নাটোরের লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া ইউনিয়ন মূলত কৃষিপ্রধান এলাকা। তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রত্যন্ত এলাকাটি হয়ে উঠেছে ডিজিটাল প্রতারণার অন্যতম স্থান।
অনলাইন যোগাযোগের অ্যাপ ইমো ব্যবহারকারী প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা করে এ ইউনিয়নের অনেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। ইউনিয়নের নানা বয়সের অনেকেই জড়িয়ে পড়েছে এ প্রতারণার সঙ্গে।
প্রতারকের সংখ্যা এত বেশি যে স্থানীয় অনেকে ইউনিয়নটিকে বলেন, ইমো প্রতারকদের ‘সদর দপ্তর’।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত এ ইউনিয়নের প্রায় ২০০ জনের তালিকা তৈরি করেছে বাহিনীটি। অভিযানে তাদের মধ্যে ৮০ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামের বাসিন্দা প্রায় ২৮ হাজার। এই এলাকার একটি চক্র প্রথম ইমো ব্যবহার করে প্রতারণা শুরু করেন। তারা তখন মোবাইলে নারী কণ্ঠে কথা বলে প্রবাসীদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। পরে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন অর্থ।
এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হ্যাকিং। ইমো হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত দুজনের সঙ্গে কথা হয়েছে নিউজবাংলার।
পুলিশের তৈরি করা ইমো হ্যাকারদের তালিকা
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের একজন জানান, নারী কণ্ঠে সম্পর্ক গড়ে তোলার পর প্রবাসীদের কাছে নানা কাজের জন্য টাকা চাইতেন তারা। কেউ কেউ সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। এভাবেই চলত তাদের প্রতারণা বাণিজ্য।
তবে এখন অনেকে সেই প্রতারণা বুঝে ফেলায় তারা ইমো হ্যাকিংয়ের আশ্রয় নেন।
এ বিষয়ে অন্য হ্যাকার জানান, চক্রের সদস্যরা প্রথমে ইমো ব্যবহারকারী প্রবাসীদের নম্বর সংগ্রহ করেন। পরে তারা কৌশলে টার্গেট করা প্রবাসীর ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নেন। পাসওয়ার্ড পাওয়ার পর তারা সেই আইডি থেকে পাঠানো কথোপকথন ও ম্যাসেজ পর্যবেক্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে হ্যাক করা আইডি ব্যবহার করে স্বজনদের দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার কথা বলে প্রবাসীদের বিকাশে বড় অংকের টাকা পাঠাতে বলেন। এই টাকার পরিমাণ ২০ হাজার থেকে দুই আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দৃশ্যমান কোনো কাজ না করলেও প্রত্যন্ত এলাকায় এসব হ্যাকাররা গড়েছেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি। তবে প্রভাব থাকায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে চায় না।
স্থানীয় কয়েকজন পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নিজেদের ইউনিয়ন ইমো হ্যাকিংয়ের ‘সদর দপ্তর’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়ায় তারা বিব্রত।
প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত একজনের মা জানান, তার ছেলে মোবাইলে কাজ করে টাকা আয় করেছে। তবে এখন আর সে এসব কাজ করে না।
গ্রেপ্তার হওয়া একজনের স্ত্রীর দাবি, তার স্বামী বিকাশের ব্যবসা করত। পরে পুলিশ এসে তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা জানান, ইমোর মাধ্যমে প্রতারণা বন্ধে তারা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ইউনিয়নটির প্রায় ২০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার কয়েকজন
ইমো ব্যবহারে প্রবাসীদের আরও সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
র্যাব-০৫-এর অধিনায়ক জিয়াউর রহমান তালুকদার জানান, চার-পাঁচ জনের একেকটি দল তৈরি করে এ প্রতারণা করা হয়। লাভজনক হওয়ায় বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের গণ্ডি পেরিয়ে এখন পাশের রাজশাহী জেলার চারঘাট ও বাঘা এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে এই চক্রের সদস্যরা। তবে প্রতিনিয়ত অভিযানে প্রতারণায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, দুর্বল নেটওয়ার্কেও ব্যবহার করা যায় বলে প্রবাসীরা বাংলাদেশে থাকা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ইমো অ্যাপ ব্যবহার করেন। সেই সুযোগটিই নিয়েছে এই প্রতারক চক্র।