জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি এবং শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান থাকবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আজমত উল্লাহ।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আন্দোলন শুধু আওয়ামী লীগ করছে না। এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষেরও উপস্থিতি আছে। ছাত্রলীগসহ আমাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আন্দোলন করছে। এখন শোকজ করা হয়েছে। এই শোকজের পরিপ্রেক্ষিতে তারা যদি তাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায়...তাদেরও তো একটা দাবি আছে।’
কেন্দ্র থেকে মেয়র জাহাঙ্গীরকে কারণ দর্শাতে বলা হলেও আন্দোলন বন্ধের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি বলে জানান আজমত উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র তো শোকজ করার সঙ্গে কাউকে বলেনি আপাতত আন্দোলন বন্ধ। এটা যেহেতু কেন্দ্র থেকে বলা হয়নি, তাই আন্দোলন চলতেই পারে। আন্দোলন চলবে।’
রোববার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সই করা একটি চিঠি জাহাঙ্গীরের কাছে পাঠানো হয় বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। চিঠির জবাব দিতে জাহাঙ্গীরকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে।
কারণ দর্শানোর চিঠি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মেয়র জাহাঙ্গীরও। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি চিঠির লিখিত জবাব দেব।’
শুরু থেকেই বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে আসা এই মেয়র বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারী ও আমার নির্বাচনের বিরোধিতাকারীরাই এই অপপ্রচার চালিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ যেভাবে চায়, আমি সেভাবেই জবাব দেব।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আন্দোলনের কারণেই কেন্দ্র থেকে এমন সিদ্ধান্ত এসেছে বলে মনে করেন আজমত উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দলের হাইকমান্ড বিষয়টি জেনেছে। তাই শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারার বিধানমতে তাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজ করার অর্থ হলো কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টা টেকওভার করেছে।’
আজমত উল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ একটি গণতান্ত্রিক দল। তাই কারণ দর্শানোর মধ্য দিয়ে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘দল তাকে সময় দিয়েছে। এখন সে প্রমাণ করুক, কিন্তু (ফাঁস হওয়া ভিডিওতে) কণ্ঠ তো তার, এটাতে কোনো সন্দেহ নাই। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েছে বলেই তাকে শোকজের আওতায় আনা হয়েছে। এখন সে জবাব দেবে।’
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ কখনও আপস করেনি বলে জানান আজমত উল্লাহ খান।
তিনি বলেন, ‘সে যে-ই হোক, যত বড় নেতাই হোক এবং এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ আপস করবে না। আমরা চাই, জাহাঙ্গীর আলম যে বক্তব্য দিয়েছে, সেটা যদি সে মিথ্যা প্রমাণ করতে না পারে, তাহলে তাকে যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়।’
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হলে তা আগামী দিনের জন্য একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন আজমত উল্লাহ।
কেন্দ্রের এমন সিদ্ধান্তে খুশি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শোকজের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মেয়রবিরোধীর।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত। দল তাকে শোকজ করেছে। আমরা সবাই দলের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
সবকিছু বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটা দলের নেতা-কর্মীরা মেনে নেবেন বলেও জানিয়েছেন মহি।
তিনি বলেন, ‘দলের ভেতরে থেকে দলের বিপক্ষে কথা বলেছে মেয়র জাহাঙ্গীর। আমরা চাই এর একটা সঠিক সুরাহা হোক। তার বিরুদ্ধে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হবে, তা দলের শৃঙ্খলার জন্য নজির হয়ে থাকবে।’
মধ্যরাতে নিজ বাসায় বসে একজনের সঙ্গে কথোপকথনের ভিডিও ফেসবুকে ফাঁস হওয়াকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা ও আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধিকার আন্দোলনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গাজীপুর আওয়ামী লীগের অন্যতম এই নেতা।
গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানকে নিয়েও আপত্তিকর বক্তব্য আছে সেই ভিডিওতে।
বিষয়টি পছন্দ হয়নি স্থানীয় আওয়ামী লীগের বড় অংশের। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নানাভাবে ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখাচ্ছে তারা।