বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শরিকরা চলে গেলে বিএনপি খুশি

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২১ ২২:৫৩

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরা তো (জোটের শরিক) সুযোগসন্ধানী। নিজেদের তেমন অস্তিত্ব নেই। বটগাছ খোঁজে। আবার স্বার্থ উদ্ধার না হওয়াতে ছেড়ে দেয়। আমাদের এসবে মাথাব্যথা নেই। জোটের কিছু শরিক দল নিয়ে এমনিতেও আমাদের অনীহা ছিল। নানা কারণে বিএনপি ছাড়তে পারেনি। তবে বিএনপি বারবার তাদের এটাই বুঝিয়েছে যে, জোটে তাদের গুরুত্ব নেই।’

প্রায় দুই যুগ পর জোট নিয়ে আগ্রহ হারিয়েছে বিএনপি। পঞ্চম দল হিসেবে খেলাফত মজলিস জোট ছেড়ে দেয়ার পর এমন প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে বিএনপির পক্ষ থেকে।

এর আগে বিএনপির যে শরিকরাই জোট ছেড়েছেন, সেই দলের কোনো না কোনো নেতা তাৎক্ষণিক নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে একই নামে দল করে ২০-দলীয় জোটে থেকে গেছেন। কিন্তু এবার খেলাফত মজলিস চলে যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত কেউ এমন ঘোষণা দেননি। ফলে কার্যত এখন ১৯-দলীয় জোটে পরিণত হয়েছে।

দলটি জোট ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ২০১৯ সালেই নিয়ে রেখেছিল। সেই সিদ্ধান্ত গত কয়েক দিন ধরেই গণমাধ্যমে আসছে যে, শুক্রবার মজলিসে শুরার বৈঠকে জোট ছাড়ার ঘোষণা আসবে।

কিন্তু বিএনপির কোনো পক্ষ থেকে দলটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।

এ বিষয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের একজন নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিএনপি তো এমনিতেও এই শরিক দলগুলোকে নিয়ে আর পথ চলতে চায় না। তবে সব কিছুর একটা বাইন্ডিংস আছে। তাই চুপ করে থাকা। তবে এরই মধ্যে আমরা বুঝলাম, আমাদের ভাবনা সঠিক ছিল। তারা চলে যাচ্ছেন যাক।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের বক্তব্যেও দলের এই নীতির ইঙ্গিত পাওয়া গেল। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেখুন, জোট তো সমন্বয়। জোরজবরদস্তি না। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, এটা তাদের দলের সিদ্ধান্ত। লাভ-লোকসানের একটা ব্যাপার আছে। সেটা তো আমাদের মাথায় রাখতে হবে। বিএনপি জানল তাদের সিদ্ধান্ত। বিএনপি তো নিজেই একটি বড় দল। এ রকম ঘটনায় তেমন প্রতিক্রিয়াও বিএনপির দেয়ার নেই। এটা বড় কোনো ঘটনা না।’

বিএনপির এই জোট নিয়ে যে আগ্রহ নেই, সেটি গত দুই বছরের তৎপরতাতেই স্পষ্ট। এই সময়ে জোটের বৈঠক হয়নি, শরিকরা বারবার এ নিয়ে অভিযোগ করে এলেও গা করেনি বিএনপি।

২০ দলীয় জোট ত্যাগের সিদ্ধান্ত জানিয়ে খেলাফত মজলিসের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসেন। পাশে দলের আমির মোহাম্মদ ইসহাক। ছবি: নিউজবাংলা

এই জোটে ২০টি দল থাকলেও বিএনপির পর জামায়াতেরই শুধু সারা দেশে কিছুটা শক্তি আছে। বিএনপি জোটের মধ্যে এই দলটিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কিন্তু এবার সেই গুরুত্বও কমতে শুরু করেছে। এই দলটির সঙ্গেও কার্যত যোগাযোগ করছে না বিএনপি।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর আগে জোটবদ্ধ রাজনীতি শুরু করা বিএনপির নেতা-কর্মীরা গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে শরিকদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের ভোটে বিএনপির ভরাডুবির পেছনে যে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত সংশ্রব দায়ী, সেটি দলের পক্ষ থেকে গঠন করা ১০টি কমিটির ৯টি প্রতিবেদন দিয়েছিল।

এরপর ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলনের সময় যে নজিরবিহীন সহিংসতা হয়েছিল, তার দায়ও জামায়াতকেই দিয়ে থাকে বিএনপি।

জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দেয়ার বিষয়ে চলতি বছরের শুরুতে বিএনপি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছিয়ে এসেছে। তবে সম্প্রতি দলটি আবারও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।

বিএনপির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তারা জোট না রেখে এককভাবে চলবে। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মতের অপেক্ষায় তারা।

