যত কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে তার প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক কোম্পানির। তার পরেও মূল্যসূচক বেড়েছে বেশ ভালো পরিমাণে।
বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারে দরপতন হলেও সূচকের উত্থান; তিন সপ্তাহ ধরে এই প্রবণতা আবার দেখা গেল পুঁজিবাজারে। মৌলভিত্তির বড় মূলধনি কোম্পানির দরে উত্থানই এর কারণ।
দিনভর লেনদেনে ১০৯টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, অন্যদিকে কমেছে ২০৬টির। এটাই বলে দেয়, সূচক বাড়লেও বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর মুখ ছিল ম্লান।
তিন সপ্তাহের সংশোধন শেষে গত সপ্তাহের শেষ দিকে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছিল। তবে রোববারের লেনদেন আবার বিভ্রান্তিতে ফেলে দিল।
তবে অন্য একটি বিষয় কিছুটা হলেও স্বস্তির আভাস দিয়েছে। সেটা হলো টানা পঞ্চম দিন সূচক বৃদ্ধি। ১২ সেপ্টেম্বর দর সংশোধন শুরুর পর এই প্রথম টানা এত দিন বাড়ল।
আগের তিনটি রোববারের তুলনায় এই রোববারের লেনদেন কিছুটা ব্যতিক্রম অবশ্য বলা যায়। গত ১২ সেপ্টেম্বর রোববার সংশোধন শুরুর দিন সূচক পড়েছিল ৫৬ পয়েন্ট।
১৯ সেপ্টেম্বর পরের রোববার সূচকের পতন হয় ৩৭ পয়েন্ট। আর এক সপ্তাহ পর ২৬ সেপ্টেম্বর সূচক পড়ে ৭ পয়েন্ট।
তিন দিনই সূচক আগের বৃহস্পতিবারের তুলনায় বেড়ে গিয়ে শেষ বেলায় পড়ে।
১২ সেপ্টেম্বর একপর্যায়ে সূচক বেড়ে গিয়েছিল ৭৮ পয়েন্ট। সেখান থেকে ১২৪ পয়েন্ট পতন হয় বেলা শেষে।
১৯ সেপ্টেম্বর লেনদেনের শুরুতে সূচক বেড়ে গিয়েছিল ২৮ পয়েন্ট। সেখান থেকে ৬৫ পয়েন্ট পতনে শেষ হয় লেনদেন।
২৬ সেপ্টেম্বর টানা সূচক একপর্যায়ে বেড়ে যায় ২৯ পয়েন্ট। সেখান থেকে পতন হয় ৩৬ পয়েন্ট।
অক্টোবরের প্রথম কর্মদিবসেও সূচক বেড়ে গিয়ে কিছুটা কমেছে, তবে তা কখনও আগের কর্মদিবসের নিচে নামেনি।
লেনদেন শুরুর ২০ মিনিটের মধ্যে সূচক আগের দিনের চেয়ে ৫২ পয়েন্ট বেড়ে গিয়েছিল। তবে পরে তা সেখান থেকে ২৫ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ করে।
কিছুটা কমেছে লেনদেন, তবে তা আড়াই হাজার কোটি টাকা ছুঁইছুঁই হয়েছে শেষ পর্যন্ত।
জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টানা উত্থানে থাকা পুঁজিবাজারে যে দর সংশোধন শুরু হয়েছে, তাতে সূচক ওঠানামা করার মধ্যে দাম কমছে মূলত স্বল্প মূলধনি, লোকসানি, বন্ধ কোম্পানিগুলোর। অল্প দর কমেছে ব্যাংক খাতেও আর হতাশার মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত দারুণ লভ্যাংশ দেয়ার পর অস্বাভাবিক হারে দর হারিয়েছে।
বহুজাতিক বড় মূলধনি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির দর বৃদ্ধি সূচকে যোগ করেছে ১৮ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট। এ ছাড়া বেক্সিমকো লিমিটেড ৭.২ পয়েন্ট, বেক্সিমকো ফার্মা ৪.৫ পয়েন্ট, ডেল্টা লাইফ ৩.২৪ পয়েন্ট, আইসিবি ৩.০ পয়েন্ট, জিপিএইচ ইস্পাত ২.৭৪ পয়েন্ট, মবিল যমুনা ২.৫৪ পয়েন্ট, পাওয়ার গ্রিড ২.৫৩ পয়েন্ট, বিএসআরএম ২ পয়েন্ট ও সামিট পাওয়ার যোগ করেছে ২.১৯ পয়েন্ট।
অর্থাৎ কেবল ১০টি কোম্পানির দর বৃদ্ধিতে সূচকে যোগ হয়েছে ৪৮ পয়েন্ট।
অন্যদিকে ওয়ালটন, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স, বিএনআইসিএল, ন্যাশনাল লাইফ, একমি ল্যাবরেটরিজ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, রবি ও এনআরবিসির দরপতনে সূচক কমেছে মোট ২৮ পয়েন্ট।
আগ্রহ ধরে রেখেছে ওষুধ ও রসায়ন
গত সপ্তাহের বেশির ভাগ সময়ই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের লেনদেনে শীর্ষে ছিল তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাত। চলতি সপ্তাহের শুরুতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে লেনদেনের বেশির ভাগ সময়ই এই স্থানে ছিল আর্থিক খাত। দিনের শেষ দিকে এসে বদলে যায়, দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসে আর্থিক খাত ও প্রথমে চলে আসে ওষুধ ও রসায়ন খাত।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এভডেন্ট ফার্মার, ৭.৪২ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ফার্মার দাম বেড়েছে ৩,৮৩ শতাংশ। দিনের সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই কোম্পানিতেই। একটি কোম্পানির ১২৯ কোটি টাকার বেশি হাতবদল হয়েছে।
