প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ অর্থ সহায়তায় দরিদ্র ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে হার্টের রিং, পেসমেকার ও ভালব প্রতিস্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের যাচাই-বাছাই করে দরিদ্র রোগীদের এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
সোমবার ময়মনসিংহের তারাগঞ্জের বাসিন্দা সাদিকুর রহমানকে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রম শুরু করেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দীন। এর আগে শনিবার পরীক্ষামূলকভাবে দুইজন রোগীকে এই অস্ত্রপোচার করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার আরও চারজনের হার্টের রিং বসানো হয়েছে।
প্রতিস্থাপন দলের প্রধান ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দীন বলেন, ‘জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে অনেক গরিব রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। কারণ এই চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল।
‘এ কারণে প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র রোগীদের হার্টের রিং, পেসমেকার ও ভালব প্রতিস্থাপনের জন্য তিন কোটি ২৯ লাখ টাকা অনুমাদন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এককালীন পাওয়া এ অর্থ দিয়ে হৃদরোগীদের বিনামূল্যে দেয়ার জন্য ১৫০টি ভালব, ১৫০ রিং ও ১০০ পেসমেকার কেনা হয়েছে।’
এই কার্যক্রমের আওতায় দেশের অনেক অসহায় রোগীদের হার্টের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব বলে জানান হাসপাতালটির পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই ধাপে ধাপে রোগীদের অস্ত্রোপচার করা হবে। এদিকে সাদিকুর ছাড়াও রোববার আরও চারজনের হার্টের রিং ও পেসমেকার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এরা হলেন, আহমেদ হোসাইন জালাল বুদ্দীন হেলাল উদ্দীন এবং হারেস খান।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, সব অস্ত্রোপচারই হবে অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দীনের আওতায়। প্রতিটি রিংয়ের বাজার মূল্য প্রায় ৬২ হাজার টাকা। একজন দরিদ্র মানুষের পক্ষে এই খরচ বহন কষ্টকর।
সোমবার হার্টের অস্ত্রোপচারের পর সাদিকুর রহমান বলেন, ‘আমি অতি দরিদ্র মানুষ। আমার বাড়ি ঘরবিক্রি করেও এ চিকিৎসা করা সম্ভব ছিল না। আমার হার্টে তিনটা রিং পরানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’
বিনামূল্যে হার্টের চিকিৎসার আওতায় আসা আরেক রোগী করিমন বিবিকে হাসপাতালের ৩নং ওয়ার্ডের (অতিরিক্ত) ২৯ নং বিছানায় ভর্তি থাকতে দেখা যায়। রোববার তার হার্টে পেসমেকার পড়ানো হয়।
করিমন বিবির ছেলে নূর হোসেন বলেন, ‘মা গত ১০ বছর ধরে হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু কাপড় লন্ড্রি করে সংসার চালানোর ফলে মায়ের ওষুধের টাকা পর্যন্ত জোগাড়ে হিমশিম খেতে হতো। মায়ের এত ব্যয়বহুল চিকিৎসা খরচ বহন কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।
তিনি বলেন, ‘তবে এখানে ভর্তির পর চিকিৎসকরা বিনামূল্যে এই সেবার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বর্তমানে মা অনেকটাই সুস্থ্। এই অপারেশন করানো না গেলে হয়তো মাকে আর বাঁচানো সম্ভব হতো না।’
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিওলোজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই ক্যাম্পেইনে সব রোগীদের গাইডার, বেলুন ও ওয়্যারসহ প্রয়োজনীয় সব চিকিৎসা সরঞ্জাম বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। একেক রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য প্রায় আড়াই লাখ টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম লাগছে। এভাবে প্রত্যেক রোগীর জন্য কমবেশি খরচ হচ্ছে। কেবল প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের ফলেই গরিব রোগীদের এই সেবা দেয়া সম্ভব হয়েছে।’