সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩ হাজার ৩৫০ ফুট উঁচুতে স্কটল্যান্ডের বুশাইল্লে এটিভ মার পাহাড়ের চূড়া। পাহাড় বেয়ে সম্প্রতি সেখানেই গিয়ে হাজির হয়েছিলেন ৮১ বছর বয়সী নিক গার্ডনার।
চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকিয়ে মেঘের ফাঁক দিয়ে ছোট পাহাড়গুলোর মাথা, লেক আর উপত্যকা দেখছিলেন তিনি। আর বলছিলেন, ‘প্রতিবারই এটা দারুণ এক উত্তেজনার মুহূর্ত। আমি এখনও একটা ছোট্ট বালকের মতো এটা অনুভব করি।’
তীব্র ঠাণ্ডা বাতাস তখন আছড়ে পড়ছিল গার্ডনারের গায়। এবার তিনি তার টুপি, হাতের গ্লাভস আর বাতাস নিরোধক জ্যাকেট বের করে বললেন, ‘উষ্ণ আরামদায়ক একটি বাড়িতে থাকার চেয়ে আমি এখানেই বেশি আসতে চাইবো।’
একসময় যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ডে থাকতেন গার্ডনার। ৫০ বছর বয়সে স্ত্রী জেনেটকে নিয়ে স্কটল্যান্ডের পাহাড়ি এলাকায় এসে বসবাস শুরু করেন। পাহাড়ের প্রতি টান তার ছোটবেলা থেকেই।
২০১৮ সালে গার্ডনারের স্ত্রীর অ্যালঝেইমার রোগ ধরা পড়ে। একসময় তিনি শিক্ষকতা করতেন। দুই বছর চিকিৎসার পর জ্যানেটের অবস্থা হয় আরও খারাপ। তাকে এখন ২৪ ঘণ্টাই হাসপাতালে চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়।
জেনেটের এমন অবস্থা দেখে দারুণভাবে ভেঙে পড়েছিলেন গার্ডনার। জেনেটকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারছিলেন না, তার ঠিক কী করা প্রয়োজন। কারণ বিগত ৩০ বছর ধরেই প্রত্যেকটি ঘণ্টা তারা একসঙ্গে কাটিয়েছেন। জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য একটি চ্যালেঞ্জের প্রয়োজন বোধ করলেন গার্ডনার।
জেনেটের স্মৃতি মনে করে গার্ডনার বলেন, ‘হঠাৎ করেই সে চলে গেল।’
অবশেষে এই পাহাড়ে চড়াই গার্ডনারকে কিছুটা জীবনী শক্তি দিল। তিনি বলেন, ‘আমি এমন কিছুই খুঁজছিলাম। তা না হলে আমার মাথা খারাপ হয়ে যেত! আমি এটা জানি।’
এই মুহূর্তে তিনি যে লক্ষ্যটি নিয়ে পাহাড় থেকে পাহাড়ে চড়ে বেড়াচ্ছেন তা অনেকের কল্পনা করাও কঠিন। কারণ তিনি মাত্র ১২০০ দিনের মধ্যে স্কটল্যান্ডের মুনরো’স অর্থাৎ ৩ হাজার ফুটের বেশি ২৮২টি পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার শপথ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ৮৭টি পাহাড়ের চূড়ায় পা রেখেছেন।
জেনেটের সম্মানে দাতব্য তহবিলও গড়ে তুলেছেন গার্ডনার। এর মধ্য দিয়ে যত অর্থ আসে তার পুরোটাই চলে যায় স্কটল্যান্ডের অ্যালঝেইমার রোগীদের কল্যাণে।
সম্প্রতি তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। তহবিল গড়তে এটি বেশ কাজে দিয়েছে। কারণ ফেসবুক, টুইটার আর ইন্সটাগ্রামে তার ভ্রমণের গল্প আর ছবি শেয়ার করে ইতোমধ্যেই ৩০ হাজার পাউন্ডের একটি তহবিল গড়েছেন। পাহাড়ি অঞ্চলটির অনেক বাসিন্দাই তার সঙ্গে দেখা হলে কিংবা দেখা করে হলেও তহবিলে অর্থ দিয়ে দিয়ে যান।
মজার ব্যাপার হল- গার্ডনার যখন তৃতীয় পাহাড়টির চূড়ায় উঠছিলেন তখন সঙ্গে থাকা অন্য অভিযাত্রীরা তার চ্যালেঞ্জের কথা শুনে বিশ্বাসই করতে চাইছিল না।
গার্ডনার বলেন, ‘এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যেতে যেতে দেখা হওয়া মানুষগুলোকে থামিয়ে আমি আমার চ্যালেঞ্জের গল্প শুনাই।’