বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে

  •    
  • ৪ অক্টোবর, ২০২১ ১৭:৪৭

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবারও বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হতে দেখা গেছে। তাই সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে যত দ্রুত সম্ভব ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সংক্রমণ শূন্যের কোটায় না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে বাংলাদেশ। গেল দুই সপ্তাহ ধরে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার টানা দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের নিচে হলে কোনো দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধরা হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।

দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত বছর ৮ মার্চ। ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। করোনার প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে।

মার্চে আবার দেখা দেয় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। এই ঢেউয়ে ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এ ভ্যারিয়েন্ট দেশজুড়ে শঙ্কা ও চিকিৎসা সংকট তৈরি করে।

দ্বিতীয় ঢেউয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয় গত জুলাইয়ে। এই মাসে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে কোনো কোনো দিন আড়াই শর বেশি মানুষেরও মৃত্যু হয়েছে।

তবে গত দেড় মাস ধরে করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতির দিকে। কমছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা। সেই সঙ্গে কমছে শনাক্তের হার। ধারাবাহিকভাবে জনজীবনও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। খুলে দেয়া হয়েছে স্কুল কলেজ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চলতি মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ও খুলে দেয়া হবে বলে সরকার থেকে জানানো হয়েছে।

অবশ্য জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর আবারও বিপর্যয়কর অবস্থা তৈরি হতে দেখা গেছে। তাই সংক্রমণের নিম্নমুখী প্রবণতা ধরে রাখতে যত দ্রুত সম্ভব ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। সংক্রমণ শূন্যের কোটায় না আসা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সম্ভবত শেষ হতে চলেছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তৃতীয় ঢেউ আসার শঙ্কা রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানার আশঙ্কা কিছুটা কম।

দুই সপ্তাহের সংক্রমণের হার

গত ২০ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর ২৪ ঘণ্টায় যত নমুনা পরীক্ষা করা হয়, তার মধ্যে সংক্রমণের হার ছিল ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২২ সেপ্টেম্বর এই হার একটু বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৭৯ শতাংশে। এরপর ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার।

২৩ সেপ্টেম্বর শনাক্ত হার দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। এই হার আরও কমে পরের দিন, ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২৫ সেপ্টেম্বর শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এরপর দুদিন শনাক্ত হার ছিল ৪ দশমিক ৪১ শতাংশ ও ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর এই হার একটু বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশে। পরের দুদিন শনাক্ত হার ছিল ৪ দশমিক ১২ শতাংশ ও ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ।

চলতি মাসের প্রথম দিন শনাক্ত হার একটু বেড়ে দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২ অক্টোবর এই হার ছিল ৩ দশমিক ৪১; পরের দিন এই হার নেমে আসে ২ দশমিক ৯০ শতাংশে।

যা বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল নিউজবাংলাকে বলেন, দুই সপ্তাহে ধরে দেশে করোনা সংক্রমণ ৫ শতাংশের নিচে। যে কারণে দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলা যায়। তবে এখনও সংক্রমণ শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে এটা বলা যাবে না। বিভিন্ন জেলাতে এখন সংক্রমণের হার ৫ শতাংশে ওপরে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধে যা যা করণীয় সব মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচিতে জোর দিতে হবে। ৮০ শতাংশ মানুষ যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা নিতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। এখন যেসব জেলাতে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হবে, সেই রোগীগুলোর অবশ্যই আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে সংক্রমণ আর বাড়বে না।’

জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কমে এসেছে জানিয়ে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মনে চলতে হবে। যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয়, তাহলে অবশ্যই আবার তৃতীয় ঢেউ আসার শঙ্কা রয়েছে। পৃথিবীর বহু জায়গাতে সংক্রমণ কমে গিয়ে আবার সেটা বেড়েছে। নতুন নতুন ঢেউ আসছে। অনেক দেশে সংক্রমণ শূন্যের কোটায় নেমে এসে আবার নতুন করে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তাই তৃতীয় ঢেউয়ের শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে না।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, দেশে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে এটা অবশ্যই বলা যায়। তবে নতুন করে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তাদের একটি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে হবে। সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। রোগী শনাক্তের কার্যক্রমে খুবই জোর দিতে হবে। রোগী শনাক্তের পর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

‘করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে সরকারকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।

করোনার তৃতীয় ঢেউ আশার শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন মোশতাক হোসেন। এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নতুন একটি ঢেউ আসবে। তাই সেই ঢেউ প্রতিরোধে আগেই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরুত্ব মানতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর