মুখ দিয়ে কথা বলতে পারেন না। হাত দিয়ে লিখতেও পারেন না। চোখের ইশারায় মনের ভাব প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু পড়াশোনায় বিন্দুমাত্র পিছিয়ে নেই। মনের ইচ্ছাশক্তিতে এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়ে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন তার।
সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। পরীক্ষার হলে এমন দৃশ্য দেখে পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন অন্য পরীক্ষার্থীরাও। ফেসবুকে প্রশংসায় ভাসছেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মেয়েটি।
শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কৃষি অনুষদের কীটতত্ত্ব বিভাগের ল্যাবরেটরির কক্ষের মেঝেতে বসে মেয়েটিকে পরীক্ষা দিতে দেখা গেছে। এ কেন্দ্র পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩৫ জন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা এ কে এম জাকির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, মেয়েটিকে তার মা নিয়ে এসেছিলেন। মায়ের কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছে, হয়তো ময়মনসিংহের আশপাশে অথবা কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘হলের ফ্লোরে মেয়েটিকে বসতে দেয়া হয়। কারণ সে বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিতে পারে না। হলের পাশেই একটি চেয়ারে তার মাকেও বসতে দেয়া হয়। কারণ ইশারা ছাড়া কী বলতে চাচ্ছে তাও বোঝা যায় না।’
এই পরীক্ষা হলের দায়িত্বে থাকা মাসুম আহমেদ জানান, মেয়েটি প্রথম দিকে ‘পা’ দিয়ে লেখার সময় উত্তর শিটটা ভুলে নষ্ট হয়ে যায়। এ সময় সে ডাক-চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু মুখের ভাষা বোঝা না যাওয়ায় তার মাকে ডেকে আনা হয়। পরে তার মা বিষয়টি বুঝতে পারেন। তখন আরেকটি উত্তর শিট তাকে দেয়া হয়। এরপর থেকে সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত লিখতে থাকে।
একই হলে ছিলেন আবুল মঞ্জুর খান। তিনি বলেন, মেয়ে ও তার মাকে দেখে মনে হয়েছে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তবে তাকে মেধাবী মনে হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহাম্মদ মহির উদ্দীন বলেন, মেয়েটিকে দেখে অন্যরা শিক্ষা নিতে পারে। পড়াশোনায় আগ্রহ থাকলে যেকোনো বাধার মুখেও পড়াশোনা করা যায়। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পা দিয়ে লিখে যাওয়া মেয়েটি।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লুৎফুল হাসান বলেন, ‘আমি কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখেছি সব কেন্দ্রে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে। শুক্রবার ‘ক’ ও শনিবার ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা দিতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাবির আরও ৩টি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেগুলোও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
এই বিভাগের ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, জামালপুর, শেরপুর এবং ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কেন্দ্রে অংশ নেন। ধারাবাহিকভাবে বাকৃবির কেন্দ্রগুলোতে চলতি মাসের ৯, ২২ ও ২৩ তারিখে গ, ঘ ও চ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনে ২২ হাজার ৫৬৬ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন।