পুঁজিবাজারে দুটি কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) আবেদনের ১৫ শতাংশ শেয়ার কর্মীদের মধ্যে বণ্টনের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
রোববার সংস্থাটির নিয়মিত সভায় ইউনিয়ন ব্যাংক ও ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রে এমন শর্ত দেয়া হয়েছে।
৫ সেপ্টেম্বর আইপিওর মাধ্যমে ৪২৮ কোটি টাকার তোলার অনুমোদন দেয়া হয় ইউনিয়ন ব্যাংককে। সেখানেও দুটি শর্ত দেয়া হয় ব্যাংকটিকে।
এতে বলা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির আগে ব্যাংকটি কোনো প্রকার লভ্যাংশ ঘোষণা, অনুমোদন বা বিতরণ করতে পারবে না। এছাড়া ব্যাংকটিকে ২০২১ সালের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
এবার নতুন শর্ত দেয়া হয়েছে, আইপিও আবেদনের ১৫ শতাংশ শেয়ার ব্যাংকটির কর্মীদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। এই পরিমাণ শেয়ার দুই বছর লক-ইন বা বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
এছাড়া এর আগে ব্যাংকটির তৈরি করা প্রসপেকটাস বা কোম্পানির বিবরণীতে শেয়ার বণ্টনের যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, সেটি বদলে করে নতুন বণ্টন নির্দেশনা উল্লেখ করে আবারও কমিশনে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একইভাবে ২৩ জুন আইপিও আবেদনের অনুমোদন পাওয়া ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের ক্ষেত্রেও একইভাবে শেয়ার বণ্টনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেখানে আইপিও আবেদনের ১৫ শতাংশ কর্মীদের মধ্যে বণ্টনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা দুই বছর লক-ইন থাকবে।
কোম্পানিটিকে ইতোমধ্যে সম্মতিপত্রও দেয়া হয়েছে। রোববার কমিশন সভায় ওই সম্মতিপত্র বাতিল করে নতুন সম্মতিপত্র দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সকেও তার জমা দেয়া প্রসপেকটাস পরিবর্তন করে শেয়ার বণ্টনের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী আবারও সেটি জমার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স
ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ১ কোটি ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ৯০৪টি শেয়ার ছেড়ে মোট ১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৪০ টাকা তুলবে।
পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা টাকায় ফিক্সড ডিপোজিট, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ, ফ্লোর কিনবে কোম্পানিটি। এ টাকা থেকেই মেটানো হবে আইপিওর ব্যয়ও।
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সমাপ্ত আর্থিক বছরের নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দেখানো হয়েছে ৯৩ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) ১৬ টাকা ০২ পয়সা।
২০০০ সালের ২৪ আগস্ট থেকে দেশে বিমা ব্যবসার শুরু করে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স। নিয়ম অনুযায়ী বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর তিন বছরের মধ্যে বিমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে হয়, না আসলে প্রতিদিনের দেরির জন্য গুনতে হয় জরিমানা।
তবে এতে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের সময় লেগেছে ২০ বছর। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (ইডরা) কাছে সময় চেয়ে সময়ক্ষেপণ করেছে কোম্পানিটি।
২০১৯ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স এই সময়ে মোট প্রিমিয়াম আয় করেছে ৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে যেটি ৩৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ছিল।
কর দেয়ার পর ২০১৯ সালে আয় হয় ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে যেটি ছিল ৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এর আগে ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয়া হয় দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সকে, যা ২৯ মার্চ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে।
একই বছরের ৯ ডিসেম্বর অনুমোদন পাওয়া সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর আহমেদ পল্টু ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন।
ইউনিয়ন ব্যাংক
ইউনিয়ন ব্যাংক প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে শেয়ার ছেড়ে ৪২৮ কোটি টাকা তোলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য বা ফেসভ্যালু হবে ১০ টাকা। উত্তোলন করা টাকা দিয়ে ব্যাংকটি এসএমই ও প্রজেক্ট অর্থায়ন, সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও আইপিওর করতে খরচ করবে।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া নেট অ্যাসেট ভ্যালু ১৬ টাকা ৩৮ পয়সা। শেয়ারপ্রতি আয় ১ টাকা ৭৭ পয়সা। গত পাঁচ বছরের ভারিত গড় হারে শেয়ারপ্রতি আয় ১ টাকা ৮২ পয়সা।
ব্যাংকটিকে পুঁজিবাজারে আনতে ইস্যু ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছে প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।