ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যদি এভাবে (একের পর এক মামলা দেয়া) ছোটে, তাহলে দেশের উন্নয়ন বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করছে হাইকোর্ট।
অর্থ পাচার মামলায় এক আসামির আগাম জামিনের শুনানিতে রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারোয়ারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
এ সময় দুদকের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলে, ‘ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যদি আপনারা এভাবে ছোটেন, তাহলে দেশের উন্নয়ন হবে কী করে। যারা দেশের বাইরে বেগমপাড়া করছেন, যারা মালয়েশিয়া, আমেরিকায় টাকা পাঠাচ্ছেন, এগুলো হলো বড় বড় মানি লন্ডারিং। তাদের ধরেন।’
এদিন অর্থ পাচার মামলায় দিনাজপুর জেলা যুবলীগ নেতা খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনকে আট সপ্তাহের জামিন দেয় আদালত। তবে জামিনের শর্ত হিসেবে আসামিকে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে এবং তিনি দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।
পরে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া নিউজবাংলাকে জানান, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা অর্থ পাচার মামলায় মো. খলিলুল্লাহ আজাদকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন আদালত।
আইনজীবী বলেন, দিনাজপুরে সোনালী ব্যাংকের যে ব্রাঞ্চের কথা উল্লেখ করে মামলা করা হয়েছে, সেখানে ওই ব্রাঞ্চের কোনো অস্তিত্ব নাই।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে ১৪ কোটি ৭১ লাখ ৭৩ হাজার ২১৮ টাকা জমা করেছেন খলিলুল্লাহ আজাদ। বিভিন্ন সময়ে এই টাকা উত্তোলন করেছেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
আইনজীবী বলেন, যেখানে ব্যাংকের শাখারই কোনো অস্তিত্ব নাই, সেখানে এ অভিযোগ কীভাবে টিকে।
এর আগে আরও ২২টি মামলায় জামিন পান খলিলুল্লাহ আজাদ। জেলে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে চার মাসে ১৬টি মামলা করা হয়েছে বলে জানান তার আইনজীবী।
এর আগে চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি খলিলুল্লাহ আজাদের পরিবার থেকে এক সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয়, চার মাসের ব্যবধানে খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনের বিরুদ্ধে পুলিশ ১৬টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে।
তারা বলেন, এক মামলায় জামিন হলে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে খলিলুল্লাহকে কারাগার থেকে বের হতে দিচ্ছে না পুলিশ।
অন্যদিকে তাদের এ অভিযোগ অস্বীকার করে ২ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুরের পুলিশ সুপার পাল্টা প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদে পুলিশ সুপার বলেন, 'প্রকৃতপক্ষে মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টন একজন কৌশলী ও চতুর প্রকৃতির প্রতারক। সে বিভিন্ন পেশাজীবী লোকজনকে ভয়ভীতি ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করে।'
প্রতারক মো. খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষের নিকট থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্যসংবলিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক এ পর্যন্ত মোট পাঁচটি জিডি ও ১৩টি মামলা রুজু করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে তদন্তপূর্বক চারটি জিডির প্রশিকিউশন ও পাঁচটি মামলার অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়েছে, যা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন। অন্যান্য মামলাগুলো তদন্তাধীন।