বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাজেট কাগজে বড়, বাস্তবে ছোট

  •    
  • ৪ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:১৮

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বড় বাজেটের পেছনে যতটা অর্থনৈতিক যুক্তি কাজ করে, তার চেয়ে বেশি কাজ করে রাজনৈতিক প্রভাব। বাজেটের সুফল সাধারণ জনগণ খুব কমই পায়। অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাজেটের আকারের চেয়ে প্রকৃত ব্যয়ই হলো গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতি বছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়লেও সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন হয় না। দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, সংশোধন করে সেটা কাটছাঁট করা হয়। বছর শেষে দেখা যায়, ব্যয় হয়েছে তার চেয়েও কম।

বাজেটের প্রাক্কলন ও প্রকৃত ব্যয়ের পার্থক্য ক্রমেই বাড়ছে। ফলে বড় বাজেট ঘোষণা করে সরকার রাজনৈতিক বাহবা পেলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বড় বাজেট শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ থাকে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

করোনাকালে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য নিয়ে গত অর্থ অর্থবছরের (২০২০-২১) জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট ঘোষণা করে সরকার।

রাজস্ব আহরণের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফা লকডাউন পরিস্থিতিতে মাঝপথে এসে বাজেট সংশোধন করে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

গত অর্থবছরে বাজেটের হিসাব চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থবছর শেষে দেখা গেছে, লক্ষ্যমাত্রার ৭৪ শতাংশ ব্যয় করতে পেরেছে সরকার, যা টাকার অংকে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি, যা মোট বাজেটের ২৬ শতাংশ।

অর্থাৎ ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার মূল বাজেটের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা।

বাস্তবায়নের এ হার সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। গত পাঁচ অর্থবছরে প্রতিবার বাজেটের ৮৪ থেকে প্রায় ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে।

ব্যয় কম হওয়ার পেছনে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনার কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাজেটে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে তা নির্ধারণ করা হয় ৫ লাখ কোটি টাকা। ওই অর্থবছর শেষে প্রকৃত ব্যয় হয় ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাজেট বাস্তবায়নের এ চিত্র নতুন নয়। অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়, বছরের শেষে নিট ব্যয়ের খুব কমই হয়। অর্থাৎ প্রাক্কলিত এবং প্রকৃত বাস্তবায়নের মধ্যে ফারাক বেশি থাকে। এই প্রবণতা ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে।

চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বড় বাজেটের পেছনে যতটা অর্থনৈতিক যুক্তি কাজ করে, তার চেয়ে বেশি কাজ করে রাজনৈতিক প্রভাব। বাজেটের সুফল সাধারণ জনগণ খুব কমই পায়।

অর্থনীতিবিদরা আরও বলেন, বাজেটের আকারের চেয়ে প্রকৃত ব্যয়ই হলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রকৃত খরচই অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। তাদের মতে, বড় বাজেট দিলেই হবে না। দেখতে হবে, দেশের অর্থনীতির ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছে কি না। তা না হলে বাজেটের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাবে না জনগণ।

গত বছরের বাজেট বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, সরকারের ব্যয় কম হওয়ায় ঋণ কম হয়েছে। ফলে বাজেট ঘাটতিও হয়েছে কম।

গত অর্থবছরে জিডিপির ২ শতাংশ বাজেট ঘাটতি হয়েছে। অথচ, মূল বাজেট ঘোষণার সময় ঘাটতি নির্ধারণ করা হয় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার কারণে কিছু খাতে চাহিদা কমলেও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক ব্যয়ের চাহিদা তৈরি হয়েছে।

পাশাপাশি এ সময়ে গ্রামীণ মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠিক রাখতে স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডেও ব্যয়ের চাহিদা ছিল বেশি। কিন্তু সক্ষমতার অভাবে এসব খাতে চাহিদা অনুযায়ী ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, উন্নয়ন বাজেট তথা এডিপি বাস্তবায়নে নানা দুর্বলতা রয়েছে। বাস্তবায়ন কম হওয়ার প্রধান কারণ করোনা। তবে এর বাইরেও কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো এর জন্য দায়ী।

এসব কারণের মধ্যে প্রকল্প পরিচালকদের কর্মস্থলে না থাকা অন্যতম। এ বিষয়টি কোনোভাবেই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি বরাদ্দ করা অর্থ ছাড় নিয়েও সমস্যা রয়েছে। এ ছাড়া যন্ত্রপাতি, জনবলের ঘাটতিও বাজেট বাস্তবায়ন কম হওয়ার কারণ।

তবে শুধু করোনার কারণে সরকারি ব্যয় কম হওয়ার যুক্তি পুরোপুরি মানতে নারাজ অর্থনীতিবিদরা। বরং সরকারের ব্যয় করার সক্ষমতার অভাব বাজেট বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করেছে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট ও সময়নিষ্ঠ পরিকল্পনার অভাবে বাজেট বাস্তবায়ন ব্যাহত হয় বলে মনে করেন তারা।

বাজেটে বাস্তবায়ন বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থবছরের প্রথম ভাগে বাস্তবায়ন চলে ধীর গতিতে। অর্থবছরের শুরুর দিকে বাজেটের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণেও ধীর গতি দেখা যায়।

এ সময়ে বেতন-ভাতা ছাড়া প্রকল্পের অন্যান্য আইটেমের বিপরীতে ব্যয়ও কম হয়। বিশেষ করে বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, মেরামত, সংরক্ষণ, নির্মাণ ও পূর্ত কাজ এবং মালামাল কেনা ও সংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থবছরের শেষ দিকে উদ্যোগ নেয়া হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে সরকারি ব্যয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।

যোগাযোগ করা হলে গবেষা সংস্থা পিআরআই-এর নিবার্হী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বড় বাজেট করার বিষয়ে রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে। সারা দেশের জন প্রতিনিধিদের চাপ থাকে। সবাইকে খুশি করার বিষয় থাকে, কিন্তু বেশি ব্যয় দেখিয়ে বড় বাজেট করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে এর সুফল পাবে না জনগণ।’

ব্যয় ও রাজস্ব আয়ের সামর্থ্য মূল্যায়ন করে বাজেট প্রণয়নের পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কোনো খাতে কত ব্যয় হলো, কীভাবে হলো– সে বিষয়ে মূল্যায়ন থাকা দরকার।’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘করোনার কারণে কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। তবে আমাদের সক্ষমতার যে ঘাটতি আছে, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দের বড় অংশই মেগা প্রকল্পের। এসব প্রকল্পের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নে গতি এসেছে। করোনা পরিস্থিতি ও উন্নতি হচ্ছে। আশা করছি, চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন আগের চেয়ে ভালো হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর