রেলে এখনও দুর্নীতি আছে এবং রেলের লোকজন ধোয়া তুলসী পাতা নয় বলে মন্তব্য করেছেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।
রাজধানীর রেলভবনে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষ্যে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘কালো বিড়ালের যে গল্প, এটা রেলকে হেয় করার জন্যই করা হয়েছিল। হয়তো দুর্নীতির জন্যই কালো বিড়ালের প্রশ্নটা এসেছে। দুর্নীতি হয়তো ছিল। এখনও কিছু কিছু আছে। আমরা যে ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে গেছি, এ দাবি আমি করব না।
‘আমরা চেষ্টা করছি দুর্নীতিমুক্ত একটি রেলওয়ে গড়ে তুলতে। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে আমার যে প্রচেষ্টা, আমি তা অব্যাহত রেখেছি। আমার সঙ্গে যারা কাজ করছেন, প্রত্যেকেই আমি মনে করি এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।’
সংবদামাধ্যমের উদ্দেশে এ সময় মন্ত্রী সুজন বলেন, ‘আপনাদের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকে, তথ্য থাকে, সেটা আমাদের দিন। আমি অবশ্যই সেখানে সাড়া দেব।’
দুদক থেকে রেলের কোন কোন খাতে দুর্নীতি হয়, সে জন্য যে প্রতিবেদন ও সুপারিশ দেয়া হয়েছিল সে অনুসারে মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘এটা একটি চলমান প্রক্রিয়া। এ তো তাৎক্ষণিক কোনো বিষয় নয়, যখন একটি টেন্ডার-প্রক্রিয়া হয়, সেখানে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে বলে ইজিপির মাধ্যমে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
‘আর একটি দুর্নীতির জায়গা হলো কেনাকাটার প্রক্রিয়া। সে জায়গাটাতে রেল ও কেনাকাটায় সরকারের যে আইন আছে তা মানা হলো কি না, সেটাই মূল বিষয়। সেদিক থেকে বলব, আমরা চেষ্টা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনো দেশে উন্নয়নমূলক কাজ করতে গেলে দুর্নীতির যে অভিযোগ সেটা থাকবেই। কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না। আর আমাকে তো কারও না কারও ওপর আস্থা রাখতে হবে।’
দেশে সম্প্রতি ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা বেড়েছে বলেও জানানো হয়।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ১১০টি। এতে ১০০টি ট্রেনের জানালার গ্লাস ভেঙেছে এবং ২৯ যাত্রী আহত হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান রেলমন্ত্রী।
এসব ঘটনায় কোনো ব্যক্তিকেই শাস্তির আওতায় আনা যায়নি বলে স্বীকার করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে আমরা রক্ষা পেতে চাই। ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই।’
দোষীদের কঠোর শাস্তির আত্ততায় আনা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সচেতনতায় জোর দিচ্ছি। একটা ঘটনা ঘটলে দেখা যায় অনেক দিন আর কোনো ঘটনা ঘটে না।’
চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
পূর্বাঞ্চলের চার জেলার পাঁচটি চিহ্নিত এলাকা হলো চট্টগ্রামের পাহাড়তলী, সীতাকুণ্ড-বাড়ককুণ্ড, ফেনীর ফাজিলপুর কালীদহ এলাকা, নরসিংদী সদর, জিনারী ও ঘোড়াশাল এলাকা।
অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ১৫ এলাকা হলো চুয়াডাঙ্গার আউটার, নাটোরের আব্দুলপুর রেলওয়ে স্টেশন, সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন, বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশন, পাবনার মুলাডুলি রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পঞ্চগড় জেলা ও ঠাকুরগাঁও জেলার কিসমত-রুহিয়া।
এ ছাড়া পাবনার ভাঙ্গুরা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, বগুড়ার ভেলুরপাড়া রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, জয়পুরহাটের আক্কেলপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া রেলওয়ে স্টেশন, সলপ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, পাবনার বড়াল ব্রিজ রেলওয়ে স্টেশন এলাকা, খুলনার ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন এলাকা।