‘বন্দা’ নামে একটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য ২৫ বছরের মালতি সিসা। বাস করেন ভারতের উড়িষ্যা অঙ্গরাজ্যের মালকানগিরি জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম বান্দিগুডায়। কিন্তু সমস্যা হলো- তার গ্রামজুড়ে পানির জন্য তীব্র হাহাকার। তাই ছোট তিন বোনকে নিয়ে আস্ত এক কূপই খনন করে ফেললেন তিনি।
নিজ গোত্রের মধ্যে মালতিই প্রথম যিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। পড়াশোনা করেছেন ভুবনেশ্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে। করোনার কারণে লকডাউন শুরু হয়ে গেলে তিনি গ্রামে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু গ্রামে এসেই পানির অভাবকে দারুণভাবে অনুভব করেন। তাই এ ব্যপারে কিছু একটা করার চিন্তা শুরু করেন।
হিন্দুস্থান টাইমসকে মালতি জানান, গ্রামে কয়েকটি নলকূপ থাকলেও যত্নের অভাবে এখন সবগুলোই অকেজো। তাই পরিবারের জন্য পানি সংগ্রহ করতে তার তিন বোনকে বহু দূরের এক ছড়ায় যেতে হতো। গ্রামের সবাই এভাবেই পানি সংগ্রহ করতেন।
পরিবার আর গ্রামের মানুষের কষ্ট দেখে নিজেই একটি কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেন মালতি। পরে তিন বোনকে সঙ্গে নিয়ে টানা ১০ দিন মাটি খুঁড়ে যান তিনি। এভাবে ২৫ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ার পর পানির দেখা পান তারা। এরপর সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় গোলাব-এর বৃষ্টিতেও পানিতে পূর্ণ হয়ে যায় তাদের কূপটি।
বহু দূরের এক ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করত মালতির গ্রামের মানুষ
মালতি বলেন, ‘শুধু আমার পরিবারই নয়, এই গ্রামের সবাই এখন কূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছে। এই কূপের পানি পান করা ছাড়াও গোসল এবং চাষের কাজেও আমরা ব্যবহার করছি।’
মেয়েদের এমন কীর্তিতে দারুণ খুশি মালতির বাবা ধাবালু সিসা। তিনি বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে মালতি তার স্বপ্ন পূরণ করেছে। এই কূপ থেকে এখন সারা গ্রাম উপকৃত হচ্ছে।’
মালতি জানান, অর্থের অভাবে তার কূপটিতে কংক্রিটের দেয়াল তৈরি সম্ভব হয়নি। কিন্তু তার সাফল্যে গ্রামের তরুণরা এখন উজ্জীবিত। অনেকেই এ ধরনের কূপ খননের প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। গ্রামে মোট ৬০টি পরিবারের বসবাস। তাদের পানির কষ্ট এখন অনেকটাই কমে গেছে।