দশম সংসদ নির্বাচন জোটের শরিকদের নিয়ে বর্জন করা বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসে আরও নতুন জোট নিয়ে। একই সঙ্গে আগের ২০-দলীয় জোটের পাশাপাশি নতুন করে গঠন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এই জোট ছিল বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য বিব্রতকর। ছোট ছোট দলের নেতারা বিএনপির নেতাদের ছাড়িয়ে ঐক্যফ্রন্টে সামনে চলে আসেন। কখনও কোনো আসনে জিততে না পারা গণফোরামের সভাপতি কামাল হোসেন হয়ে যান জোটের শীর্ষ নেতা।

আওয়ামী লীগ ছেড়ে নাগরিক ঐক্য গঠন করা মাহমুদুর রহমান মান্না, বিগত যৌবনা রাজনীতিক আ স ম আবদুর রব, ভোটের রাজনীতিতে কখনও অংশ না নেয়া জাফরুল্লাহ চৌধুরীও সে সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চেয়ে জোটে কার্যত বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন।

২০ দলের পাশাপাশি এই জোট নিয়ে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা যে নাখোশ ছিলেন, সেটি স্পষ্ট হয়েছে দলের সাম্প্রতিক বৈঠকে।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীকে জোট থেকে বের করে দিতে যেমন জোর দাবি তুলেছেন বিএনপির নেতারা, তেমনি ঐক্যফ্রন্টকে আর এগিয়ে না নেয়ার কথা বলেছেন তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এরা তো (জোটের শরিক) সুযোগসন্ধানী। নিজেদের তেমন অস্তিত্ব নেই। বটগাছ খোঁজে। আবার স্বার্থ উদ্ধার না হওয়াতে ছেড়ে দেয়। আমাদের এসবে মাথাব্যথা নেই। জোটের কিছু শরিক দল নিয়ে এমনিতেও আমাদের অনীহা ছিল। নানা কারণে বিএনপি ছাড়তে পারেনি। তবে বিএনপি বারবার তাদের এটাই বুঝিয়েছে যে, জোটে তাদের গুরুত্ব নেই।’

কল্যাণ পার্টির জোট ছাড়ার হুমকিকে পাত্তাই দেয়নি বিএনপি

গত ১০ সেপ্টেম্বর দলটির প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রধান শরিক বিএনপি যদি জোটকে সক্রিয় করতে চায়, যদি অতীতের ভুলগুলো আত্মসমালোচনা করে পরিবেশ ভিন্ন করতে পারে, তাহলে আমরা একসঙ্গে পথ চলব। না হলে যদি প্রয়োজন পরে আমরা নিশ্চিতভাবে গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের আন্দোলনে আলাদা ভূমিকা রাখব।’

এই বক্তব্যের পর তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। ইবরাহিমের সঙ্গে ‘দূরত্ব’ ঘোচাতে বিএনপির দৃশ্যত কোনো উদ্যোগ নেই।

বরং কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান এই বক্তব্য রাখার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ রকম ছোটোখাটো দল আসবে-যাবে, এগুলোকে এমন পাত্তা দেয়ার কিছু নেই।’

ইবরাহিম ছাড়াও অলি আহমদের এলডিপিও জোটে থাকতে চায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা আছে প্রায় দুই বছর ধরেই।

২০১৯ সালের জুনের শেষে অলি আহমদের নেতৃত্বে ২০ দলের কয়েকটি শরিক দল মিলে গঠন করা হয় ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামের একটি মোর্চা। এতে কল্যাণ পার্টি ছাড়াও ২০ দলের আরেক দল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপাও ছিল।

এই মঞ্চ গঠন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এসব দলের নেতাদের দূরত্বের সংবাদ আসে গণমাধ্যমে। তবে পরে বিষয়টি আর খুব একটা আগায়নি।

বিএনপির একাধিক নেতা নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, অলি আহমদের সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক না রাখতে নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুযায়ীই এখন পর্যন্ত চলছে সবাই।

এর আগে যেসব দল জোট ছেড়েছে

এর আগে বিএনপির জোট ছেড়ে দেয় চারটি দল।

২০১৬ সালের ৭ জুন ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট।

২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর ২০-দলীয় জোট ছেড়ে যায় লেবার পার্টি।

২০১৯ সালের ৬ মে ২০ দল ছাড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ।

সবশেষ গত ১৪ জুলাই জোট ছেড়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম।

বিএনপির শরিকরা জোট ছেড়ে গেলেও তাতে জোটে দলের সংখ্যায় কোনো হেরফের হয়নি। কারণ যখনই কোনো দল জোট ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে, তখনই দলের অন্য একজন নেতার নেতৃত্বে একাংশ একই নামে আলাদা দলের ঘোষণা দিয়ে ২০ দলে থেকে গেছে।

এ বিভাগের আরো খবর