ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের তেজগাঁও গুদাম থেকে গোয়েন্দা পরিচয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গোয়েন্দা পরিচয়ে কয়েকজন হানা দেয়ার পর সাধারণ গ্রাহকরাও বাইক ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা।
তিনি জানান, সেখানে অনেকগুলো বাইক ছিল, এর মধ্যে আটটিই নিয়ে যায় হানা দেয়া লোকজন। এর মধ্যে গোয়েন্দা পরিচয়ে যারা এসেছিল, তারা নিয়েছে চারটি, অন্যরা নিয়েছে বাকিগুলো।
নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিলে তারা জোরাজুরি, এমনকি ছুরিও দেখান বলে জানিয়েছেন সেই কর্মকর্তা।
গোয়েন্দা পরিচয়ে যারা আসেন তাদের ইনভয়েসের কপিগুলোতে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসের ঠিকানা দেয়া। একজনের ভিজিটিং কার্ড পাওয়া গেছে, এই কার্ডে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের লোগো বসানো। তিনি পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেও উল্লেখ আছে।
পুলিশ বলছে, গোয়েন্দারা আদৌ সেখানে গিয়েছিলেন কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে।
গ্রাহকের পণ্য আটকে রাখা, সঠিক সময় সরবরাহ না করার ঘটনায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কিউকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন মিয়াকে রোববার গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার তাকে আদালতে তোলা হলে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
তেজগাঁও সাতরাস্তা মোড় এলাকায় কিউকমের গুদামে গেলে নিরাপত্তাকর্মী মো. মাজেদ নিউজবাংলাকে জানান, গোয়েন্দা পরিচয়ে লোকজন ভোরে এসে বাইক নিয়ে যেতে চান। তিনি বাধা দিলে পরে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে তারা ভেতরে ঢোকেন। তবে কর্মকর্তারা রাজি ছিলেন না, তারা জোরাজুরি করেছেন।
তিনি বলেন, “আমি সকাল ৬টায় ডিউটিতে আসি। ওই সময় ৬ জন লোক আসে। এসে বলে ‘আমরা ডিবি পুলিশ। এখানে কে আছে দায়িত্বরত।’ আমি বলি স্যাররা কেউ নাই। তারা ওয়ার হাউজের ভেতরে ঢুকতে চেয়েছিল। আমি ও অন্যান্য সিকিউরিটি গার্ড তাদের ওয়ার হাউজে ঢুকতে দেইনি। বলছি স্যাররা আসলে ঢুকবেন। তারা এর পরে আর ভেতরে ঢোকে নাই।”
পরে সকাল ১০টার দিকে কিউকমের এক কর্মকর্তা আসলে সেই লোকরা তার সঙ্গেও কথা বলেন।
মাজেদ বলেন, ‘স্যার আসলে তারা ভেতরে ঢোকে। স্যার বলছেন আপনারা তো গেট পাস ছাড়া ঢুকতে পারেন না। তারা কী যেন কাগজ দেখিয়ে ভেতরে ঢোকে। তাদের সাথে আরও কয়েকজন ঢুকেছে। স্যার তাদের কাছে হাতজোড় করে অনেক অনুরোধ করছেন। তারা স্যারের সাথে অনেক রাগারাগি করেছে। পরে স্যার ম্যাডামকে ফোন দেন।’
বাইক নেয়ার বিষয়ে নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘ভেতরে কেচি গেটের মাঝামাঝি একটা বাইক ছিল। তাই ভেতরের গেটের তালা মারতে পারি নাই। পরে তারা ভেতরে ঢুকে যে যারমতো বাইক নিয়ে গেছে। তাদের সাথে সাধারণ কাস্টমারও ভেতরে ঢুকে বাইক নিয়ে গেছে।’
কিউকমের অপারেশন এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. রাজু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি সকাল ১০টার দিকে আসি। ডিবি পরিচয়ে ৬ জন আমাদের সিইও রিপন মিয়ার স্বাক্ষর দেয়া কাগজ দেখিয়ে বলেন, আমাদের পারমিশন আছে এখান থেকে বাইক নেয়ার জন্য। রিপন সাহেব নিজে সিল স্বাক্ষর দিয়ে দিছেন। আমি বলছি, রিপন মিয়া যদি আমায় ফোন করে তাহলে সেই ফোন রেকর্ড রেখে আমার সিনিয়রকে ফোন দিয়ে তবেই বাইক দেব।’
তিনি বলেন, “প্রথমে ওয়ার হাউজের ভেতরে তিনজন ঢোকে। পরে আরও তিনজন যায়। এর পর আরও কয়েকজন সাধারণ কাস্টমার ঢুকছে। ডিবির লোক বলে, ‘কালকেও আমাদের লোক তিনটা বাইক নিয়ে গেছে। আমরা আসতে লেট করছি। আমাদের বাইক দিয়ে দেন।’”
গুদাম থেকে কোনো গ্রাহককে বাইক দেয়া হয় না, এ কথা বলে তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করেন রাজু। কিন্তু ঠেকাতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘ডিবির লোকের বাইরে সাধারণ মানুষ যারা আসছিল তাদের একজন ছুরি দেখাইছে। পরে ডিবির সাথে তাদের বাগ্বিতণ্ডা হয়।’
তারা যখন তালা ভাঙে তখন রাজু তার বাইক নিয়ে বের হয়ে যান। তিনি বলেন, ‘কারণ, আমার বাইকের দাম ৮০ হাজার টাকা। এখানে ১৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করি। এখানে চাকরি না থাকলে পাঠাও চালিয়ে খেতে পারব। আমার পরিবার চালাতে হয়। তাই আমার বাইক বাঁচাতে বাইরে রেখে আসি।’
এ ঘটনার বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার মো. শহীদুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি, আসলে ঘটনাটা সঠিক কি না।’