বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাসাবাড়িতে অজগর ঢুকে যাচ্ছে সিলেটে

  •    
  • ২ অক্টোবর, ২০২১ ১৮:১৩

বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আগে চা-বাগানগুলোর ভেতরে অনেক বনমোরগ ও কাঠবিড়ালি পাওয়া যেত। এগুলো ছিল অজগরের প্রিয় খাদ্য। কিন্তু এসব এখন কমে গেছে। এতে অজগর খাদ্যসংকটে পড়েছে। ফলে বন ও চা-বাগানের আশপাশের বাড়িতে যেগুলোতে হাঁস-মুরগি আছে, সেসব বাড়িতে অনেক সময় অজগর ঢুকে পড়ে।

ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রাবেয়া বেগমের বাসার সদস্যরা। সিলেট নগরের পাশে মেজরটিলা এলাকায় তাদের বাসা। হঠাৎ করেই এক ভাড়াটিয়ার চিৎকারে বেরিয়ে আসেন সবাই।

রাবেয়া বেগম বলেন, ‘বেরিয়ে এসে দেখতে পাই বারান্দায় একটি অজগর। সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠার চেষ্টা করছে। তখন আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে এটি মারতে উদ্যত হয়েছিল। আমি তাদের বাধা দিয়ে কৌশলে সাপটিকে বস্তায় ভরে ফেলি। পরে বন বিভাগকে খবর দিলে তারা এসে সাপটি নিয়ে যায়।’

এই প্রথম নয়, গত ছয় মাসে তার বাড়িতে তিনটি অজগর পাওয়া গেছে বলে জানান রাবেয়া। আগের দুটি অজগর স্থানীয়রা মেরে ফেলেছেন।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর একইভাবে সিলেটের শাহপরান এলাকার একটি বাড়ি থেকে ৩০ কেজি ওজনের একটি অজগর উদ্ধার করা হয়।

বাড়ির লোকজন ঘরের মধ্যে সাপটি দেখতে পেয়ে পুলিশের জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দেন। এরপর পুলিশ ও বন বিভাগ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাপটি উদ্ধার করে।

এর আগে গত ২১ মে সিলেটের উত্তর বালুচর এলাকার মিল্টু মালাকারের বাড়ির উঠান থেকে একটি অজগর উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর সাপটি স্থানীয় খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করে বন বিভাগ।

কেবল এই কয়েকটি নয়, সিলেটে প্রায়ই বিভিন্ন বাড়িঘর ও লোকালয় থেকে উদ্ধার করা হয় অজগর। সম্প্রতি যা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক সময় আবার স্থানীয়রা পিটিয়ে মেরেও ফেলেন অজগর।

রাবেয়া বেগম বলেন, ‘অজগর প্রায়ই এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে প্রবেশ করে হাঁস-মুরগি খেয়ে ফেলে। এতে মানুষজন অতিষ্ঠ। আমি নিজে দেশি মুরগির একটি খামার করেছি। এখন প্রায়ই আমার বাড়িতে অজগর ঢুকে পড়ে। তাই সব সময় ভয়ে থাকি।’

অজগর কেন লোকালয়ে

বনের ভেতরে খাবার কমে যাওয়া ও নির্বিচারে বন ধ্বংস করার ফলে অজগর লোকালয়ে ও বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদী সংগঠন ‌'ভূমিসন্তান বাংলাদেশ'-এর সমন্বয়ক আশরাফুল কবির।

শুক্রবার রাতে বাড়িতে অজগর উদ্ধারের খবর পেয়ে তিনিও ছুটে যান মেজরটিলায়। এরপর বন বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে মিলে সাপটি উদ্ধার করে টিলাগড় ইকোপার্কে অবমুক্ত করেন।

আশরাফুল বলেন, ‘বনের ভেতরে অজগরের খাবার কমে আসছে। অনেক ক্ষেত্রে বনই ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। ফলে খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসছে অজগর। যেসব বাড়িতে হাঁস-মুরগি আছে তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ছে।’

তিনি বলেন, বনের কাছাকাছি বাড়িগুলোতে অজগর বেশি আসছে। আগে এসব এলাকায় মূলত বনজঙ্গলই ছিল। এখন বন ধ্বংস করে আবাসন গড়ে উঠেছে। ফলে অজগরের বাসস্থান ও খাবারসংকট দেখা দিয়েছে।

গত ২৮ জুন সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে থেকে একটি অজগর উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেন সিলেটের উজ্জ্বল চক্রবর্তী।

উজ্জ্বল বলেন, এখন যেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সেটি কিছুদিন আগেও গভীর জঙ্গল ছিল। পশুপাখি-সাপের অভয়ারণ্য ছিল। এখন লোকারণ্য হয়ে গেছে। ফলে পশু-পাখি-সাপ আর দেখা যায় না। মাঝে মাঝে হঠাৎ দু-একটা পথ ভুলে বা খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে।

সিলেট অজগরের ‘হটস্পট’ বলে মনে করেন বন বিভাগের সিলেট বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলে প্রচুর অজগর রয়েছে। বিশেষত এখানকার চা-বাগানগুলো অজগরের নিরাপদ আশ্রয়।

সম্প্রতি অজগরের লোকালয়ে চলে আসার প্রবণতা বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন প্রায় সপ্তাহেই মানুষ ফোন করে অজগর পাওয়া কথা জানায়। পরে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’

বাড়িঘরে অজগরের ঢুকে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগে চা-বাগানগুলোর ভেতরে অনেক বনমোরগ ও কাঠবিড়ালি পাওয়া যেত। এগুলো ছিল অজগরের প্রিয় খাদ্য। কিন্তু এসব এখন কমে গেছে। ফলে অজগর খাদ্যসংকটে পড়েছে। ফলে বন ও চা-বাগানের আশপাশের বাড়িতে যেগুলোতে হাঁস-মুরগি আছে, সেসব বাড়িতে অনেক সময় অজগর ঢুকে পড়ে।’

অনেক অজগর বনের বাইরে এসে বাচ্চা প্রসব করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি লোকালয় থেকে আমরা বেশ কিছু বাচ্চা অজগর উদ্ধার করেছি। এতে বোঝা যায় মা অজগর আশপাশে কোথাও এসে প্রসব করেছে।’

তবে অজগর বাড়িতে ঢুকে পড়লেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই জানিয়ে তিনি বলেন, অজগর খুবই নিরীহ ও বিষহীন সাপ। নিজে আক্রান্ত না হলে সে কাউকে কামড় দেয় না। আবার কামড় দিলেও বিষক্রিয়া হওয়ার শঙ্কা নেই। কেবল ঘরের হাঁস-মুরগি লুকিয়ে রাখতে পারলে এই সাপ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।

তাই অজগর ঘরে প্রবেশ করলেও হত্যা না করে বন বিভাগকে খবর দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর