বিমা খাতের কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা একের পর এক শেয়ার বিক্রির আদেশ দেয়ার পর অবশেষে বিষয়টি নিয়ে তৎপর হয়েছে এই খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
বিমা কোম্পানির ৬০ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ধারণ করতে হবে, ১০ বছর আগে করা এমন একটি আইন চলতি বছর আবার নতুন করে সামনে আসার পর এই খাতের শেয়ারদরে উল্লম্ফন হয়।
তবে দাম বাড়ার পর উদ্যোক্তা-পরিচালকরা শেয়ার কেনার পর উল্টো বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির আদেশ এসেছে। সব মিলিয়ে এক কোটি ১৮ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রির আদেশ এসেছে।
গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এক দফা এবং এপ্রিল থেকে জুনের মাঝামাঝি সময়ে আরেক দফা উল্লম্ফন হয়। তবে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দর সংশোধন শুরু হয় আর চলতি মাসে এক দিনে একটি কোম্পানির ২৮ লাখ ২৫ হাজার শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসার পর বিষয়টি নিয়ে নতুন আলোচনা তৈরি হয়।
নিউজবাংলা হিসাব করে দেখেছে চলতি বছর মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫০টি শেয়ার বিক্রির ঘোষণা এসেছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের পক্ষ থেকে। এই সংবাদ প্রকাশের পর আরও একটি কোম্পানির তিন লাখ শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসে।
গত দুই কর্মদিবস ধরে বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর দরপতন হচ্ছে ঢালাও। আর বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারীরা হতাশ, ক্ষুব্ধ।
এই অবস্থায় কোন কোম্পানির কোন পরিচালকের কাছে কত শেয়ার আছে সেটি তথ্য সংগ্রহে নেমেছে আইডিআরএ।
সংস্থাটি থেকে সোমবার সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিডিবিএলসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য আগ থেকেই তৈরি করা থাকে। ফলে এ জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়নি। এ ছাড়া যাদের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে তারও আমাদের মতো রেগুলেটর। ফলে আমরা যত দ্রুত সম্ভব তথ্য দেয়া যায় সেটিকে গুরুত্ব দিতে।’
উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ৬০ শতাংশ শেয়ার সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়ন বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটি আইন হয়ে আছে। আইন পরিপালন করা উচিত। আগে তথ্য আনুন, তারপর সেটি দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার বিক্রয়ের ঘোষণা দিচ্ছে, যা বিমা আইন এবং বিমাকারীর মূলধন ও শেয়ার ধারণ বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ ও ন্যূনতম শেয়ারধারণের ব্যত্যয়। তাই বিমা কোম্পানিসমূহের উদ্যোক্তা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ কর্তৃপক্ষকে অতি দ্রুত অবহিত করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
চিঠিতে এও বলা হয়, জীবন বিমা বা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন থাকবে ৩০ কোটি টাকা এবং সাধারণ বিমা বা নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন থাকবে ৪০ কোটি টাকা। যার উভয় পর্যায়ে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৬০ শতাংশ করে শেয়ার থাকতে হবে। বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ার থাকবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে।’
এতদিন কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি
উদ্যোক্তা পরিচালকদের এই শেয়ার বিক্রির ঘোষণা এক দিনে আসেনি। গত বছরের শেষ প্রান্তিক থেকেই তা শুরু হয়। তবে বেশি ঘোষণা আসছে এপ্রিলের পর থেকে, যখন বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ফেঁপে উঠে।
এমন উদ্যোক্তা পরিচালকও আছেন, যিনি তার হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এমনও আছেন, যিনি হাতে থাকা বেশির ভাগ শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানির সংখ্যা ৫১টি। এর মধ্যে পাঁচটির মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশের বেশি ধারণ করে আছেন উদ্যোক্তা পরিচালকরা। এর মধ্যে একটি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা ৮ শতাংশের বেশি শেয়ার বিক্রি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আরও একটি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা এই পরিমাণ শেয়ার বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা কার্যকর হলে তাদের হিস্যা ৬০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।
এর মধ্যে সম্প্রতি একটি কোম্পানির ৬০ লাখের বেশি শেয়ার কিনে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হিস্যা ৬০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এটি হলো স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। গত জুন থেকে এই খাতে যে দর সংশোধন শুরু হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে, এই কোম্পানির শেয়ারদরে পতন হয়নি, উল্টো বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।