দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অন্যতম প্রবেশপথ শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে দেড় মাস পর সোমবার সকাল থেকে পরীক্ষামূলক ফেরি চলবে। পরীক্ষা সফল হলে সব ফেরি নিয়মিত চলাচল করবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) কর্তৃপক্ষ জানায়, গেল বুধ ও বৃহস্পতিবার শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএর বিশেষজ্ঞ দল সার্ভে করেছে। এ সময় তারা নদীতে স্রোতের গতিবেগ কম দেখতে পান। এ কারণে সোমবার থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরীক্ষা সফল হলে সব ফেরি চলাচল করবে।
এ জন্য ফেরিও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানায় বিআইডব্লিউটিসি।
দীর্ঘদিন ফেরি বন্ধ থাকায় মাদারীপুরসহ ২১ জেলার মানুষ রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগে দুর্ভোগ পোহায়। অনেকে প্রচণ্ড স্রোতের মধ্যেও লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে পদ্মা পাড়ি দেন। নতুন রুট হিসেবে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দিতে একটি ঘাট প্রস্তুত হলেও ফেরি চলাচল করেনি।
শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে ফেরি বন্ধ থাকায় বিকল্প রুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া দিয়ে যাতায়াত করছে অ্যাম্বুলেন্সসহ বিভিন্ন যানবাহন। ওই পথে দীর্ঘ সময় লাগে। পাশাপাশি দ্বিগুণ ভাড়াও গুনতে হয় যাত্রীদের।
পদ্মা নদীর প্রবল স্রোতে দুর্ঘটনা এড়ানোর কথা বলে ১৮ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিসি।
এ রুটে নদী পাড়ি দিতে গিয়ে চারবার পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কার ঘটনা ঘটে।
বিআইডব্লিউটিসি ঘাট সূত্র জানায়, শিমুলিয়া নৌপথে ১৮টি ফেরি রয়েছে। গত জুলাই ও আগস্টে পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে ২৪ দিনে পদ্মা সেতুর তিনটি পিলারে চারবার ফেরির ধাক্কা লাগে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন যাত্রী। এ পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনা এড়াতে ১৮ আগস্ট দুপুরের পর থেকে এই পথে ফেরি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
ফেরি বন্ধের প্রায় দেড় মাসে পদ্মায় স্রোতের গতি না কমলেও পানির উচ্চতা অনেকটা কমেছে। শিমুলিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হওয়ার পর বিকল্প রুট হিসেবে বাংলাবাজার ঘাটের পাশে শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি রুট ব্যবহারের কথা ওঠে। ওই রুটে ফেরি চালুর জন্য মাঝিকান্দিতে ফেরির পন্টুন বসানো হলেও তা চালু হয়নি। এই নৌ-চ্যানেলে একাধিক ডুবোচর থাকায় ফেরি চালানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি।
বাংলাবাজার ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অনেকটাই নীরব বাংলাবাজার ফেরিঘাট। ঘাটের পন্টুনের পাশে কয়েকটি ডাম্ব ফেরি নোঙর করে রাখা হয়েছে। ঘাটে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নেই। যাত্রীরা ফেরিঘাটে না গিয়ে লঞ্চঘাটের দিকে অগ্রসর হন। ফেরির যাত্রীরা লঞ্চে পদ্মা পার হচ্ছেন। এ কারণে লঞ্চগুলোয় অতিরিক্ত চাপও দেখা গেছে।
বরিশালগামী লঞ্চের যাত্রী ফকরুদ্দিন বলেন, ‘পরিবার নিয়ে ঢাকায় বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। ফেরি বন্ধ থাকায় প্রচণ্ড স্রোত ও ঢেউয়ের মধ্যে লঞ্চ দিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে। যে হারে লোকজন লঞ্চে উঠছে, তাতে যেকোনো সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে বরিশালের গৌরনদীর যাত্রী ইয়াসমিন বলেন, ‘স্রোতের অজুহাতে ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। কর্মকর্তাদের এখন কোনো কাজ করতে হচ্ছে না। প্রতিবছরই এই সময়ে স্রোত বাড়ে। হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে জরুরি সেবার জন্য অন্তত অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি পার করার জন্য দু-একটি ফেরি কি চালু রাখা যেত না।’
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পদ্মায় পানির উচ্চতা আগের তুলনায় কমেছে। স্রোতও আগের চেয়ে কম। এতে ফেরি চলাচলের সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার থেকে চেষ্টা করা হবে ফেরি চলাচলের।’
বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের ম্যানেজার মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘সোমবার পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর জন্য ফেরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুই ঘাট থেকে দুটো ডাম্ব ফেরি চালানো হবে। পরিবেশ অনুকূলে হলে পরের দিন থেকে প্রতিনিয়ত ফেরি চলাচল করবে।’
বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, পদ্মা নদীতে স্রোতের গতিবেগ কমে এসেছে। সার্ভে সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চালানো হবে। সফল হলে ফেরি চলবে।’