এই খাতের ৩০টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে মোট ৩২০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪০০ কোটি ৩ লাখ টাকা।
আটটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, কমেছে ২১টি কোম্পানির, অপরিবর্তিত ছিল একটির।
আর্থিক খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে
রোববার লেনদেনে নতুন বিনিয়োগ যোগ হয়েছে আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোতে। ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকি ২২টির ৩০৮ কোটি ৪০ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২৮৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
১১টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। কমেছে ১০টির। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত।
এদিন আর্থিক খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে প্রাইম ফাইন্যান্সের, ৮.৭৩ শতাংশ। তারপরই আছে লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৩.০৫ শতাংশ।
এ খাতের সবচেয়ে বেশি ৯.৯৩ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের। শেয়ার দর ৮১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭৩ টাকা ৪০ পয়সা।
অন্যান্য খাতে লেনদেন
অন্যান্য প্রধান খাতগুলোর মধ্যে ব্যাংক, বিমা, মিউচ্যুয়াল ফান্ড আবার হতাশ করেছে।
ব্যাংক খাতের ৩২টি কোম্পানিতে লেনদেন সামান্য বাড়লেও দরপতন হয়েছে বেশির ভাগ শেয়ারের।
ব্যাংক খাতে দর বেড়েছে কেবল চারটি কোম্পানির। বিপরীতে কমেছে ১৭টির।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ৮২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। আগের দিন যা ছিল ১০৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।
বিমা খাতের ৫১টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে ৪৪টিরই। বেড়েছে কেবল ৬টির দর।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ২০৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
বিবিধ খাতের ১৪টি কোম্পানিতে লেনদেন হয়েছে মোট ১৭৭ কোটি ২০ লাখ। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৪৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। ছয়টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে বাকি ৭টির দরও।
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে লেনদেন ও শেয়ারদর বেড়েছে। এই খাতের ১১টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে মোটি ৬৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বেড়েছে একটির দর, কমেছে ১০টির।
খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের ২০টি কোম্পানিতে মোট লেনদেন হয়েছে ৫৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে দাম বেড়েছে পাঁচটির, কমেছে ১৩টির।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডে লেনদেন আগের কার্যদিবসের তুলনায় আরও কমেছে। এমনকি লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ ফান্ডের দরও কমেছে। ৩৬টি ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে কেবল তিনটির, কমেছে ১৩টির। বাকিগুলোর দর ছিল অপরিবর্তিত।
এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩৫৬ দশমিক ০৪ পয়েন্ট।
শরিয়াভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৯৩ দশমিক ৯৭ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩১ দশমিক ১৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৪১ দশমিক ৭১ পয়েন্ট।
দিনশেষে লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৫০২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।