লাগছে। হলের স্যাররাও অনেক আন্তরিক। দীর্ঘদিন পর হলে আসলাম। কতটা আনন্দ লাগছে বোঝাতে পারব না।’
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শোভন হোসেন বলেন, ‘অসাধারণ অনুভুতি। আমরা দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এখানে এসে মনে হচ্ছে আমরা পুনর্জীবিত হলাম। আমাদের জীবনের যে কলরব ছিল, তা আবার ফিরে পেয়েছি।’
শিক্ষার্থীদের বরণ করতে পেরে আনন্দিত হলের প্রাধ্যক্ষ ও হলের আবাসিক শিক্ষকরাও। স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই হল খোলে দেয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে পেরে আমরাও আনন্দিত। আমাদের বিশ্বাস ছাত্র-ছাত্রীদের কলরবে হল আবার সরব হয়ে উঠবে।’
দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাস খোলে দেয়ায় ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতি আবার সরব হয়ে উঠবে বলে প্রত্যাশা ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আগমনে ক্যাম্পাস ইতোমধ্যে মুখরিত হয়েছে। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হল উন্মুক্ত করে দেবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
‘আমাদের সরাসরি পাঠদান কার্যক্রম দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু করতে হবে। আজ কালকের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটি ঘোষণা দেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’
ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু করোনা এখনও রয়েছে তাই আমরা নরমাল ছাত্র রাজনীতির মধ্যে দিয়ে যাব। ক্যাম্পাস স্বাভাবিকভাবে মুখরিত হবে, প্রাণের উচ্ছ্বাস থাকবে। তবে, আমরা সকল ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের আহ্বান করব স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি মাথায় রাখতে।’
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রমের সঙ্গে বন্ধ করে দেয়া হয় হলও।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ৫ অক্টোবর থেকে খুলে দিতে প্রভোস্ট কমিটির সুপারিশে অনুমোদন দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল।
এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর খুলে দেয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার।
হলের ওঠার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানতে শিক্ষার্থীদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আগেই। নির্দেশনাগুলো হলো:
# কক্ষের বাইরে গেলে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক সঠিক নিয়মে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরতে হবে।
# স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সাবান দিয়ে হাতধোয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
# স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফুট) দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
# কোনো কক্ষের মেঝেতে শোয়া যাবে না। এক বিছানায় একাধিক ব্যক্তি শোয়া যাবে না। কেবল আবাসিক ও দ্বৈতাবাসিক শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবে।
# কোনো বহিরাগত বা বাহির থেকে আসা কাউকে কক্ষে অবস্থান করতে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে কক্ষে ও কক্ষের বাহিরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
# শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ রুম এবং আশপাশ সবসময় নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এক্ষেত্রে হল প্রশাসন সহযোগিতা করবে।
# হল ডাইনিং, ক্যান্টিন, মেস, দোকান, সেলুন, টিভি রুম, অডিটোরিয়াম, অতিথি কক্ষ, পাঠাগার, মসজিদ ও উপাসনালয়ে ভিড় করা যাবে না। এসব স্থানে সামাজিক দূরত্ব মেনে মাস্ক পরতে হবে।
# ডাইনিংয়ে পালাক্রমে খেতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অতিথিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সমাবেশ বন্ধ থাকবে।
# বেড়ানো ও ঘোরাঘুরি থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সভা-সমাবেশ, রেস্তোরাঁ, পার্টি ও গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে।