ভাড়াভিত্তিক পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর ফাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সায় দেয়ার পর এখন চুক্তির শর্তে সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টায় চার বিদ্যুৎ কোম্পানি।
প্রধানমন্ত্রী কোনো শর্ত ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর ফাইলে সই করলেও কোম্পানিগুলো এখন ন্যূনতম ভাড়া বা ক্যাপাসিটি চার্জ আদায় করতে চাইছে। এটা না হলে সরকার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কিনবে- এমন নিশ্চয়তা চাইছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হওয়ার পর ২৯ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা।
সেই বৈঠকে পিডিবি চেয়ারম্যান কোম্পানিগুলোর দাবি শুনে তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা।
পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি বা কেপিসিএলের দুটি, সামিট পাওয়ারের একটি ওরিয়ন গ্রুপের একটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। অন্যদিকে ডাচ্-বাংলা অ্যাসোসিয়েটের কেন্দ্রটি তালিকাভুক্ত নয়।
এসব কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে চলতি বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে। সে সময় সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। তবে পরে সেই অবস্থান থেকে সরে এসে যে আইনের অধীনে কেন্দ্রগুলো চলেছে এতদিন তার মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও পাঁচ বছর।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে পাঁচ কেন্দ্রের মেয়াদ বাড়ানোর ফাইলে সই করেছেন। তবে এ ক্ষেত্রে নীতিগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়। বিদ্যুৎ না কিনলে কেন্দ্র বসিয়ে আগে যে ভাড়া দেয়া হতো, সেটি আর না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যতটুকু বিদ্যুৎ কেনা হবে, ততটুকুর জন্য বিল দেয়া হবে, এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একে বলা হচ্ছে, ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০১০’ এর মেয়াদ আরও ৫ বছর বাড়ানোর বিলে সায় দেয়ার পাঁচ দিন পর ২১ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চার কোম্পানির কর্মকর্তাদের মধ্যে চুক্তির শর্ত নিয়ে বৈঠক হয়।
বৈঠকে কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এ ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ কেনার জন্য গ্যারান্টি চাওয়া হয়। তারা বলেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে এই বিষয়ে আগে থেকে সিদ্ধান্ত না হলে তাদের পক্ষে কোম্পানি চালানো কঠিন।
বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি মূল্য বা ট্যারিফ হার নিয়েও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকায় ট্যারিফ বেশি চেয়েছে কোম্পানিগুলো। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিভাগ তা বর্তমান হারের চেয়ে কমাতে চেয়েছে। তাদের যুক্তি, আগের যে ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছিল, তাতে কেন্দ্র স্থাপনসহ নানা ব্যয় হিসাব করা হয়েছিল। এখন নতুন করে কেন্দ্র স্থাপনের খরচ থাকবে না। ফলে কোম্পানির উৎপাদন খরচ কম থাকবে।
সেদিন সিদ্ধান্ত হয়, এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে আবার বৈঠক হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সচিব সাইফুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত আসতে গেলে একটি মিটিং যথেষ্ট নয়। আজকের বৈঠকে নানা দিক নিয়ে টেকনিক্যাল কমিটির আরেকটি বৈঠক হবে। সেখানে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হবে। এসব বিষয় ঠিক করতে একের অধিক, এমনকি ৩-৪ টি মিটিং হতে পারে।’
এর এক সপ্তাহ পর ২৯ সেপ্টেম্বর চার বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে দেখা করেন। পিডিবি প্রধান কোম্পানিগুলোর বক্তব্য শোনেন। তবে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
কোম্পানিগুলো কী চেয়েছে, এমন প্রশ্নে বেলায়েত হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা তো অনেক কিছু চায়। কিন্তু আমরা কোনো সিদ্ধান্ত জানাইনি। বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। নেগোশিয়েশন যদি সাকসেসফুল হয়, তাহলে শুনবেন।’
কেপিসিএল কোম্পানি সচিব মোজাম্মেল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জ না দেয়ার বিষয়ে সরকারের যে সিদ্ধান্ত সেটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছি।’
সামিট পাওয়ার এরই মধ্যে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আলোচনার বিষয় জানিয়েছে।
কেপিসিএল কবে জানাবে- জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব বলেন, ‘এসব কিছু মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের মধ্যে পড়ে। এ ধরনের কোনো তথ্য আসলে আমরা অবশ্যই তা বিনিয়োগকারীদের জানাব।’
অন্য এক প্রশ্নে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।’