‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’ স্লোগান ধারণ করে পাঁচজন ট্রান্সজেন্ডারকে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ট্রান্সজেন্ডার কর্মকর্তা নিয়োগের ঘটনা এই প্রথম বলে জানিয়েছে বেসরকারি খাতের এই ব্যাংকটি।
রোববার ব্যাংকটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ট্রান্সজেন্ডার ও ভিন্নরকমভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। কর্মস্থলে বৈচিত্র্য সৃষ্টি ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৪ জন ট্রান্সজেন্ডার ও ভিন্নরকমভাবে সক্ষমদের নিয়োগ করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। যাদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগে কাজে নিয়োজিত করা হবে।
ব্যাংকটির কর্মকর্তারা জানান, নিয়োগ পাওয়া এই ১৪ জন কর্মকর্তার মধ্যে পাঁচ জন ট্রান্সজেন্ডার। বাকি নয়জন ভিন্নরকমভাবে সক্ষম। কেউ চোখে দেখতে পারেন না। কারও হাত-পায়ের সমস্যা।
এই উদ্যোগ সম্পর্কে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘জাতি, গোত্র, ধর্ম, লিঙ্গ পরিচয়, শারীরিক অবস্থা কোনো ব্যক্তির প্রতিভা বিকাশে বাধা হওয়া উচিত নয়। এই নতুন কর্মকর্তাদের ব্র্যাক ব্যাংক পরিবারে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি হিসেবে ব্যাংকের কর্মীদের সংবেদনশীল হতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এ উদ্যোগ ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূল স্রোতে অন্তর্ভুক্ত করতে সচেতনতা সৃষ্টি করবে।’
একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মচেতনা ও আত্ম অনুসন্ধানের দর্শন অনুসরণ করে ব্র্যাক ব্যাংক এই সামাজিক উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি।
সেলিম রেজা ফরহাদ বলেন, ‘সমাজে প্রচলিত ধারণা ও সামাজিক বাধা দূর করতে ও সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে কাউকে না কাউকে অবশ্যই আগে এগিয়ে আসতে হয়। ট্রান্সজেন্ডার ও ভিন্নভাবে সক্ষমদের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার আলো দিয়েছে, তাদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
এই নতুন কর্মকর্তাদের ব্র্যাক ব্যাংক পরিবারে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি হিসেবে ব্যাংকের কর্মীদের সচেতন ও সংবেদনশীল হতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে, যাতে নতুন সদস্যরা আন্তরিক অভ্যর্থনা পায় ও কর্মস্থলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত হয়।’
সেলিম হোসেন বলেন, ‘‘একটি মূল্যবোধভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘কেউ পিছিয়ে থাকবে না’ দর্শনে বিশ্বাস করে ব্র্যাক ব্যাংক। আমরা ভিন্ন ও বৈচিত্র্য জীবনধারার গুরুত্ব উপলব্ধি করি, যা লিঙ্গ সম্পর্কে বদ্ধমূল ধারণার গণ্ডি ছাড়িয়ে যায়। আমরা আমাদের নীতি ও পদ্ধতি এমনভাবে সাজাই যাতে সর্বস্তরের মানুষ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়।’’
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এ উদ্যোগের ফলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের গোড়াপত্তন হবে; যেখানে কোনো মানুষ তার লিঙ্গ পরিচয় বা শারীরিক অবস্থার মাধ্যমে নয়, বরং মেধা ও সম্ভাবনা দিয়ে মূল্যায়িত হবে। আমাদের বিশ্বাস আরও করপোরেট প্রতিষ্ঠান এভাবে এগিয়ে আসবে এবং সব মানুষের জন্য সমসুযোগ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।’
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অর্থায়নে অগ্রাধিকার দেয়ার ভিশন নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এই ব্যাংকটি ১৮৭টি শাখা, ৩৭৪টি এটিএম, ৪৬১টি এসএমই ইউনিট অফিস, ৫৪১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৮ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মীবাহিনী নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।