বিনিয়োগকারীদের জন্য নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে দুই বছরেও তা বিতরণ না করায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কোম্পানিটি ২০১৯ সালে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রতি এক টাকা অর্থাৎ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।
এই লভ্যাংশ ঘোষণার আগে কোম্পানিটির শেয়ারদরে উল্লম্ফন হয়। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি মনে করছে, কোম্পানিটির লভ্যাংশ বিতরণের সামর্থ্য ছিল না। আর এই ঘোষণাটিকে তারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা হিসেবে দেখছে।
রোববার বিএসইসির ৭৯৩তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলার করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
২০১৪ সালে তালিকাভুক্তির বছরে লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও পরের তিন বছর লোকসানের কারণে কোনো লভ্যাংশ দিতে পারেনি কোম্পানিটি।
এরপর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন এনে মুনাফা দেখিয়ে ২০১৮ সালে ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয় সুহৃদ।
ওই বছর কোম্পানির শেয়ার দরে উল্লম্ফন হয়। আট টাকার শেয়ারের দর উঠে ৪০ টাকার বেশি। পরের বছরের ২০১৯ সালের ৩ নভেম্বর ঘোষণা করা হয় ১০ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ লভ্যাংশ।
কিন্তু সেই টাকা বিনিয়োগকারীদেরকে আয় দেয়নি সুহৃদ। যদিও ডিএসইর ওয়েসাইটে কোম্পানিটি ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি বিনিয়োগকারীদেরকে কুরিয়ার সার্ভিসে করে ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট পাঠানোর কথা জানায়।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো এখন নগদ লভ্যাংশ বিএফটিএনের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে সুহৃদ সনাতন পদ্ধতিতে কুরিয়ারে করে কেন লভ্যাংশ পাঠালো, তা নিয়ে সে সময়ই প্রশ্ন উঠে।
পরে জানা যায়, আসলে কোম্পানিটি লভ্যাংশ পাঠায়নি। আর গত ২৭ জানুয়ারি বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি করা হয়।
কমিটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, আর্থিক সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদ প্রতারণা করতে লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
বিএসইসি সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ২০১৯ সালের সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ অডিটের সিদ্ধান্তও নিয়েছে। কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ও পরিচালকদের বিও হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে সুহৃদের ওয়েবসাইটে দেয়া ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।
পুঁজিবাজারের সবশেষ হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন প্রান্তিতে সুহৃদের শেয়ার প্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ৮৯ পয়সা।
রোববার কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ২২ টাকা ৮০ পয়সা।
৫৭ কোটি ৩৬ লাখা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটিতে আগস্ট শেষে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার সংখ্যা মাত্র ১২.০১ শতাংশ, যদিও এসইসির নির্দেশনা আছ ৩০ শতাংশ শেয়ার রাখার।
কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ আছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। বাকি ৭১ দশমিক ০৫ শতাংশ আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।